তিন দীঘি নাম তার
লোকের বচন
পুরানো গল্প কানে করে
ফিসফিস কথন।
দেহখানি বিশাল তার
সুপ্রাচিন খনন
তিন ধার বাঁকা তার
মাঝখান সরল।
কেন বলি তার কথা
করে প্রশ্ন মন
চারদিকে লোকজন করে আলাপন।
একদা গল্প করি,
এক কৃষাঙ্গ বালক
পথ হারিয়ে এল সেই তিনদীঘি গ্রামে
অতিশয় পেটের টানে।
যাযাবর বেশে সে খুঁজে ফেরে
কাজ সে দেশে
রাজা-বাদশা,হিন্দু-মুসলীম প্রজা সকল
বিশদে জিজ্ঞাসে তারে পরিচয় সকল
মিছে মিছে ।
উত্তরে সে কহে- “না আছে
মা-বাপ,আত্বীয়-স্বজন,পরিজন
আমিই আমার স্ব-পরিচয় মানব
প্রকৃতির গুঞ্জন ।”
সমাজ পতিরা কহে ওঠে-
“পরিচয়হীন, উপরন্তু গলায় এত জ়োর !
শুনি তাহলে আছে কি তোমার
ধর্ম কর্ম জোর ?”
বালক কহে-
“বেচে থাকার তরে নিঃপ্রয়োজন নয় কি
এসব প্রশ্নোত্তর ?”
“সাহস কতো, নচ্ছাল বালক;
অন্ন নাই নিবাস নাই, নাই
টুপি-পৈতা, গেরুয়া বসন
মুখে তাহার ঐরূপ কথন ।
কি লাভ বল পুরিয়ে তোমার
অন্ত্রের থলি
অন্তর্যামি দেবে কি মোদের
সৌভাঙ্গের ঝুলি?”
এক সময় প্রত্যেকে বলে-
আসো যদি আমার পথে
শেখাব তোমায় বুলি,
কাজ পাবে ক্ষেতে
চলে যাবে পেতে ভাতে
হবে মোদের অনুসারী ।
বালক বলে-
মানিনা আমি...
কাজ করে পাব খেতে
তার সাথে এত শর্ত বাহারি !
আমি প্রকৃতির সন্তান
বিধাতার দান বিবেক ধর্ম আমারি।
উদ্ধত নির্বংশ বালকের
স্পর্ধার বাহাদুরি
মূর্খ ভূপতিদের
ধর্যের বাঁধ ছাড়ি;
“মুঠে পুরে ফেল ঐ বালকের কন্ঠনালি
হুকুম কর পালন,
ঝুলাও তারে শুলে
ঐ তিন দীঘির পাড়েই
হবে তার পূর্ণ বিসর্জন
অবধারিত ভাগ্যের তরে ।”
তিন দিন তিন রাত অচেনা
বালকের নিঃপলক চাহন
করে চলে প্রশ্ন দীঘির দীর্ঘ জল কে –
“তোমার আছে কি কোন লিঙ্গ?”
জল বালে না ।
“আছে কি কোন ধর্ম?”
জল বলে “না; আমরা একে অন্নের সহচরী
তবে তোমাদের কিসের এত হানাহানি !?”
মুমূর্ষ কন্ঠে রক্ত ফেটে পড়ে অঙ্গে
তিন দীঘির মতো পৃথিবীর নদ-নদী,সমুদ্র,
জীবনের প্রতিটি রন্ধ্রে
বালকের সে আহাযারী রেখে যায় প্রশ্ন
সকল বিধাতার কাছে ।