somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট ভ্রমণ- পর্ব ১

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন কিছুর প্রতি অতৃপ্তি থেকে গেলে সে জিনিসটিই বারবার পিছু টানে। বলা ভালো, সে জিনিসটিই কাছে টানে, মোহমুগ্ধ করে। আমাদের সিলেট ভ্রমণটিও ছিল তেমন। ভ্রমণকথা লেখার আগে তাই এই প্রারাম্ভ্যবানী দিয়েই শুরু করলাম। অতৃপ্তিই আমাদের সিলেট ভ্রমণকে করে তুলেছে স্মরণীয়। টোনা টুনির (স্বামীস্ত্রী) এই ভ্রমণে প্রথম থেকেই খলচরিত্রে 'বৃষ্টি' নামের মেয়েটির আবির্ভাব! ছায়াসঙ্গির মতো এই বৃষ্টি আড়ালে আবডালে থেকে আমাদের পরিকল্পনাগুলো শুনত। আর ডেইলি সোপের কুটনি চরিত্রগুলোর মতো ফন্দি আটত। আমরাও দমে যাবার পাত্র ছিলাম না। যতটুকু যৌবন, সামর্থ্যের ইচ্ছাবিন্দু ছিল তা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছি। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগানোর পরিকলপনা নিয়ে এই সিলেট ভ্রমণের ছক কষা। টোনাটুনির সংসারে বিয়ের পর এটাই ছিল বড় রকমের হ্যাংআউট। তাই উত্তেজনার পরিমানটাও ছিল দ্বিগুন। আমার আবার নতুন নতুন বিষয় জানার বাতিক। তাই বেশকিছু দিন চললো সিলেট নিয়ে গবেষণা। ঈদের ভিড়ভাট্টার কথা চিন্তা করে দুই সপ্তাহ আগেই বাসের টিকেট কেটে ফেলি। গ্রিনলাইন, স্ক্যানিয়া। হ্যা, এটা নিয়েও আমার উত্তেজনা ছিল। আমি আগাগোড়াই এক উত্তেজিত মানুষ...হাহাহা।পিছনের কারন হল আগে কখনো স্ক্যানিয়া গাড়িগুলোতে চড়িনি। ১৪ জুলাই রাত ১০ টায় যখন রাজারবাগের গ্রিনলাইন বাসস্ট্যান্ডে পৌছালাম তখনো কুটনি বৃষ্টি চোখ রাঙাচ্ছে! আমি বলি, বেহেঞ্জি তুমি জানালার ভিতর থেকেই দেখতে ভালো। কিন্তু তা আর শুনলে তো! গ্রিনলাইনের স্ট্যান্ডে গিয়ে মনে হল আমি হয়ত কোন এয়ারওয়েজের লাউঞ্জে অবস্থান করছি... হাহাহা। এরকম কিছুর অভিজ্ঞতা না থাকলে যা হয় আর কি। বাংলাদেশের বাসস্ট্যান্ডগুলোর দেখে আসা গতবাঁধা অবয়বও এরজন্য দায়ী। যাইহোক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল বড় এক হলরুমে টোনাটুনির গপ্প আর চিপস ভাজা খেতে খেতে ২ ঘণ্টা চলে গেলো। ভাগ্য ভালো যে আমাদের বাস ছাড়তে দেরি করেনি। চোখের সামনেই দেখছিলাম চট্টগ্রাম আর কক্সবাজার রোডের বাসগুলো ১/২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। রাত ১২.০৫ মিনিটে যখন বাস ছাড়ল তখন চোখের ভিতরে স্বপ্ন দেখার যে ৩২ ইঞ্চির এলইডি টিভিটা আছে তাতে বিজ্ঞাপনের মত ভেসে উঠছে নয়নাভিরাম চাবাগান, ঝর্ণা, টিলা, পাহাড় ইত্যকার স্থিরচিত্র!
স্ক্যানিয়ার আরামরাজ্যে রাতযাপন যখন শেষ তখন ভোরের আলোয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিফোটা নিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে মরমী সাধক ও পীরদের পুণ্যভূমিখ্যাত সিলেট। আমার কাছে পৃথিবীর প্রতিটি অপরিচিত জায়গা এক একটি বিস্ময়, এক একটি রোমাঞ্চ। ছোটবেলায় যদিওবা সিলেট ভূমিতে পা ফেলার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু তখন এখনকার মতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষনাত্বক এই চোখযুগল ছিল না। ছিল না অনুভুতি দিয়ে অনুভব করার বয়স। গাড়ি থেকে নেমে সিএনজি যোগে সরাসরি হোটেল। সিলেটের হোটেলগুলো নিয়েও বেশ কয়েকদিন গবেষণা করেই এসেছিলাম। আগে থেকে ঠিক করা ছিল। ধোপাদিঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত ‘হোটেল অনুরাগ’ই ছিল আমাদের গন্তব্য। অনুরাগে অনুরাগ মিশিয়ে আগামী কয়েকটা দিন তাই অনুরাগেই আমাদের ঘরবাড়ি! ওদিকে বৃষ্টি নামের মেয়েটি পিছু ছাড়ছেই না। একদিক দিয়ে ভালোই হলো। ভ্রমণক্লান্তি কাটিয়ে দিলাম দুপুর পর্যন্ত ঘুম। পেটে ইঁদুর দৌড়ালে ঘুম বাবাজিরও কিছু করার থাকে না। তাই আমাদেরও ঘুম ভাঙল। সিলেটের আকাশে তখনো গুড়িগুড়ি গুড়িগুড়ি। থাক...... ঐ পাষাণীটার নাম আর নাইবা নিলাম! সিলেটে পরিচিত ছোট ভাই টিপুর সাথে আগে থেকেই কথাবার্তা ঠিক করা ছিল। এই কয়টা দিন আমাদের ভ্রমণসঙ্গী হওয়া আর সিলেট ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য উত্তেজনার উত্তাপটা টিপুরও কম ছিল না। আমাদের টোনাটুনির ঘুরাঘুরিতে টিপু তাই সঞ্চালক। সিলেটের আবহাওয়া, বাতাস, পথ- এসব কিছুর মতিগতি টিপুরই ভালো জানা থাকার কথা। টিপুকে ফোন দিতেই সে ওসমানী মেডিকেল সংলগ্ন ইস্কনের মন্দিরে চলে আসতে বললো। রোজার মাসে দিনের বেলা সব খাবারের হোটেল বন্ধ থাকে। বন্ধ মানে একদম বন্ধ! সিলেট এসে প্রথম বড় রকমের বিস্ময় ছিল এটাই। যার প্রভাব আগামী ৩/৪ দিন টেনে নিতে হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় দুপুরের খাবারটা কোথায় সাড়া যায় এই চিন্তায় পড়ে গেলাম। ত্রাণকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত ইস্কনের মন্দির। টিপু ওখানেই আসতে বললো। মন্দিরে খাবার দাবারের ব্যবস্থাসহ একটি ভোজনালয় তৈরি করা হয়েছে। এখানে সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত থাকে খাবারের ব্যবস্থা। বলে রাখা ভালো, এখানে আমিষের বালাই নেই। নিরামিষ ও শাকাহারি খাবারই মূলত পরিবেশন করা হয় এই ভোজনালয়ে। সাথে মিষ্টি ও মিষ্টান্নর ব্যবস্থা তো রয়েছেই। আগামী ৩/৪ দিনের জন্য সকাল ও দুপুরবেলা খাবারের একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলো ভেবে বেশ ভালো লাগছে। কোন নতুন জায়গায় গেলে যে জিনিসটি আমায় বেশি টানে তা হল খাবার। তারপর মানুষ আর প্রকৃতি। সন্ধ্যার পর অবশ্য সিলেটের নামকরা হোটেলগুলো খোলা থাকবে। তাই খাবার নিয়ে নিরীক্ষা করার সুযোগটা আশাকরি বাতিল হবে না। সিলেটের মানুষ আর প্রকৃতি নিয়ে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বলার চেষ্টা করবো। এখন আপাতত ইস্কনে দুপুরের ভোজন। বেশ ভালো খাবার। খাবার শেষে রসমালাইটা ...... থাক, জিভে জল আনার কী দরকার? উল্লেখ্য, ইস্কনের এই ভোজনালয়ে ভাতকে ‘অন্ন’ বলা হয়। যেমন- বলতে হয় যে এখানে ২ টা অন্ন দেন। ভুলেও ভাত বলতে যাবেন না! তাহলে সেখানের কর্মীরা কোন অপরিচিত শব্দ শোনার মতো অভিব্যক্তি নিয়ে আপনার দিকে তাকাবে! খাবার শেষে বেড়িয়ে পরা। শহরের ভিতরেই ঘোরার পরিকল্পনা। দে ছুট শাহজালালের মাজার।
বাঙালি মুসলমান আর আরব মুসলমানদের মধ্যে যে মৌলিক, আচরণগত ও স্বভাবজাত পার্থক্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করি তা মূলত ধর্মগ্রহণের প্রক্রিয়ার মাঝে নিহিত। উপমহাদেশ বা বিশেষকরে বঙ্গভুমে ইসলাম এসেছে পীর ও সুফিবাদী দরবেশদের হাত ধরে। যাদের স্বভাব ও প্রভাব ছিল আরব অপেক্ষা সহিষ্ণু। ধর্মবিস্তারের ক্ষেত্রেও তাই। অন্যদিকে আরবদেশের ইসলাম খালি চোখে দেখলে ঢাল তলোয়ার আর যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। স্বভাবতই এই অঞ্চলে ইসলামের প্রকাশ ও প্রভাব আরবদেশ অপেক্ষা ভিন্ন। পীর আউলিয়াদের পদচিহ্নে মুখরিত হয়েই একসময় ইসলামের প্রবেশ ঘটেছিল একসময়ের শিলাহাট, পরে শ্রীহট্ট থেকে আজকের এই সিলেটে। বাঙালি মুসলমানদের ধর্মদীক্ষায় এই পীর আউলিয়াদের ছিল এক বিশেষ ভূমিকা। সেই সিলেট নগরীতে এসে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার দেখে না যাওয়া যেন রস ছাড়া রসগোল্লা! খাদ্যরসিক বলে খাবারের রেফারেন্সই চলে আসে বারবার। তাই কিসের সাথে কিসের তুলনা করি ভেবে ভুল বুঝবেন না। ওদিকে পাষাণীর বিশ্রাম নেই। সম্বল ছিল একটি ছাতা। ওটাই ব্যবহার করছিলাম তিনজন মিলে। আমার সহধর্মিণী স্মিতার উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনা ছিল দেখার মতো। মাজারের ভিতর একটি জলাশয়ে রাখা হয়েছে বিশাল বিশাল সব গজার মাছ। উৎসুক স্মিতার বড় বড় চোখ বিশাল গজার মাছগুলোকে কৌতূহলী প্রশ্নে ব্যবচ্ছেদ করছিল। স্মিতার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছিলাম আমি আর টিপু। জালালি কবুতর আর বিশাল বড় আকারের কয়েকটা পাতিলও দেখা হয়ে গেলো। কবুতর, পাতিল, গজার মাছ, কুয়া ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিসের রয়েছে আলাদা আলাদা কাহিনী ও প্রেক্ষাপট। মজার এইসব কাহিনীগুলোর সত্যতা নিরুপন করার স্পর্ধা নেই আমার। এগুলো কালের কাছে ও কূলের কাছে থেকে যাক এক একেক জনের বিশ্বাস হয়ে। এই লেখাতেও তাই গল্পগুলো সম্পর্কে বলতে চাচ্ছি না।
মাজার ঘোরা শেষে ঠিক হল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টা দেখে আসবো। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের পরিবেশটা খুব সুন্দর। রয়েছে ছোটবড় বেশকিছু টিলা, সারিসারি গাছের সমাবেশ আর সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা উঁচুতে নির্মাণ করা শহীদ মিনার। সিএনজি যোগে আবার দে ছুট। স্কুলজীবনের বন্ধু পল্লব এই বিশ্ববিদ্যালয়েই লেকচারার হিসেবে যুক্ত আছে। তাই যাওয়ার আগে বন্ধুকে নক করলাম...... কাছেপিছে থাকলে চলে আয়... আড্ডা দেই। পল্লব সায় দিলো। ওদিকে পাষাণী(বৃষ্টি) সহায় হয়েছে অবশেষে। আর আমাদের নড়াচড়াতেও এসেছে বাড়তি জোশ। এইপ্রথম মনে হল সিলেট সবুজ গালিচা বিছিয়ে আমাদের বরণ করে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পেড়িয়ে ঢুকতেই লম্বা এক রানওয়ের মত পথ। মাঝখানে আর দুইপাশে সাজানো বৃক্ষরাজি। এতোসুন্দর সারিবদ্ধভাবে লাগানো গাছগুলোকে দেখলে মনে হবে যেন আলাদা ভাবে লাগানো হয়েছে। লম্বা রাস্তাটা অনেকদূর গিয়ে বাক খেয়েছে। ছবি তোলার জন্য যাকে বলা যায় দারুণ এক স্পট। আমাদের সামর্থ্যের মোবাইল ক্যামেরায় বেশ কয়েকটা ক্লিক পরে গেলো ইতিমধ্যেই। হাটতে হাটতে কথা বলা আর সাথে ঈদের আগেআগে ফাঁকা এই ক্যাম্পাসের নিরবতা উপভোগ করা। এককথায় দারুণ কাটছিল সময়টা। ওদিকে পল্লবও উপস্থিত। দুই বন্ধু মিলে হারিয়ে যাওয়া সময়ের স্মৃতিচারণ আর সুখ দুঃখের ভাগাভাগি। আমাদের ৫/৬ জনের একটা গ্যাং ছিল। ভালো ছাত্রের গ্যাং! হ্যাঁ, একসময় আমিও ভালো ছাত্রদের গ্যাং-এ ছিলাম। ভাবতে কেমন কেমন লাগে...হাহাহা। পল্লব সেই গ্যাং এরই একজন। পড়ালেখায় আগ্রহের ধারটা যে কয়জন ধরে রেখেছিল তারমধ্যে পল্লবও আছে। দুই বন্ধু মিলে ছোটবেলার খেলাধুলা, স্কুল, স্যারদের নিয়ে গল্পে গল্পে মেতে উঠেছি। ছোটবেলার পল্লবের সাথে বড়বেলার পল্লবের পার্থক্য শুধু উচ্চতায়। বয়সের সাথে সাথে উচ্চতা একটু বেড়েছি। সঙ্গে নিশ্চয় প্রজ্ঞা ও মেধা। কিন্তু আকার, আকৃতি, আচরনে সেই আগের পল্লব। আমি আর পল্লব এতই মজে গিয়েছিলাম যে স্মিতা আর টিপু দলছুট হতে বাধ্য হল। সিঁড়ি পেড়িয়ে অনেক উঁচুতে অবস্থিত শহীদ মিনারটি সত্যিই খুব সুন্দর। বৃষ্টিভেজা আর সবুজে সিক্ত বিকেলবেলা যেন মমতার ঢেকে রেখেছে চারপাশ। আমাদের আড্ডা চলছিল। অনেকক্ষণ পর আমার খেয়াল হল, রোজার মাস, নিশ্চয় পল্লব রোজা রেখেছে। আমাদের আড্ডার সমাপ্তি দিয়ে এবার তাই ফেরার পালা। সময় বিকেল ৫ টা। বেলা পেড়িয়ে যাওয়ার আগেই ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরাও বেড়িয়ে পড়লাম।
দিনের আলো কিছুটা ছিল বিধায় টিপুর পরামর্শ মতে সিলেটের বিখ্যাত এম.সি কলেজ দেখতে চলে আসলাম। একটি কলেজ যে এতো বড় জায়গা আর নয়নাভিরাম টিলাবেষ্টিত হতে পারে তা এম.সি কলেজে না আসলে জানতাম না। সিলেটের প্রখ্যাত জমিদার গিরিশচন্দ্র রায় তার প্রমাতামহ মুরারিচাঁদের নামানুসারে এই কলেজটি স্থাপন করেন ১৮৯২ সালে। এখানেও সবুজ আর সবুজ। আছে একটি বড় পুকুর, বেশ কয়েকটি টিলা, শহীদ মিনার, ছাত্রাবাস আর ঐতিহ্য। এম.সি কলেজ থেকে বেড়িয়ে আসার পর টিপু বললো আমাদের হোটেলের কাছেই অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশনটা দেখে যেতে। বলতেই হচ্ছে বেশ সাজানো গোছানো সিলেটের এই রামকৃষ্ণ মিশনটি। দুপুর থেকে ঘুরাঘুরি শেষে এখন বেশ ক্লান্তই লাগছে। টিপুকে বিদায় দিয়ে হোটেলে চলে আসলাম। আর ঠিক হল তিনজন মিলে সন্ধ্যার খানিক বাদে সিলেটের ক্বিন ব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ে বসে চটপটি ফুচকা খাবো। আর সিলেটের বিখ্যাত ‘পাঁচভাই হোটেলে হয়ে যাবে রাতের ভুরিভোজ।
আগের দিনের ভ্রমণক্লান্তি ছিল কিছুটা। তাই হোটেলে ঘণ্টা খানিক শুয়ে বসে স্মিতাকে নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম। এবার ঐতিহাসিক ক্বিন ব্রিজ দেখার পালা। সাথে আলী আমজাদের ঘড়ি। একসময়ের জমিদার আলী আমজাদ দিল্লীর একটি ঘড়ির আদলে নির্মাণ করেন বিশাল বড় আকারের এই স্থাপত্য নিদর্শনটি । মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঘড়িটি নিশ্চল। ঐতিহ্যের নিদর্শন স্বরূপ দাড়িয়ে আছে এই আমজাদের ঘড়ি। আর ক্বিন ব্রিজ নির্মাণ করেন ব্রিটিশ আমলের তৎকালীন নিযুক্ত আসামের গভর্নর মাইকেল কিন। রাতের আলোয় ব্রিজ কিংবা ঘড়ি কিছুই ভালো করে দেখার সুযোগ ছিল না। উপভোগ করার মতো ছিল সুরমা নদীর পাড়ে বসে চটপটি ফুচকা খাওয়া। সন্ধ্যার পর সিলেটে সময় কাটানোর জন্য এটিই বোধহয় একমাত্র জায়গা। ঢাকার লেকপাড় ও বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মতো গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করলাম এই সুরমা নদী ও ক্বিন ব্রিজ সংলগ্ন জায়গাটিকে। সুরমা নদীঘেঁষা ‘’আইশ্চার্য’’ এক জাহাজে করে ১/২ ঘণ্টার জন্য প্রমোদভ্রমণে বেড়িয়ে পড়ার সুযোগও রয়েছে। ‘আইশ্চার্য’ এ কারণে বললাম কারণ এরকম জিনিস আমি আগে কখনো দেখিনি। আপনাকে খরচ করা লাগতে পারে ৩০০-৫০০ টাকা। জাহাজের ভিতরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট! অনেকটা ঢাকার ফাস্টফুডের দোকানগুলোর মতে। ব্যতিক্রম হল এটি পানিতে ভাসমান। সার্ভিসটি শুনলাম নতুন চালু হয়েছে। আইশ্চার্য এই জিনিসটা দেখে বেশ মজাই পেলাম। সময় রাত ৯ টা বেজে ৩০ মিনিট। সিলেটের পাঁচভাই হোটেলের নাম এতো শুনেছি যে এখানে এসে খাওয়ার শখ অনেক আগেথেকেই ছিল। সিলেটে এসে তাই ঠিকই করে রেখেছিলাম পাঁচভাই-এ যাবো। শহরের মূলকেন্দ্র জিন্দাবাজারের এই হোটেলটিতে ঢুকেই এতোদিন শোনা কথার সত্যতা মিললো। মানুষ আর মানুষ। খাওয়া দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না ওয়েটাররা। যদিও হোটেলের সামগ্রিক পরিবেশ ঢাকার অনেকের কাছে একটু আনহাইজেনিক লাগতে পারে। খাবার টেবিলে বসতেই ১০ রকমের ভর্তা হাজির। ভাতের সাথে আমরা মুরগীরও অর্ডার দিলাম। সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর খাওয়াটা একটু ভালো হওয়া চাই। খুবই কম খরচে পেটপুরে বেশ ভালো রকমের খাওয়াই হল। সেই রকমের একটা খাওয়া শেষে টিপুর সাথে বসে আগামী দিনের পরিকল্পনা করলাম। পাষাণী বৃষ্টি বাগড়া দিলে চুল ছিঁড়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এই আশংকা আর ভালো কিছুর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনুরাগের বিছানায় এলিয়ে দিলাম গা। রাত ঝিম ঝিম। কিছুক্ষণ পরই মনে হল ঝুম শুরু হল। আবারো বৃষ্টি। চোখের পাতা বন্ধ করে নিদ্রা নিমগ্নে আর সিলেটে আমাদের প্রথম দিনের যবনিকাপাত।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×