somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা - ০১

১০ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টোরি ১:

আমি এই বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে লঞ্চে করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার বাড়ি বরিশাল হওয়ার সুবাদে লঞ্চে প্রায়ই যাতায়ত করি। তো ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাত ৯ টায় বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে। লঞ্চে গেলে আমার একটা বদ অভ্যাস হল রাতে না ঘুমিয়ে নদীর দৃশ্য উপভোগ করা আর গান শোনা। তো আমি লঞ্চের দোতালায় বসে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিলাম। ১২.২০ এর দিকে নদীতে প্রচণ্ড ঝড় ওঠে। প্রথমে আমি ভয়ের থেকে একটু অবাকই হলাম, কারণ ওই অবস্থায় আমি প্রথম পড়েছিলাম। ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে প্রায় সব লঞ্চই বড়। আমি উঠেছিলাম পারাবত ১১ তে। এখনও পর্যন্ত এটা বাংলাদেশের সব থেকে বড় লঞ্চ। আর এই রুটের কোন লঞ্চ সহজে ডুবেছে তাও শুনিনি। তো আমি ভাবলাম যে এটাও ডুববে না। পরক্ষনে আমার টাইটানিক এর কথা মনে হল। এটা মনে হতেই আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। ঝড় তখন তুমুল আকার ধারন করেছে। লঞ্চও ডিঙ্গি নৌকার মত দুলছে। তো আমি দোতালা থেকে নীচ তলায় গেলাম চা খেতে। কিন্তু গিয়ে দেখি দোকানপাট বন্ধ। শেষে আমি সিঁড়িতে বসে রইলাম। আর ভাবলাম যে আমার মৃত্যুটা এই রকম হবে যে আমার লাশও কেউ খুঁজে পাবে না। আমি চট করে ফেবুতে একটা স্ট্যাটাস দিলাম আর আমার এক বন্ধুকে আমি ফোন করে জানালাম। এরপর আমার খুব প্রিয় দুজন মানুষকে আমি দুটো এসএমএস দিয়ে ফোন অফ করে দিলাম। আমি বসে বসে এই সব ভাবছি আর দেখছি কে কি করে। তো দেখলাম লঞ্চের একপাশ থেকে পানি উঠে অন্য দিকে ছিটকে পড়ছে। লঞ্চের মধ্যে অপর্যাপ্ত লাইফ সাপোর্ট ইকুইপমেনট নিয়ে মানুষ টানাটানি করছে। টানাটানি করতে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা ফ্যানও ভেঙ্গে ফেলেছিল। লঞ্চের নিরাপত্তা কর্মীরা সবাইকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করল কিন্তু তারা পারল না। লঞ্চ প্রচণ্ড পরিমানে দুলছে। এর মধ্যে লঞ্চের একটি ইঞ্জিন বন্ধও হয়ে যায়। বিশাল মেঘনার মাঝে আমরা সবাই অসহায়। আশে পাশে কোন কুল কিনারাও নেই যে লঞ্চ ভিড়ানো যাবে। দেখলাম সুন্দরবন ৮ লঞ্চটি কিছুটা ঘুরে নদীর মাঝে থেমে আছে। তো আমি নিরাশ মনে এইসব দেখছি। হঠাৎ আমার চোখ এক জায়গায় আটকে যায়। দেখি এক মা তার দুধের শিশুকে বুকের মাঝে আকরে কুঁজো হয়ে আছে। সবাই যখন এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে বাঁচার জন্য, তখন সেই মা তার শিশুটিকে আগলে স্থির বসে আছে, যেন তার বাচ্চার গায়ে কোন ঠাণ্ডা লাগে। আমার কোন কিছুই এতক্ষণ মনে হয় নি, কিন্তু তখন কেন জানি আমার নিজের মায়ের জন্য মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চোখে হাত দিয়ে দেখি চোখ ততক্ষনে ভিজে গেছে।

স্টোরি ২ :

আমি সেদিন বিকেলে আমার এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি। আমার বন্ধুটির বাসা মিরপুরে। তো আমি মিরপুর ১০ নম্বর নেমে হাঁটছি এমন সময় দেখলাম এক পাগলি মহিলা রাস্তার পাশে বসে আছে। সে তার আপন মনে কি যেন বির বির করে বলছিল। কিন্তু কাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল তা সে নিজেও জানে না। তার একটু সামনে তার এক শিশু পুত্র বসে ছিল। সেও তার আপন মনে বসে খেলছিল। এক ভদ্রমহিলা বোধ হয় এমনিই ওই বাচ্চাটিকে মনে হল একটু আদর করতে যাচ্ছিল হঠাৎ ই সেই পাগলি মহিলা ওই ভদ্রমহিলাকে তেরে আসে মারার জন্য। সে পাগল কিন্তু তার সন্তানের প্রতি তার স্নেহের শেষ নেই। তাকে সুরক্ষার জন্যই সে ওই সময় তেরে আসে। আমি তখন আবারও বুঝলাম যে মা যেমনই হোক, সন্তানের জন্য তার ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।


আমার কথাঃ

কখনো মা'কে একটা জিনিস আমি মুখ ফুটে বলি নি কিন্তু অন্তর থেকে সব সময়ই বলি। বলি "মা তোমায় আমি অনেক বেশীই ভালোবাসি। তোমাকে আমি সেই জন্মের আগে থেকেই অনেক কষ্ট দিয়েছি আর এখনও দিচ্ছি। সরি মা।" জানিনা মা আমার এই না বলা কথাগুলো শুনতে পায় কিনা।
আমি জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলি নি, অন্তত মায়ের কাছে। কিন্তু দুইটা জিনিস মাকে গোপন করায় মা খুব কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু আমার বলার কিছু ই ছিল না। আবারও সরি মা। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক বেশী...


আমার মায়ের সাথে আমরা দুই ভাই :)


অফটপিকঃ
আগামিকাল সকালে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। ঈদের পর আবার দেখা হবে। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। :)
ভালো থাকবেন আমার সব ব্লগার বন্ধুরা। :)

----------------------------------------------------------------------------
বাবা'কে নিয়ে একটি লেখা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:২৮
৬৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×