এক বিকেলে অনন্যা কাজ থেকে ফিরছে। ব্রাইটন থেকে লন্ডন আসবে। দৌড়ে বাসে উঠে অনবরত হাঁপাচ্ছিলো অনন্যা । সাথে ছিল ক্যাবিন সাইজ লাগেজ ভর্তি জরুরী কাগজপত্র। বাসে হাতে গুনে চার পাঁচ জনের মত হবে। জুতসই একটি সিট পেয়েই বসে পড়লো । সারাদিন কাগজ পত্র আর ফাইলিং করতে করতে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । জানলায় মাথাটি এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখ টেনে ধরলো। চোখ টেনেও খুলে রাখতে পারছিলো না। হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন ডাকছে ওকে । হকচকিয়ে তাকাতেই দেখে গাড়িটা থেমে আছে। ড্রাইভার বলল, বাস রেলস্টেশন পর্যন্ত যাবে না।
‘যাবে না মানে!’
অনন্যা বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলো।
ড্রাইভার জানালো , এই বাসের ডেস্টিনেশন পরিবর্তন হয়েছে। মানে এটাকে উল্টো পথে যেতে হবে।
ইংল্যন্ডে এরকম হয় মাঝে মাঝে, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ডেস্টিনেশন চেঞ্জ। পরবর্তী বাস আসতে আরও আধ ঘণ্টা সময় নেবে। অনন্যা সম্ভবত বাসে উঠেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো । কতক্ষণ যে ঘুমিয়ে ছিল কে জানে। সেজন্যই হয়তো এনাউন্সমেন্ট মিস করেছে। অগত্যাই ঐ অচেনা স্টেশনে নেমে পড়তে হলো।
সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। বাকীরা সবাই লোকাল ছিল সম্ভবত, তাই দেরি না করে যার যার মত চলে গেছে । একমাত্র অনন্যা বসে রইলো বাস স্টেশনে।
ভাবলো আধ ঘণ্টা অপেক্ষায় না থেকে উবার ডেকে স্টেশনে চলে যাবে। তাহলে সময় মত ট্রেনটা ধরতে পারবে । এদিকে কাজের চাপে ফোনটা চার্জ করতেও ভুলে গিয়েছিলো । ফোনের চার্জ প্রায় ফুরিয়ে যাবার জোগাড়।
দশ মিনিটের মধ্যে উবার চলে এলো । তখনও আকাশের এক কোণ লালচে হয়েছিলো । তবে এলাকাটিতে গাছপালা ভর্তি থাকায় জায়গায় জায়গায় বেশ আঁধার হয়ে ছিল। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলল , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে স্টেশনে পৌঁছে দিতে। আরও অনুরোধ করলো দ্রুত স্টেশনে পৌঁছাবার সহজ কোন পথ যেন বেঁছে নেয়। একটু তাড়াতাড়ি করলে হয়তো সময় মত ট্রেনটা ধরতে পারবে । এলাকাটি বেশ ছিমছাম এবং নির্জন। বাড়িগুলোও একেবারে বিচ্ছিন্ন।
দশ মিনিট যেতে না যেতেই ট্যাক্সিটা বাম্প করতে করতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো।
‘উফ, আরাম করে একটু বসলে পরেই একেকটা উটকো ঝামেলা এসে হাজির’। অনন্যা বিরক্ত হয়ে বলল । আজ এমন হচ্ছে কেন ওর সাথে বুঝতে পারছিলো না। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে? গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলো যে!’
ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে ইঞ্জিন চেক করলো, তারপর জানালো , রোড সাইড আসিস্টেন্স এর জন্য কল করতে হবে। গাড়ি ফিক্স হতে সময় লাগবে। সে আরও জানালো, স্টেশন এখান থেকে বেশী দূরে নয়। চাইলে হেঁটেও যাওয়া যাবে। দশ কি পনের মিনিটের হাঁটার পথ হবে । সে তার ফোনে ম্যাপ দেখিয়ে দিল অনন্যাকে। অনন্যা ভাবলো , আরেকটি ট্যাক্সি ডাকলেও সেই দশ মিনিটই লাগাবে। তাই কোন রকম দ্বিধা না করে পা বাড়ালো ষ্টেশনের দিকে।
অদ্ভুত নির্জন জায়গাটি। তবে ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথা অনুযায়ী এলাকাটি নিরাপদ। নির্বিঘ্নে হাঁটা চলা করেই মানুষজন স্টেশনে যাওয়া আসা করে।
বেশ উঁচু নিচু পথ পারি দিয়ে পাঁচ মিনিট পর ফোনে ম্যাপ দেখতে যাবে, এমন সময় ফোনটা অন হচ্ছে না। চার্জ একেবারেই নেই। ফোন ডেড হয়ে গেছে। চারিপাশে কোন মানুষজনও নেই। অনন্যা ভাবছে পেছনে একটু ব্যাক করলে হয়তো উবার ড্রাইভারকে পাওয়া যাবে। ওকে যদি সে কাগজে ম্যাপটি একে দেয় তবেই সেই ডায়রেকশন অনুযায়ী সহজেই স্টেশনে চলে যেতে পারবো।
ভাবতে না ভাবতেই চোখে পড়লো একটি গির্জা । হালকা আঁধারে গির্জার খোলা দরজা দিয়ে আলো বাইরে এসে পড়েছে। ভেতরে লালচে লাইট জ্বলছে। নিশ্চয়ই ভেতরে কেউ আছে। সে হয়তো সাহায্য করতে পারবে। ভেবেই রাস্তাটি ক্রস করে গির্জার দিকে এগিয়ে গেলো। সেই পুরাতন আমলের গথিক গির্জা। কেমন যেন একটি গা ছমছমে ভাব। দরজার মুখে দাঁড়াতেই একজন বিনয়ী চেহারার ফাদারকে দেখতে পেলো । খুব নম্রতার সাথে জানতে চাইলো, যদিও সারাদিন কাজ করে পথ হারিয়ে কথা বলার শক্তি আর ছিল না। তারপরও ফাদারকে লক্ষ্য করে নম্র সুরে বললাম,
‘ আমি এ এলাকায় নতুন। স্টেশনে যাবার পথ জানি না, ফোনেও চার্জ নেই। আমাকে কি একটু সাহায্য করতে পারবেন ষ্টেশনের পথ দেখিয়ে দিয়ে?’
ফাদারের চেহারার মধ্যে কী যেন এক মায়া, কী এক স্বর্গীয় স্নিগ্ধতায় আট সাট মায়াময় রূপ। হাসিমাখা মুখ করে গলিত শব্দে গোটা গোটা করে সে বলল,
‘বেশী দূরে নয়। তোমার যদি তাড়া থাকে এই গির্জার ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিক দিয়ে একটি সহজ পথ আছে। সেটা ধরে গেলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে যেতে পারবে’।
কী অমায়িক লোকটি! এক নিমিষেই তার ভক্ত হয়ে গেলো অনন্যা। তারপর এক গাল হাসি নিয়ে বলল,
‘খুব উপকার হয় যদি আমাকে পথটি দেখিয়ে দেন । আমি সময় মত ট্রেনটা ধরে ফেলতে পারবো’।
হাসি মুখে ফাদারও বলল,
‘চল তবে দেখিয়ে দেই’।
অনন্যার হাতে ক্যাবিন সাইজ লাগেজ দেখে জানতে চাইল ফাদার,
‘এর মধ্যে কি? বেশ ভারি মনে হচ্ছে’।
মৃদু হেসে উত্তর করলো অনন্যা ,
‘লন্ডন থেকে ব্রাইটন এসেছি আমার ক্লায়েন্টের ডিভোর্সের কাগজ পত্র ঠিক করতে আমার সুপারভাইজারের কাছে। সে বেশ কিছু দিন যাবত অসুস্থতার জন্য চেম্বারে যাচ্ছে না। আর এটি আমার প্রথম স্বাধীন কেইস। এই কেইসের সাফল্যই হয়তো পারবে আমার এই চেম্বারে কাজটি পার্মানেন্ট হতে’।
ফাদার অনন্যার দিকে তাকিয়ে ম্লান মুখ করে বড় একটি গরম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘তুমি তাহলে ঘর ভাঙ্গার কাজ কর?’
অনন্যা ফাদারের ম্লান মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আসলে, কখনো কখনো কিছু সম্পর্ক জোরা লাগাবার আর কোন উপায় থাকে না। তখন আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। কত মানুষের জীবন একটি সম্পর্ক নামের অসম্পর্কের ফাঁদে আটকে আছে, যেটা অস্বাস্থ্যকর’।
বলতে বলতে গির্জার ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে বেরিয়ে এলো ওরা দুজন। কী চমৎকার চেম্বার সঙ্গীত হচ্ছে, চড়া এবং উঁচু স্কেইলে। গির্জার উঁচু উঁচু সিলিং, খোলা আর শূন্য বিল্ডিং এ এই সঙ্গীত প্রতিধ্বনিত হয়ে অনন্যার হৃদয় অজানা এক আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠছে। কেমন যেন একটি ঢেউ খেলে যাচ্ছিলো অনন্যার মনে। আর শরীর বেশ হালকা বোধ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এখনই উড়ে গিয়ে সিলিং এ আঁকা ঐ এঞ্জেলগুলোর সাথে আকাশে উড়ে যাবে অনন্যা । সিলিং এ ছবিগুলো কি অদ্ভুদ সুন্দর, আর চেম্বার সংগীতের মধুময় কম্পনে আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে । কি অদ্ভুদ এক অনুভূতি!একবার অনন্যার মনে হচ্ছিলো ভেতরে গিয়ে দেখে আসতে, কারা গাইছে এতো সুন্দর করে চেম্বার সংগীত। এমন সময়ই রাস্তাটি দেখিয়ে ফাদার ওকে বলল,
‘এই পথ ধরে সোজা চলে গেলে একটি লোহার গেইট পাবে, ওটা রাত আটটা পর্যন্ত খোলাই থাকে। ওখান দিয়ে বের হলেই স্টেশন’।
অনন্যা অবাক হয়ে রাস্তাটির দিকে দেখে রইল । ইতস্ত ভঙ্গিতে বলল,
‘আমি আ আ আসলে এদিক দিয়ে যেতে চাই না। অন্য কোন পথ কি আছে?’
ফাদার হাস্যমুখি হয়ে বলল,
‘তুমি ঐ ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোকে ভয় পাচ্ছ?’
‘না, মানে, আমি গ্রেভইয়ার্ড ভয় করি না। তবে এখন তো বেশ আঁধার নেমে এসেছে তাই গ্রেভের মধ্য দিয়ে যেতে চাই না’।
ফাদার বেশ বিরক্ত হয়েই বলল,
‘আসল কথা হচ্ছে তুমি ভয় পাচ্ছ। তোমার চোখ মুখ সে কথা বলে দিচ্ছে। ভয় পেলে এদিক দিয়ে না যাওয়াই ভালো। অন্য দিক দিয়ে তোমাকে ঘুরে যেতে হবে এবং সেটাতে দশ মিনিটের মত সময় লাগবে’।
অনন্যা দশ মিনিটের ঘুরানো রাস্তায় যেতে রাজি তবুও স্বল্প সময়ের সহজ রাস্তাটি ধরতে মন টানছে না ওর।
তারপর অনন্যার কথা মত ফাদার ওকে কাগজে এঁকে স্টেশনের পথ দেখিয়ে দিল। গির্জার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো অনন্যা। গ্রেভইয়ার্ডের বাইরে দিয়ে রাস্তাটি সোজা গিয়ে ডানে মোর নিয়ে কিছু দূর হাঁটলেই স্টেশন পাওয়া যাবে। সেই মতই হাঁটছিলো । কিন্তু বুকটি কেমন যেন দুরু দুরু করছে। সেই গির্জার চেম্বার সঙ্গীত ওর হৃদপিণ্ডে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো সজোরে । পুরোপুরি আঁধার হয়ে গেছে চারিদিক। অনন্যা কবরস্থানের বাউন্ডারি ধরেই হাঁটছিলো । একটি বারের জন্যও কবরস্থানের দিকে তাকায়নি । সোজা মুখ করে হাঁটছে । হঠাৎ আকাশে মনে হলো কি যেন চমকে উঠলো! ও দাঁড়িয়ে পাশ ফিরে দেখে আকাশ ছোঁয়া লম্বা এক নারী ভিক্টোরিয়ান স্টাইলের কালো গাউন পরে হাতে অনেকগুলো মাইকের মত সাদা লিলি ফুল নিয়ে কবরস্থানের মাঝখান বরাবর দাঁড়িয়ে আছে এবং একটি করে ফুল ছুড়ে দিচ্ছে নীচের দিকে । তারপর নীচের দিকে তাকিয়ে দেখে কবর থেকে সব মানুষ গুলো উঠে কবরের হেডস্টোনে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ফুলগুলো ক্যাচ ধরে নিচ্ছে। দ্বিতীয়বার আর তাকাবার সাহস হয়নি । ঝরের বেগে ছুটে গেলো স্টেশনের দিকে। ওর মনে হচ্ছিলো ওর জীবন থেকে কিছুটা সময় ল্যাপ্স হয়ে গিয়েছে। কতটুকু সময় লেগেছে স্টেশনে আসতে কিছুই মনে নেই। এমনকি কোন রাস্তা ধরে কীভাবে এসেছে কিছুই মনে করতে পারছে না। তবে স্টেশনে ঠিকি এসে পৌঁছেছে । খুব হাঁপাচ্ছিলো দেখে কে একজন জিজ্ঞেস করলো যে ও ঠিক আছে কিনা।
বাসায় ফিরে অনন্যার শরীর খুব খারাপ লাগছিলো। সারা শরীর ভীষণ ব্যাথা করছিলো বলে দুটি পাঁচশ এমজির প্যারাসেটামল খেয়ে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে গেলো। খুব সকালে ঘুম ভাঙল যখন তখন শরীর ব্যাথায় বিছানা থেকে উঠতে পারছিলো না। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । কিন্তু আজ দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওর জন্য। তাই সব বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে চলে গেলো কোর্টে। ব্যারিস্টার লড়াও ছিল অনন্যার সাথে। লড়া অনন্যাকে দেখেই বুঝতে পারছিলো ওর শরীর মোটেই ভালো নেই। অনন্যার দিকে তাকিয়ে লড়া বলল,
‘তোমার কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো তো?’
অনন্যার মাথা ভারী হয়ে আছে। গায়ে এখনো জ্বর আছে।
এতো শরীর খারাপ নিয়েও এভাবে কোর্টে আসাতে লড়া বুঝতে পারলো ও বেশ দায়িত্বশীল একজন লইয়ার।
ব্যারিস্টার লড়াকে যখন অনন্যা ওর সেই গির্জা নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলল তখন সে জানালো যে স্টেশনের আশেপাশে কোন গির্জা অথবা গ্রেভইয়ার্ড নেই । ওরা ওখানকার লোকাল বহু বছর ধরে। তবে গ্রেভইয়ার্ড স্টেশন থেকে তিন মাইল দূরে আছে । লড়া কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না অতদূরে কি করে অনন্যা গেলো? আর কিভাবে পায় হেঁটে ষ্টেশনে পৌঁছলো?
লড়ার কথা শুনে অনন্যার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। তবে কি ও ভুল কিছু দেখেছে? মনে হলো লড়ার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে। নিশ্চয়ই আসে পাশে ওরকম গির্জাসহ গ্রেভইয়ার্ড আছে। ইংল্যন্ডে গির্জার অভাব নেই। হঠাৎ মনে পড়লো ফাদারের দেয়া সেই কাগজে আঁকা ম্যাপটির কথা। ব্যগ ঘেঁটে ম্যাপটি পেয়ে অনন্যা কিছুই মিলাতে পারছিলো না। ষ্টেশনের পাশে যদি গির্জা এবং গ্রেভইয়ার্ড না থাকে তাহলে ও কোথায় গিয়েছিলো? তবে কি ঘটে যাওয়া ব্যপারগুলো আসলেই ঘটেনি কোথাও! সমস্তটাই ওর মনে! তাহলে এই ম্যাপ কোথা থেকে এলো! এভাবে নানান ভাবনায় অনন্যার মাথা ঘুরছে।
সময়ের হিসাব মিলাতে গিয়ে মস্তিষ্কের সংযোগ ত্রুটি হয়ে সব গুলিয়ে যাচ্ছে। স্পষ্ট ঘটে যাওয়া ঘটনা, স্বচক্ষে দেখা জলজ্যন্ত ফাদারের সাথে কথোপকথন এবং সেই চেম্বার সঙ্গীতের সুরেলা আর আর্তনাদি স্পন্দন এখনো অনন্যার হৃদপিণ্ডে আঘাত হেনে ওকে মনে করিয়ে দেয় বিভীষিকাময় ঘটনাটি। সেই সময়, সেই জায়গা ওর চোখে ভাসছে, কিছুতেই ভুলতে পারছে না । অথচ লড়া বলছে সেরকম কোন জায়গাই নেই ওখানে। এটাও কি সম্ভব! লড়ার কথা মত গুগোল ম্যাপ দেখে অনন্যা নিশ্চিত হলো যে আসলেই ওখানে কোন গ্রেভইয়ার্ড নেই।
অফিস থেকে ছুটি নিলো অনন্যা এক সপ্তাহের। শরীর মন কিছুই ভালো যাচ্ছে না। ও ঠিক করলো তিন মাইল দূরের সেই গির্জাসহ গ্রেভিয়ার্ড ও দেখতে যাবে। লড়ার সাথে যোগাযোগ করে ওকে নিয়েই সেখানে গেলো ।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না অনন্যা । অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল । দিনের আলোতে স্পষ্ট দেখছিলো ও আসলে এখানেই এসেছিলো । অনন্যা চোখ স্থির হয়েছিলো। লড়াকে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমরা ঘোরের মধ্যে নেই তো? আমি তো এই জায়গাটিতেই এসেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না, এতো দূরে কি করে এসেছিলাম? এ জায়গা তো সম্পূর্ণই উল্টো দিকে স্টেশন থেকে’।
অনন্যার অস্থিরতা দেখে লড়া ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে এটা অনন্যার হেলুসিনেশন ছিল। কারণ এখান থেকে কখনোই পায়ে হেঁটে ষ্টেশন এতো অল্প সময়ের মধ্যে যাওয়া সম্ভব নয়। অনন্যা গির্জার ভেতরটা দেখবে বলে এগিয়ে গেলো । লড়াও ওর সঙ্গে সঙ্গেই গেলো। অনন্যা অবাক বিস্ময়ে বলল,
‘আশ্চর্য, এরকমই একটা গির্জায় আমি এসেছিলাম সেদিন’।
কিন্তু এই গির্জা বহু বছর ধরে পরিত্যাক্ত। এখানে বহু বছর ধরে প্রার্থনাও হয় না। কোন মেইন্টেনেন্স নেই। লড়া তখন অনন্যাকে প্রায় জোড় করেই ওখান থেকে নিয়ে আসলো। আর বলল,
‘অনন্যা , বুঝতে পেরেছি যে তুমি এখানে এসেছ বলে তোমার মনে হচ্ছে। হয়তো এসেছ, হয়তো আসনি। তুমি এমনই একটি ভ্রান্ত সময়ের ফাঁদে পড়েছ যার সঠিক ব্যাখ্যা আমার বা তোমার কাছে নেই। তোমার উচিত ভালো দেখে একজন সাইকোলজিস্টের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া। সে তোমাকে বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দিয়ে তোমাকে এই অশান্ত অবস্থার একটি সমাধান করে দিতে পারবে’।
অনন্যা ভাবছে লড়া হয়তো ঠিকি বলেছে। ওর হয়তো এরকম কোন থেরাপি নেয়াটা খুব জরুরি। কিন্তু স্পষ্ট দেখা একজন ফাদার, চেম্বার সঙ্গীত আর কাগজে আঁকা ম্যাপের কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে! গ্রেভইয়ার্ডের সেই আকাশ ছোঁয়া নারী না হয় হেলুসিনেশন হতে পারে। কিন্তু ফাদারের গরম নিঃশ্বাস অনন্যার মুখে এসে পড়েছিল। এখনো ও সেটা অনুভব করতে পারে । কি ব্যাখ্যা আছে এর? কিছুই মাথায় আসছে না।
*** আমার এবারের বই মেলায় প্রকাশিত উপন্যাস " খোলা সম্পর্ক" থেকে একটি পর্ব এখানে দিলাম। উপন্যাসের এই চরিত্রটি আমার সব চেয়ে বেশী পছন্দের। আপনারা যদি কেউ আগ্রহী হন বইটি পড়বেন তবে চলে যেতে পারেন ঢাকা বইমেলায় পেন্সিলের স্টল ১০৫ এ অথবা বইটি অর্ডার করতে পারেন অনলাইন বুক শপে রকমারি , অথবা দূরবীন এ । এই অনলাইন বুকশপে সহজেই ঘরে বসে পেতে পারেন আমার উপন্যাস। আর রকমারিতে উপন্যাসের প্রথম দিকের কিছুটা অংশ পড়ে দেখার সুযোগও রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০০