somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লবী কমরেড মণি সিংহ এবং মণিমেলা

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কমরেড মণি সিংহ ২৮ জুন ১৯০১ খ্রিঃ সুসং দূর্গাপুরে জন্মগ্রহন করেন।
তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী টংক আন্দোলনের মহানায়ক, মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামের কিংবদন্তী বিপ্লবী নেতা কমরেড মনি সিংহ । শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা।
আত্মত্যাগ, দৃঢ়তা, সততা, আদর্শ নিষ্ঠা ও আপোসহীন সংগ্রামের এক মূর্ত প্রতীক। শ্রমিক, কৃষক সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে লড়েছেন মনি সিংহ। লড়েছেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, সব রকম শোষণ, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে, 'সমাজতন্ত্র'- তার ভাষায় 'ইনসাফ' প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯১৪ সালে অনুশীলন দলে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে প্রায় এক যুগ নানা ভাবে যুক্ত থাকেন এ দলের সঙ্গে। ১৯২১ সালে মনি সিংহ মহাত্মা গান্ধীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শরিক হন। ১৯২৫ সালে তিনি বামপন্থি রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হন। সে সময় তিনি ময়মনসিংহ থেকে কলকাতায় যান। কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করার অভিযোগে ১৯৩০ সালে ৩০শে মে প্রথম বারের মত তিনি গ্রেফতার হন। নিজের আত্মীয়-স্বজন, জমিদার তন্ত্রের বিরুদ্ধে, টংক শোষণের বিরুদ্ধে লড়তে কুন্ঠিত হননি এই মহাননেতা। সাধারণ মানুষের পক্ষে আপামর কৃষকের স্বার্থে তিনি ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছেন। ব্রিটিশ শাসকের কোপানলে পড়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন। ১৯৩৮ সালে মনি সিংহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ জেলায় কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কৃষাণ সভার ঐতিহাসিক সম্মেলনের অন্যতম সংগঠক ও অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন কমরেড মনি সিংহ। পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতার ফলে সামন্তবাদ বিরোধী আন্দোলনে কৃষকেরা ব্যাপকহারে সম্পৃক্ত হয়। কৃষকদের সেই আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত হয়, তারপরে ১৯৪৮ সালে হয় নাচোলের বিদ্রোহ। পাকিস্তান আমলে উগ্র-সাম্প্রদায়িকতা, দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও প্রতিক্রিয়ার প্রচণ্ড নিপীড়ন উপেক্ষা করে মনি সিংহ সংগ্রামের কাফেলা এগিয়ে নিয়েছেন। ৫০ এর দশকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আমলের অনেকটা সময়ই তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়, এর মাঝেই কয়েকবার তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি যখন নিষিদ্ধ, সমাজতন্ত্র যখন নিষিদ্ধ, রবীন্দ্র সংগীত যখন নিষিদ্ধ শব্দ, ধর্মান্ধতা যখন চরমে, যখন হাজার হাজার প্রগতিশীল কর্মী ভিটামাটি ছেড়ে স্বজনদের নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যখন কমিউনিস্টদের তাড়া করা হচ্ছে, যখন গণতন্ত্র ও প্রগতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন, যখন অনেকেই হতাশাগ্রস্ত, হাল ছেড়ে দিয়েছেন তখন সিংহ পুরুষ মনি সিংহ তার বিপ্লবী সহকর্মীদের নিয়ে এই ভূ-খণ্ডে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, পার্টির পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন, আমাদের দেশের প্রথম সশস্ত্র গণ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও গণতন্ত্র ও ধর্মণিরপেক্ষতার বাণী প্রচার করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেখানে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে প্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য স্বাধীনতার পর যে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু হয়, তাতেও মণি সিংহ পালন করেছেন পথপ্রদর্শকের ভূমিকা। বঙ্গবন্ধু সবসময় মনিসিংহকে অত্যন্ত সমীহ করতেন, তাঁর রাজনৈতিক মতামত-মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিতেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে স্তম্ভিত করে দেয়া হয়। অগণতান্ত্রিক শাসকের অপ শাসকরা ধ্বংস করে সংবিধান, গনতন্ত্র, মানবতা, সংস্কৃতি, ইতিহাসসহ আমাদের মহত্তম অর্জন গুলো। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বর অক্টোবরে বগুড়া ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনা বিদ্রোহের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জিয়াউর রহমান কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেন। এ সময়ে গ্রেফতার করা হয় মনি সিংহকে।
কিংবদন্তীর এ মহানায়ক নেত্রকোণার দূর্গাপুরে ১৯৯০ খ্রিঃ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।


__________________________________________
প্রতি বছর সুসং নগরে এই বিপ্লবীকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজন করা হয় মণি মেলার। আগামীকাল ৩১ শে ডিসেম্বর-১৪ খ্রিঃ থেকে ৬ই জানুয়ারী-১৪ খ্রিঃ পর্যন্ত ৭ দিনব্যাপী মণিসিংহ মেলা শুরু হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে যোগ দেবেন কমরেড ও সাংবাদিকবৃন্দ।

_________________________________________
তথ্যসূত্র- নেত্রকোনার আলো
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২০
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩২

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×