স্টোরি ১:
আমি এই বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে লঞ্চে করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার বাড়ি বরিশাল হওয়ার সুবাদে লঞ্চে প্রায়ই যাতায়ত করি। তো ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাত ৯ টায় বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে। লঞ্চে গেলে আমার একটা বদ অভ্যাস হল রাতে না ঘুমিয়ে নদীর দৃশ্য উপভোগ করা আর গান শোনা। তো আমি লঞ্চের দোতালায় বসে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিলাম। ১২.২০ এর দিকে নদীতে প্রচণ্ড ঝড় ওঠে। প্রথমে আমি ভয়ের থেকে একটু অবাকই হলাম, কারণ ওই অবস্থায় আমি প্রথম পড়েছিলাম। ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে প্রায় সব লঞ্চই বড়। আমি উঠেছিলাম পারাবত ১১ তে। এখনও পর্যন্ত এটা বাংলাদেশের সব থেকে বড় লঞ্চ। আর এই রুটের কোন লঞ্চ সহজে ডুবেছে তাও শুনিনি। তো আমি ভাবলাম যে এটাও ডুববে না। পরক্ষনে আমার টাইটানিক এর কথা মনে হল। এটা মনে হতেই আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। ঝড় তখন তুমুল আকার ধারন করেছে। লঞ্চও ডিঙ্গি নৌকার মত দুলছে। তো আমি দোতালা থেকে নীচ তলায় গেলাম চা খেতে। কিন্তু গিয়ে দেখি দোকানপাট বন্ধ। শেষে আমি সিঁড়িতে বসে রইলাম। আর ভাবলাম যে আমার মৃত্যুটা এই রকম হবে যে আমার লাশও কেউ খুঁজে পাবে না। আমি চট করে ফেবুতে একটা স্ট্যাটাস দিলাম আর আমার এক বন্ধুকে আমি ফোন করে জানালাম। এরপর আমার খুব প্রিয় দুজন মানুষকে আমি দুটো এসএমএস দিয়ে ফোন অফ করে দিলাম। আমি বসে বসে এই সব ভাবছি আর দেখছি কে কি করে। তো দেখলাম লঞ্চের একপাশ থেকে পানি উঠে অন্য দিকে ছিটকে পড়ছে। লঞ্চের মধ্যে অপর্যাপ্ত লাইফ সাপোর্ট ইকুইপমেনট নিয়ে মানুষ টানাটানি করছে। টানাটানি করতে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা ফ্যানও ভেঙ্গে ফেলেছিল। লঞ্চের নিরাপত্তা কর্মীরা সবাইকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করল কিন্তু তারা পারল না। লঞ্চ প্রচণ্ড পরিমানে দুলছে। এর মধ্যে লঞ্চের একটি ইঞ্জিন বন্ধও হয়ে যায়। বিশাল মেঘনার মাঝে আমরা সবাই অসহায়। আশে পাশে কোন কুল কিনারাও নেই যে লঞ্চ ভিড়ানো যাবে। দেখলাম সুন্দরবন ৮ লঞ্চটি কিছুটা ঘুরে নদীর মাঝে থেমে আছে। তো আমি নিরাশ মনে এইসব দেখছি। হঠাৎ আমার চোখ এক জায়গায় আটকে যায়। দেখি এক মা তার দুধের শিশুকে বুকের মাঝে আকরে কুঁজো হয়ে আছে। সবাই যখন এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে বাঁচার জন্য, তখন সেই মা তার শিশুটিকে আগলে স্থির বসে আছে, যেন তার বাচ্চার গায়ে কোন ঠাণ্ডা লাগে। আমার কোন কিছুই এতক্ষণ মনে হয় নি, কিন্তু তখন কেন জানি আমার নিজের মায়ের জন্য মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চোখে হাত দিয়ে দেখি চোখ ততক্ষনে ভিজে গেছে।
স্টোরি ২ :
আমি সেদিন বিকেলে আমার এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি। আমার বন্ধুটির বাসা মিরপুরে। তো আমি মিরপুর ১০ নম্বর নেমে হাঁটছি এমন সময় দেখলাম এক পাগলি মহিলা রাস্তার পাশে বসে আছে। সে তার আপন মনে কি যেন বির বির করে বলছিল। কিন্তু কাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল তা সে নিজেও জানে না। তার একটু সামনে তার এক শিশু পুত্র বসে ছিল। সেও তার আপন মনে বসে খেলছিল। এক ভদ্রমহিলা বোধ হয় এমনিই ওই বাচ্চাটিকে মনে হল একটু আদর করতে যাচ্ছিল হঠাৎ ই সেই পাগলি মহিলা ওই ভদ্রমহিলাকে তেরে আসে মারার জন্য। সে পাগল কিন্তু তার সন্তানের প্রতি তার স্নেহের শেষ নেই। তাকে সুরক্ষার জন্যই সে ওই সময় তেরে আসে। আমি তখন আবারও বুঝলাম যে মা যেমনই হোক, সন্তানের জন্য তার ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
আমার কথাঃ
কখনো মা'কে একটা জিনিস আমি মুখ ফুটে বলি নি কিন্তু অন্তর থেকে সব সময়ই বলি। বলি "মা তোমায় আমি অনেক বেশীই ভালোবাসি। তোমাকে আমি সেই জন্মের আগে থেকেই অনেক কষ্ট দিয়েছি আর এখনও দিচ্ছি। সরি মা।" জানিনা মা আমার এই না বলা কথাগুলো শুনতে পায় কিনা।
আমি জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলি নি, অন্তত মায়ের কাছে। কিন্তু দুইটা জিনিস মাকে গোপন করায় মা খুব কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু আমার বলার কিছু ই ছিল না। আবারও সরি মা। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক বেশী...
আমার মায়ের সাথে আমরা দুই ভাই
অফটপিকঃ
আগামিকাল সকালে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। ঈদের পর আবার দেখা হবে। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন আমার সব ব্লগার বন্ধুরা।
----------------------------------------------------------------------------
বাবা'কে নিয়ে একটি লেখা