একটা দেশে বিদ্যানন্দের ভুমিকা কেনো এত বেশি যে তাদের চ্যারিটি কাজের জন্য তাদেরকে একুশে পদক দেয়া হলো এই প্রশ্নটা কেউ করলোনা।
কেউ ভাবলোইনা যে এইটা বাংলাদেশ সরকারের খুব বাজেভাবে হেরে যাওয়া। বিদ্যানন্দের এই বেড়ে ওঠা খুব সহজে প্রমান করে দিচ্ছে যে দেশে এত এত গরীব যাদের জন্য গভার্মেন্ট আসলে কিছুই করতে পারেনি তাই বিদ্যানন্দের মত একটা ফাউন্ডেশান এসে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে গেল।
আমার মনে সবসময় একটাই প্রশ্ন যে কাপড় কিনে দেয়া, এক বেলা খাবার খাওয়ানোর মধ্যে কি এমন রোমান্টিকতার আছে যা হৈ চৈ করে ফেসবুকে প্রকাশ করতে হবে।
আমি জানি আমাকে এখন প্রশ্ন করবে, শেয়ার না করলে মানুষ টাকা দিবেনা।
তাহলে আমিও জানতে চাই চট্টগ্রামে বসে থাকা আমার অর্থ সহায়তায় কেনো কুড়িগ্রামের কোন এক মজিদ চাচাকে লুংগি কিনে দিতে হবে। কেনো চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো আমার টাকায় ঢাকার কোন পথশিশু একবেলা ভাল খাবার খাবে।
আমার অর্থ সহায়তায় হওয়া উপকার আনন্দের হওয়া উচিত নাকি কুড়িগ্রামে থাকা মজিদ চাচার স্বচ্ছল কোন আত্নীয় বা বড়লোক প্রতিবেশীর জন্য লজ্জার হওয়া উচিত ?
আমার দানের টাকায় এক বেলা কোন পথ শিশু যদি ভাল খাবার খায় তাহলে সেই এলাকার মেয়র, কাউন্সিলরদের জবাবদিহিতা কোথায়? সমাজে তাদের আসল ভূমিকাটা কোথায় আমাকে জানাতে হবে।
সারা দেশে দান খয়রাত করা আমারই প্রতিবেশী আমারই আত্নীয় যদি কষ্টে জীবন যাপন করে, না খেয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আমার লজ্জা হওয়া উচিত নাকি সারা দেশে দান খয়রাত করে বেড়াই সেই উছিলায় বেহেস্তের চিন্তা করা উচিত।
আমিকি লস এঞ্জেলেসে থাকি? মানে আমার এলাকাতে কি কোন মজিদ চাচা নাই? আমার এলাকাতে কি কোন পথশিশু নাই ? এইসব না দেখে কেনো ফেসবুকের দান খয়রাতের রোমান্টিক পোষ্ট দেখে কোন এক ফাউন্ডেশনকে আমার টাকা দিতে হবে?
শুধু বিদ্যানন্দ না, একই কথা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নিয়েও থাকবে।
আপনি লন্ডনে থাকেন, আপনার প্রতিবেশী আপনার চাইতে বড়লোক, ১৪ গুষ্ঠিতে গরীব আত্নীয় নাই গরীব মানুষ দেখতে কেমন তা শুধু ইউটীউবে দেখছেন তাই ফাউন্ডেশনে দান খয়রাত করে আপনি গভীর এক স্যাটিস্ফেকশান নিয়া ঘুমাইতে যান যে আপনার টাকায় কারো উপকার হইতেছে। মানা যায়।
অথচ আপনি থাকেন বাংলাদেশে। আপনি জানেন আপনার আশেপাশে গরীবের অভাব নাই। কিন্তু আপনাকে চট্টগ্রামে বসে কুড়িগ্রামের মজিদ চাচাকে লুংগি কিনে দিতে হবে, বাহ বাহ বাহ। কি আনন্দের বিষয় এইটা।
বাজারে ফার্মেসি দোকান বেড়ে যাওয়া কোন অর্থনৈতিক উন্নতি না বরং বুঝা যায় সেই সমাজে মানুষের রোগ বালাই বেশি। অবস্থা ভালনা।
সেইভাবে জাতীয় পর্যায়ে চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের বড় হওয়ার মধ্যে বিন্দুমাত্র বাহাদুরি নাই। বরং এইটা লজ্জার। এইটা গোটা দেশের মানুষের জন্য লজ্জার। এইটা আপনার জন্য লজ্জার কারন আপনার প্রতিবেশী বা আপনার আত্নীয়কে কোন এক ফাউন্ডেশনের সহায়তা নিতে হচ্ছে।
ফাউন্ডেশান যদি থাকতেই হয় তাহলে তা হবে এলাকাভিত্তিক। ফাউন্ডেশন তৈরিই হবে এই চিন্তায় যে একদিন এই ফাউন্ডেশনের কোন প্রয়োজন হবেনা। একদিন আপনার হাত ধরে আপনার কোন গরীব আত্নীয় আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পাবে। কোন মজিদ চাচা অন্য মজিদ চাচাকে লুংগি উপহার দিতে পারবে।
কিন্তু নাহ, আমাদেরকেতো চ্যারিটি ফাউন্ডেশন দিয়ে একুশে পদক পেতে হবে। প্রতি বছর মজিদ চাচাকে লুঙ্গি কিনে দিতে হবে। আমাদেরকেতো গরীব বাচিয়ে রাখতে হবে।