মনে করুন আপনি একজন এমবিএ (মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সনদধারী। আপনার নামের সাথে ’এমবিএ’ সনদটি তথা ডিগ্রিটি শোভা পাচ্ছে। ভালো চাকুরী কিংবা ব্যবসা করছেন। বিবাহিত। ধরা যাক আপনার একটি সন্তান হল। সন্তানের নাম রাখার সময় আপনার ইচ্ছা হল আদরের সন্তানের নামের পাশে আপনার ’এমবিএ’ সনদটিও থাকবে! অসুবিধা কী? আপনি ’…..’ ধর্মের মানুষ তাই সন্তানের নাম যদি ধর্মানুযায়ী হতে পারে তবে আপনার ঔরসজাত সন্তানের নামের শেষে আপনার অর্জিত সনদটি থাকলে দোষ কোথায়, তাই না? কিন্তু আপনি এমনটি করবেন না। বলবেন, ’এমবিএ’ সনদটি আপনার সাধনার ফসল এবং এর প্রমাণও (বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র) আপনার কাছে আছে। সন্তান যদি বড় হয়ে সনদটি অর্জন করতে পারে তবেই তার নামের পাশে ’এমবিএ’ শোভা পাবে। এটি যদি সত্যি হয় তবে আমরা কীভাবে আমাদের নামের শেষে ঠাকুর কিংবা বড়ুয়া কিংবা রোজারিও কিংবা খান ইত্যাকার পদবী যোগ করে বিভিন্ন ধর্মে ভাগ হয়ে যাই? আপনি যে নিজেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম বা অন্য কোন ধর্মের লোক ভাবছেন কোন প্রমাণ কি আছে? সন্তানের নাম রাখার আগে আকাশ থেকে কি কোন ধর্মের সনদপত্র আসে যে সন্তানটি অমুক ধর্মের? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম কিংবা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের ঘরে জন্মগ্রহণ করে যদি সেই ধর্মের লোক হওয়া যায় তবে একজন এমবিএ কিংবা চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলীর ঘরে জন্ম নিলে কেন সেই সব পদবীর অধিকারী হওয়া যাবে না? এটা গায়ের জোরে ধর্মান্তকরণ নয় কি?
একটা শিশুর কোন ধর্ম থাকে না। তাকে ধর্মান্তকরণ করা হয়। মনে রাখা ভাল গায়ের জোরে একমাত্র গুন্ডা কিংবা বদমাশ হওয়া যায় কিন্তু সত্যের নাগাল পাওয়া যায় না। মানুষের মাধ্যমে পৃথিবীতে আপনার আগমন, মানুষের কোলাহলে বিচরণ আবার মানুষ থেকে বিছিন্ন হয়ে যেখান থেকে এসেছেন সেখানে একাকী প্রস্থান। কেন? তবে আপনি কোথা হতে আসলেন আবার কোথায় যাবেন কখনো চিন্তা করেছেন কি? দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য এ পৃথিবীতে আপনি কত কী-ই না করে বেড়াচ্ছেন কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন আসলে আপনি ”কে”? তিলে তিলে কলুর বলদের মত খেটে পায়ে হাঁটা যুগের পৃথিবী থেকে আমরা এখন রকেট যুগে চলে এসেছি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের হাজারো শাখা খুলে নিমজ্জিত আছি নতুন আবিষ্কারের নেশায়। নিজেকে পরিবর্তন না করে মেতে আছি পৃথিবীকে পরিবর্তনের নেশায়। অথচ হাজার বছর আগে বাঘ যেভাবে হরিণ শিকার করে খেত এখনো সেভাবেই খায়, ঘুমায় এবং এক সময় বনের মাঝে হারিয়ে যায়। আমাদের কী হল যে আমরা কেউ একশ জন থাকার মত একটা প্রাসাদ দখল করে থাকি চার-পাঁচজন আর কারো থাকার ঠিকানা হয় রাস্তায়! জন্তুরা সবাই বনের ভেতর সহাবস্থান করতে পারল আর আমরা বিশ্বায়নের নামে, ধর্মের নামে, ছোওয়াবের নামে, স্বর্গে থাকার নামে, শান্তি আনয়নের নামে বোমা মেরে এক রাতেই হাজার হাজার মানুষকে শরণার্থী করে দিচ্ছি! নিজের বিবেককে কখনো প্রশ্ন করেছেন কি?
কেন এই ধর্ম? ধর্ম আসলে কী? কেন আমরা এতগুলো ধর্মে ভাগ হয়ে গেলাম? পুরোহিত – ভান্তে – যাজক – মোল্লা এদের জিজ্ঞেস করুন। কেউ উত্তর দেবে না কারণ ধর্ম এদের কাছে পাপ-পুণ্য নয়, ব্যবসা। সবাই আপনাকে স্বর্গে পাঠাতে ব্যস্ত তবে মৃত্যুর আগে নয়, পরে! তার মানে বাকির ব্যবসা। মারা গেলেই বলে স্বর্গীয় ’তমুক’ কিংবা ’অমুককে’ যেন বেহেশত নসীব করেন! নরকে কেউ যেতে চায় না সবাই চায় স্বর্গে যেতে! কিন্তু কারো একরত্তি সময় নেই নিজেকে চেনার কিংবা আত্মদর্শনের সাধনায় নিমগ্ন হবার। জন্মের সময় না হয় আপনার অজান্তে আপনাকে ধর্মান্তরিত করা হল কিন্তু এখন তো আপনি আর শিশুটি নন। নিজেকে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নভোচারী, রাষ্ট্রপতি, সমাজপতি, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, লেখক, কবি, পুরোহিত, ভান্তে, যাজক, মোল্লা, ভন্ড, খুনি, মাতাল, লম্পট, বেশ্যা ইত্যাদি বানালেন কিন্তু একবারও খবর নিলেন না আসলে আমার ধর্মটা কী? আমি তো শিশু ছিলাম, তারপর কিশোর-যুবা-প্রৌঢ়-বৃদ্ধ। কীভাবে আমি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম বা অন্য কোন ধর্মের লোক হলাম? আমি বারবার বলছি আপনাকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে তার মানে আপনার একটি ধর্ম জন্মের পূর্ব থেকেই ছিল? কী সেই ধর্ম? [চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪৬