ক্রমাগ্রত বিদ্যুৎবিভ্রাট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারনে মানুষের মনে যখন চরম হতাশা বিরাজমান, তখনি জাতিকে একটু নির্মল বিনোদন দিতে এগিয়ে আসলেন জলিল অনন্ত। তৈরি করলেন তার প্রোডাকশনের ৩য় মুভিঃ দ্যা ইস্পিড। আর ব্লকবাস্টার এই মুভি না দেখলে নাকি বেহেস্তে গিয়েও শান্তি পাব না, এই কথা শোনার পর আর স্থির থাকতে পারলাম না। ছুটে গেলাম স্টার সিনেপ্লেক্সে।
গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। চারিদিকে মানুষ আর মানুষ।টিকেটের জন্য সবার মধ্যে এক পতিজগিতা। পিথিবির সমস্ত মানুষ যেন আজ চলে এসেছে। যাই হোক, সমস্ত পতিক্ষার অবসান করে মুভি শুরু হল নায়কের ব্যায়াম করার দৃশ্য দিয়ে। যদিও কোনও লাভ হয়নি। যেই ভুঁড়ি ছিল তেমনি থাকলো। ব্যায়াম শেষ করে অফিসে যাবে নায়ক। কিন্তু তার ভাতিজা যে তার সাথে রাগ করেছে । এখন কি হবে? তার ইস্কুলে যে দেরি হয়ে যাচ্ছে।মুভির এই মুহূর্তে আমি ডায়লগ খেয়াল করতে পারিনি “ গৃহকর্মী ” ২ জনের কারনে। কিসের ক্যাটরিনা কিসের কারিনা। জিরো ফিগার কারে কয় দেইখা লন। যাই হোক, নায়ক অফিসে গেলেন তবে এর আগে এক বেকার যুবকের চাকরীর ব্যাবস্থা করে। যারা এখনও বেকার আছেন, অতিসত্বর নায়কের সাথে যোগাযোগ করুন। তবে একটু সাবধান, নায়কের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা চরম কড়া। রাইফেলধারী একদল ব্যাক্তি সর্বদা তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত। যদিও তারা পুরাই আকামের।
যাই হোক, নায়কের ইন্ডাস্ট্রির এর এক অধিনস্ত ব্যাক্তির বোন ইংল্যান্ড থেকে ফ্যাশনে পড়াশোনা করে এসেছেন। তবে এসেছেন পাকিস্তানের এয়ারলাইন্সে। বুঝলাম না।
নায়িকা অফিসে আসলো আর পরথম ধরসনে নায়কের পেরেমে পড়লো। অফিসে নায়কের বিশাল বিশাল ফ্যাশনের ফটু লাগানো। নায়িকা দেখল নায়ক মহাধনী, লগে লগে মোবাইল দিয়া ছবির ফটু খিচল। এই দেইখা আমি এক আইডিয়া পাইছি। ভবিষ্যতে কামে লাগামু।
ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগলো !! নায়ক এক কর্মচারীরে কোলে তুইলা নিজের গাড়িতে কইরা হাস্পাতালে নিয়া গেলো। এই দেইখা নায়িকা আরও কাইত। কিন্তু মাইয়া একবারও ভাবল না, চিকিৎসা করবো কেডা? নায়ক নাকি ডাক্তার ???? মুভির এই পর্যায়ে মেডিক্যালে পড়ার ব্যাপারে মনে একটা হতাশা কাজ করলো।
অনেক গান নাচ পেড়িয়ে নায়ক নায়িকা বিবাহ করলো। বাসর রাইতের কাহিনী আর কি কমু ভাই। ভাতিজি দেখি খাটে আগে থেইকা শুইয়া আছে। আরে বেটি, আগের দিনও ঘুমাইতি নিজের খাটে। আজকে চাচা বিয়া করসে, গেঞ্জাম করতে আইছস। যদিও পরে পিচ্চির শুভবুদ্ধির উদয় হয়। নিজ থেকেই চলে যায়। তবে চাচ্চুকে উপদেশ দেয় যাতে তারা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে।লগে পণ্ডিতি হাসি। এইডা কিসু হইলো ? চি চি চি।
ওহ ! ভিলেনের কথা কইতেই মনে ছিল না। আমাগো আলমগির হইলো বিলেন। লগে এনায়েত ওরফে এন্ড্রু। আলমগির সারা মুভিতে একটা সিগারেট হাতে ধরে রাখে কিন্তু জ্বালায় না, খায়ও না। গোপন সুত্রে জানা গেছে শুটিঙের সময় কারো কাছেই লাইটার ছিল না। সুতরাং “ইস্পিড”কে আমরা একটি ধূমপানবিরোধী মুভিও বলতে পারি। তবে এলকোহলবিরোধী নয়।
হেতেরা গেলো হানিমুনে। লগে গেলো ভাতিজা। গিয়া গান নাচ হইলো। কিন্তু একি!! বিলেন আইসা পড়লো। মুহুর্মুহু আক্রমন। ভাতিজির মৃত্যু। এই সময় হলের সকল দর্শক হেসে উঠলো। আমি বুঝলাম না একটা দুঃখের দৃশে হাসার কি আছে। তবে আমারা ধারণা সবাই অধিক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলো। এই দৃশে দম্পতি কারোই ক্ষতি হয়নি। পরবর্তীতে ভিলেনদের আরও ভালো মানের গ্রেনেড ব্যাবহারের অনুরধ রইলো। আর রাইফেলের গুলিতে বালি উড়ে কিন্তু পিস্তলের গুলিতে জিপ, দৃশ্যটা মারাত্মক সুন্দর।
ভাতিজির মৃত্যুর শোক কাটাতে হেতেরা যায় মালয়সিয়া।তারা ৪৮ ঘণ্টাও দেরি করতে পারল না ! কেন ? কেন ? কেন ? এর মাঝেই তো সব ভিলেন ধরা পড়তো।
কিন্তু আবারো এটাক ! আগের বার ভিলেনরা নারী বিলেন না আনায় নায়িকাকে কব্জা করতে পারেনি তাই এবার ২ টা নারী বিলেন নিয়ে আসলো। স্পীডবোট দিয়ে ভয়াবহ এই আক্রমন এবার আর প্রতিহত করতে পারলেন না নায়ক। এরপরের সিনেমা এগিয়ে চলল দুর্দান্ত ইস্পিডে। তবে ২য় আরেক নারী কেন নায়কের পেরেমে পড়লো আমি বুঝলাম না। যদিও মেয়েটার নাচ ভালোই।
এই মুভির শুটিং লোকেশন ভালো ছিল । ক্যামেরার ব্যাবহার ভালোই। সবার অভিনয় ভালো তবে অনেকে নায়কের সমালোচনা করেছেন। তবে আমি মনে করি , অনন্ত না হয়ে সাকিব খান হলে হাউস্ফুল তো দূরের কথা, ১ দিনও মুভি চলত না। এটা সম্ভব হয়েছে অনন্তের নিজস্ব ইমেজের কারনে। আর নিজের ৩য় মুভিতে এমন কারিশমা কেউ দেখাতে পারেন নি এই পর্যন্ত। মুভির গান খারাপ না। আর মুভি চলাকালীন একবারও কারেন্ট যায়নি, বরং এসি ছিল। এরপরও কেউ সরকারের সমালোচনা করবেন না। এই সরকার জনগনের সরকার, এই সরকার..................
এই মুভি দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন ধারা সৃষ্টি হবে বলে আমার ধারণা। কিছু কিছু শব্দ বাংলা অভিধানে যোগ করতে হবে ।যেমন। “পিথিবি” “পতিজগিতা” “ইস্টপ” “মভ” “ইস্পিড” ইত্যাদি। আমার বানানের অবস্থা দেখেছেন আজ ?? সবই মুভির কেরামতি।
আপনাদের কাছে অনুরুধ । যারা দেখেছেন , তারা আর সবাইকে মুভিটি দেখতে অনুপ্রাণিত করুন। বাংলা মুভি হলে গিয়ে দেখুন। আবার জেগে উঠুক বাংলা সিনেমা। আর সামনে থেকে “ইস্পিড” দিতে হবে আমাদের এই অনন্ত ভাইকেই। উনাকে সহস্র সালাম।