পাসপোর্ট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস! দেশের বাইরে যেতে হলে পাসপোর্ট আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক! অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন ETS (TOEFL এবং GRE এর mother organization) আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ডকে reorganization দেয় না। তখন আপনার পাসপোর্ট প্রয়োজন। এছাড়া, অনেকেরই ভোটার আইডি কার্ড নেই। যেসব কাজ ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া হয় না, তারা পাসপোর্ট এর সাহায্যে কাজটি করতে পারেন। বাংলাদেশের মত একটি দেশে পাসপোর্ট করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল অনলাইনে আবেদন করা!
সামহোয়্যার সহ আরো অনেক ব্লগ প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে সহজে পাসপোর্ট করার বিষয়ে অনেক ব্লগ দেওয়া আছে। বেশিরভাগ ব্লগই ২০১২ সালে বা তার আশেপাশের সময়ে লিখা। এই অবস্থায় অনেকেই সেসব ব্লগ পড়ে আগারগাঁও গিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন! যেমন আজকে পড়েছিলাম আমি। আমি সামহোয়্যার এর ইকারুস এর ডানার [Link: Click This Link ] "অনলাইনে যেভাবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) করবেন- A to Z ! [একটি ঝামেলাবিহীন পাসপোর্টের আত্মকাহিনী বা আমি যেভাবে খুব সহজেই পাসপোর্ট পেলাম]] ] ” ব্লগটি ফলো করেছিলাম। সেখানে প্রায় সবই ঠিক আছে, কিন্তু আগারগাঁও যাওয়ার পরের process টি অনেকটাই বদলে গেছে। ব্লগটি ২০১২ তে লিখা হয়েছিল, তাই আমি উনার ব্লগটি আংশিক ফলো করে ২০১৪ সালে আমার আজকের দিনের, [[May 5th, 2014]] অভিজ্ঞতা থেকে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন প্রনালী এবং সহজে পাসপোর্টের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়টি তুলে ধরলামঃ
[[আমাদের দেশে শুধুমাত্র আগারগাঁও ব্রাঞ্চেই অনলাইনে পাসপোর্টের কাজ করা হয়। তাই ঢাকার বাসিন্দারা, যারা উত্তরা বা যাত্রাবাড়ি ব্রাঞ্চ থেকে পাসপোর্ট করাতে চান না, তারা অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।]]
আসুন একদম শুরু থেকে শুরু করি অনলাইনে পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করা এবং পরের ধাপের কাজগুলো নিয়ে।
◙ প্রথম ধাপ : ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া
আপনি সোনালী ব্যাংকের নিরধারিত শাখায় পাসপোর্ট আবেদনের ফি হিসাবে টাকা জমা দিতে পারবেন। যদি এক বসাতে ফর্ম ফিলাপ করতে চান, তাহলে টাকা আগে জমা দিতে হবে। নাহলে টাকা জমা দেওয়ার পর আবার ঝামেলা করে অনলাইনে লগ ইন করে ফর্ম কমপ্লিট করতে হবে। অনলাইন থেকে দেখে নিন কোন কোন শাখায় টাকা জমা নেওয়া হয়। পাসপোর্টের রেগুলার ফি ৩০০০/- টাকা ( ১ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে) আর ইমারজেন্সি ফি ৬০০০/- টাকা ( ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে)।
টিপস -
আপনার বাড়ির সামনে যেই শাখা, সেইখানে টাকা জমা দেওয়া ভাল। কেননা, অনেক সময় অন্য শাখায় টাকা জমা দিলে তা বাতিল হয়ে যায় এবং আপনার টাকা লস যাবে!
যেমন, উত্তরা শাখায় লেখাই আছে যে শুধুমাত্র উত্তরা এবং আসে পাশের এলেকার টাকা জমা দিতে হবে। অনেকসময় দায়িত্বরত কর্মকর্তা খেয়াল করতে পারেন না। তখন আপ্নারই ক্ষতি হতে পারে। আপনার সুবিধামত ব্রাঞ্চে টাকা জমা দিয়ে রিসিট বুঝে নিন ।
লাইনে দাঁড়ালে ব্যাংকের কাজ শুরুর আগেই ব্যাংকের লোকজন রিসিট দিয়ে যাবে। বা নিজেই টাকা দেয়ার রিসিট সংগ্রহ করে নিন । রিসিট পেলে ইংরেজি ব্লক লেটার স্পষ্টভাবে পূরণ করুন।
সাথে অবশ্যই কলম রাখুন।
( অনেকে বলেছেন আগারগাঁও ব্রাঞ্চ এ টাকা জমা নিত, এখন নেয় না। আমি তো আজকে দেখে আসলাম টাকা জমা নিচ্ছে! তার পরও আপনি নিজের বাড়ির পাশে দেওয়াই ভাল)
◙ দ্বিতীয় ধাপ - অনলাইনে ফর্ম পূরণ
এইবার অনলাইনে ফরম পূরণের জন্য প্রথমেই যান পাসপোর্ট অফিসের এই সাইটে - http://www.passport.gov.bd/ । নির্দেশনা ভালোভাবে দেখুন , সতর্কতার সাথে একাউন্ট করুন । আপনার নাম ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি ( যেমন নামের বানান, প্যারেন্টস এর নাম ) যেন শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের মতই হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
আপনার মেইল এড্রেস আর মোবাইল নাম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই রেগুলারটা দেবেন। টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নাম্বার সতর্কতার সাথে উল্লেখ করুন। সবশেষে, তৃতীয় পেজে আপনি যেদিন ছবি তোলা ও হাতের ছাপ দেয়ার জন্য বায়োমেট্রিক টেস্ট দিতে যেতে চান, সুবিধামত সেইদিনটা নির্বাচন করে সাবমিট করুন। অর্থাৎ আপনি নিজের পছন্দসই সময়েই যেতে পারছেন! এবার , সতর্কতার সাথে রিচেক করুন এবং দেখুন সব তথ্য ঠিক আছে কিনা।
সবশেষে সাবমিট করুন । সফলভাবে সাবমিশন শেষ হলে পূরণকৃত ফর্মের একটি পিডিএফ কপি আপনার মেইলে চলে আসবে ।
অনলাইনে একাউন্ট খোলার পরপরই আপনাকে ই-মেইলে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেবে । সেটা সংরক্ষণ করুন। এবং ছবি তোলার জন্য যেদিন সময় দেবেন সেদিনটা ফ্রি রাখবেন। বেশি সময় লাগবে না, তার পরও সময় লাগতেই পারে এই দিনে যদি মানুষ বেশী হয় ।
◙ তৃতীয় ধাপ – জমা দেয়ার আগে ফর্মের প্রিন্ট এবং সত্যায়ন
আপনার অনলাইনে পূরণকৃত ফর্মের যেই পিডিএফ কপিটা পেয়েছেন, সেটার ২ কপি কালার প্রিন্ট করে ফেলুন। ২ বা ৩ টি জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে, সেগুলো করে ফেলুন । আপনার রেগুলার সাইন, অর্থাৎ আপনি যেটা সর্বদা ব্যবহার করেন, সেটা দিন।
এবার নিজের দুইকপি ছবি , জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি এবং পাসপোর্ট ফর্ম নিয়ে পরিচিত কোন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিন। পরিচিত কাউকে দিয়ে সত্যায়ন করানো দরকার এই কারণে যে, ঐ কর্মকর্তার নাম , যোগাযোগ ও ফোন নাম্বার ফর্মে লিখতে হয়।
সত্যায়ন শেষে পুরো ফর্মটি রিচেক করুন।
আপনার সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফর্মের সাথে যুক্ত করুন। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটি স্ট্যাপ্লার করে নিন। আঠা লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখবেন যাতে বার কোডটি ঢেকে না যায়। এবং, আপনার ছবি প্রথমে আঠা দিয়ে লাগিয়ে ছবির উপর দিয়ে সিল ও সিগনেচার দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে।
আপনার ফর্ম জমা এখন দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
টিপস–
ফর্মের প্রিন্ট করার সময় এক কপি এক্সট্রা করতে পারেন। ২ কপি জমা দিতে হয়, তবে ৩ কপি প্রিন্ট করিয়ে রাখতে পারেন। ফর্মের ব্যাকআপ থাকা ভালো । যদি কোন পেজ নষ্ট হয়ে যায়, তবে শেষ সময়ে ব্যাকআপ কপির পেইজ দিয়ে দিতে পারবেন।
ছবি দুই কপি লাগলেও এক্সট্রা দুই কপি সত্যায়িত করিয়ে রাখা ভালো , পাসপোর্ট অফিসে চেয়ে বসে মাঝে মাঝে। একই কথা জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যাপারেও।
◙ চতুর্থ ধাপ – ছবি তোলা এবং অন্যান্য
আপনার নির্বাচন করা তারিখে সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান । অবশ্যই সাদা পোষাক পরবেন না , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন।
নিরধারিত দিন সকাল ৮:৩০-৯ টার দিকে চলে যান। দেরি করবেন না। সাথে অবশ্যই কলম রাখুন। আঠা, স্ট্যাপলার, এক্সট্রা ছবিও সাথে রাখুন। পাসপোর্ট অফিসে ঢুকেই সামনের লাইনে দাঁড়ান। সরাসরি মেইন গেইট যে লাইন্টি পাবেন, সেটা। সেখানে দায়িত্বরত সেনা সদস্য একটি সিল মেরে দিবে আপনার ফরমে।
এরপর আপনাকে তিন তলায় ৩০৪ নাম্বার রুমে, (অনলাইনে পাসপোর্টে জন্য আলাদা রুমে) যেয়ে ফর্ম দেখিয়ে আনতে হবে ও চেক করে সিল দেওয়াতে হবে। সিরিয়াল নেবেন। লাইন না থাকলে অল্প সময়ের কাজ । আপনার ফর্ম চেক করে কিছু প্রশ্ন করতে পারে। আপনার ঠিকানা, পেশা, স্বামীর পেশা- এই জাতীয় প্রশ্ন।
এবার ৩ তলার থেকে আসতে বলবে নিচ তলায় । সেখানে এসেই ১০২ নম্বর রুমে আরেকটি সিম দিবে ও আপনার সিরিয়াল নাম্বার লিখে দিবে। সেখান থেকে আবার যেতে হবে ৪ তালায়। সেখানেই আসল কাজ।
সেখানে আপনার ফর্মে আবার সিল দিয়ে একটি নাম্বার লিখে দিবে। পাশের ৪০২ নাম্বার রুমে আপনাকে যেতে বলবে। সেটা ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক টেস্টের রুম। একটি সেনা সদস্য রুমের সামনে থাকেন। তার কাছে ফর্ম জমা দিয়ে সিরিয়াল নিন ও অপেক্ষা করুন। আপনার সময় আসলে আপনাকে ডাকা হবে।
আপনার সময় আসলে আপনাকে ডাক দিবে। ভেতরে যান। ৩ জন ছবি তোলেন। সিরিয়াল মোতাবেক যেকোন ১ জনের কাছে যান। উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট অফিসে Canon EOS 1000D মডেলের অতি পুরোনো DSLR ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয়, যার পিকচার কোয়ালিটি অতি ফালতু টাইপের।
এবার আপনাকে পাসপোর্ট রিসিভের একটা রিসিট দেবে। সেটা যত্ন করে রাখুন । পুলিশ ভেরিফিকেশান সাপেক্ষে, রিসিট পাওয়ার একমাস বা ১৫ দিনের মধ্যেই আপনি পাসপোর্ট পাবেন ।
টিপস – ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন।
আর যারা সরকারী কর্মকর্তা বা শিশুসহ যাচ্ছেন , তাদের কিছু আলাদা কাগজ লাগবে । যেমন,
GO: Government order
NOC: NO Objection Certificate
PDS: Proof of retired Date
সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবীরা, তাদের স্ত্রী এবং ১৫ বছরের কম বয়সী সন্তানেরা এই ঘর পুরণ করবেন। সরকারী কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট নীল রঙের । NOC বা GO এর সুবিধা থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশান এর ঝামেলা নাই ।
◙ পঞ্চম ধাপ – পুলিশ ভেরিফিকেশান ও পাসপোর্ট রিসিভ ডেট ( টিপস সহ)
পুলিশ ভেরিফিকেশানই অনেকের কাছেই ঝামেলার মনে হয়। যদি আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয় , তবে দুই জায়গাতেই আপনার ভেরিফিকেশান হয়ে থাকে। পুলিশের S.B. (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) এই কাজটা করে থাকে।
এবং, ভেরিফিকেশন করার সময় পুলিশ বখশিশ হিসাবে টাকা ঘুষ চেয়ে বসে। খুবই ইরিটেটিং একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেটা ৫০০-১০০০ টাকা এর মত চাইতে পারে।
তবে আপনি স্ট্রিক্ট থাকলে এটা এড়ানো সম্ভব।
আমি ৫ তারিখ ছবি তুলেছি, ৯ তারিখ পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আমার বাসায় পুলিশ এসেছে।
তবে থাকেন তো বাংলাদেশে, ঘুষ দিয়ে দেওয়াই ভাল। কেননা অনেকের কাছেই শুনেছি ঘুষ না দেওয়ায় পাসপোর্ট পেতে অনেক দেরি হয়েছে, কেননা পুলিশ আপনার রিপোর্ট জমা দেয় নাই। আবার, অনেকের ব্যাপারে নেগেটিভ রেটিংও দিতে পারে। তাই, একটু বুঝে শুনে কাজ করবেন।
যাই হোক, ভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে। যেদিন এস এম এস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
◙ ষষ্ঠ ধাপ –পাসপোর্ট সংগ্রহ
এইখানে কাজ সহজ । পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। লাইনে দাঁড়ান। সাথে আপনার রিসিট আর কলম রাখুন । সকাল ৯ টার দিকে গেইট খুলবে। লাইন ধরে প্রবেশ করুন। রিসিট জমা দিন। অপেক্ষা করুন।
এবার আপনার নাম ডাকবে । সাইন করুন , বুঝে নিন আপনার পাসপোর্ট ।
এবার, হাতে পেয়েই সবার আগে চেক করুন আপনার ইনফোগুলো ঠিক এসেছে কিনা। নিজের এবং পিতামাতার নাম , ঠিকানা এবং অন্যান্যসব তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন। সব ঠিক থাকলে, খুশিতে একটা লাফ দিন!
এই হচ্ছে একটি ঝামেলাবিহীন পাসপোর্ট পাওয়ার পদ্ধতি।
এই পোস্টটি নিয়মিত আপডেট করা হবে। কারো কাছে নতুন তথ্য থাকলে কমেন্টে জানাবেন। যোগ করে দিব। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ২:৩৭