কাজীদাকে নিয়ে কিছু লিখার সাহস করতে ভয় লাগে আমার।উনার মত একজন মানুষকে নিয়ে আমি এই নাদান কি লিখব তাই ভেবে পাইনা!কি উপমায় ভূষিত করলে উনার সঠিক মূল্যায়ন করা হবে আমার জানা নেই।উনাকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারিনি বলে মনে হয়।
প্রিয় তারেক অণু ভাই উনাকে নিয়ে অনেক লিখেছেন,কাজীদার ভিডিও ইন্টারভিও সহ পোস্ট আছে সচলায়তনে
গতকাল চলে গেল এই প্রিয় মানুষটির,প্রিয় কাজীদার ৭৮ তম জন্মদিন প্রায় নিরবেই বলা চলে।
মনে পরে কৈশোরে পা দেওয়ার সময় প্রথম হাতে পাই ভারতনাট্যম বইটি,প্রায় এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি বইটি হাতে পাওয়ার পর,কারণ পড়া শুরু করার পর বইটির ভিতর এমন ভাবে ডুকে পরেছিলাম যে মনে হচ্ছিল আমার চোখের সামনেই সব ঘটে চলছে।কাজীদার সহজ সাবলীল বর্ণনায় রানা পড়ার সময় মনে হত সবকিছু যেন চোখের সামনে হয়ে যাচ্ছে,শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কিছু খেয়ালই থাকত না!এর পর থেকেই কাজিদা হয়ে যান আমার স্বপ্নের নায়ক।তারপর কৈশোর গেল যৌবন আসল রানা চলছে তার আপন গতিতে।একসময় মনের ভিতর প্রচণ্ড ভাবে সেঁধিয়ে গেল যে স্পাই হব।বাংলাদেশ ইন্টেলিজেন্স এ কাজ করব জেনারেল রাহাত খান ওরফে কাজীদার আন্ডারে ।আশায় গুড়ে বালি ।
কত বকা খেয়েছি আম্মুর,কত পিটুনি খেয়েছি আপুর।উপরে পড়ার বই রেখে নিচে রানা নিয়ে বসে আছি।কেউ আশেপাশে না থাকলে রানা পড়া শুরু কেও আসলেই কুট্টুস করে বইটি পাট্যবই এর নিচে চালিয়ে দেওয়া।ধরা খাইসি,বকা খাইসি,পিটুনি খাইসি কিন্তু রানা ছাড়া হইনি একটিবার কলেজ জীবন শেষ হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত!
কতবার বুকশেলফ থেকে আমার সব সংগ্রহীত বই সরিয়ে ফেলা হয়েছে আবার সবার কাছে মাফ ছেয়ে প্রমিয করে বই নিয়া আসছি কিন্তু নিয়া আসার পর যেই কে সেই
রানাকে নিয়া দুইটা ঘটনা ভুলা সম্বভ না এই জীবনে!
১.শীতের সময় রাতে ঘোমানোর জন্য আপু বাতি নিবিয়ে চলে গেছে।জানত যে বাতি না নিবিয়ে গেলে আমি গল্পের বই পড়া শুরু করে দিব।তো কি কারণে ফিরে আসছে আবার আমার রুমে,এসে দেখে আমার কম্বলের নিছে থেকে হাল্কা আলো বের হচ্ছে।বলাই বাহুল্য যে আমার পুরা শরীর মাথা সহ ছিল কম্বলের নিছে তাই আমি সে যে আসছে দেখতে পাই নাই।কম্বল সরাইয়া দেখে আমি রানা পরছি।ওইদিন বিছানা থেকে উঠিয়ে আমাকে খালি শরীরে বাসার সামনে ওই ঠাণ্ডার মধ্যে পাক্কা ১ ঘণ্টা দাঁড় করাইয়া রাখছিল ।এর পর থেকে কম্বলের নিছে টর্চ জ্বালিয়ে পড়ার ইতি ঘটে।
২.উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকা কালীন ক্লাসে আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে পিছনের ব্রেঞ্ছ এ বসে তাড়িয়ে তাড়িয়ে রানা পড়ছি,কখন যে স্যার এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারিনাই!যখন বুজলাম তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে।স্যার খুবই আদর করে কাছে ডাকলেন।স্যারও খুব আদর করতেন আমাকে কিন্তু ওইদিন আর কাজ হয়নাই।পেটের মধ্যে এমন মুচড় দিয়েছিলেন হাত দিয়ে মনে হয়েছিল যে পুরা পৃথিবীটাই আমার মাথার উপর ছক্কর দিচ্ছে।যতক্ষণ পর্যন্ত না উনাকে কথা দিছি, ক্লাসে আর অন্য বই পড়ব না তার আগ পর্যন্ত পেটের মধ্যে মুচড় দিয়ে ধরেই ছিলেন।
কিন্তু কাজ হয়নাই পরের দিন থেকে আবার যেই কে সেই :p
বই বিনিময় নিয়া বন্ধুদের সাথে কত মারামারি তার ইয়াত্তা নেই।ছোটবেলায় ক্লাসের বাইরের পড়ার হাতেখড়ি হয়েছিল চাচা চৌধুরী আর মুগলী দিয়ে পরবর্তীতে তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানা ছিল সবসময়ের সঙ্গী।
এই কাজীদা আর সেবা প্রকাশনী আমাকে,আমার মত কত হাজার হাজার তরুণকে স্বপ্ন দেখিয়েছে,বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করেছে,বইমুখি করেছে,জীবনকে উপভোগ করা শিখিয়েছে,জীবনের মানে শিখিয়েছে,জীবনে দুঃসাহসিক অভিযানে অগ্রসর হওয়ার সাহস দিয়েছে।সেই অবদান অনস্বীকার্য।
সেবা প্রকাশনীর আগের সেই জৌলস আর হয়তবা নেই কিন্তু কাজীদা আমাদের মাঝে আছেন এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।
উনার জন্মদিন অনেক আড়ম্বর ভাবেই হওয়ার কথা ছিল কিন্তু চলে গেল প্রায় নিরবেই বলা চলে!
উনি সবসময়ই প্রচার বিমুখ ছিলেন।এখন হয়তবা অনেকটা অভিমানে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু আমরা কি তাকে তার প্রপ্য সম্মান টুকু দিয়েছি?উনার প্রাপ্য ভালবাসাটুকু উনাকে কি দেয়া হয়েছে? আজ পর্যন্ত উনাকে নিয়ে বিশেষ কিছু করা হয়েছে বলে শুনি নাই!
ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন কাজীদা,ভাল থাকুন নায়ক।যা দিয়েছেন তাই অনেক বেশি আমাদের জন্য কিন্তু তারপরেও বলছি আপনার কাছ থেকে আরও অনেক অনেক কিছু পাওয়ার,শিখার বাকি রয়ে গেছে আমাদের!
সবশেষে অণুদার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই “We Love You Man”