[email protected]
রোগনির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা একটা ভালো হাতিয়ার। শরীরের রক্ত হলো নানা ধরনের কোষের সমষ্টি, আর অন্যান্য যৌগিক বস্তু। যেমন—বিভিন্ন ধরনের লবণ, প্রোটিন ইত্যাদিও থাকে। এগুলোর প্রতিটিরই প্রয়োজনীয়তা আছে এবং এদের স্বল্পতা বা আধিক্য সমস্যা নির্দেশ করে। রক্তের তরল অংশকে বলা হয় প্লাজমা। যখন শরীরের বাইরে রক্ত জমে যায়, তখন রক্তের কোষগুলো এবং কিছু কিছু প্রোটিন শক্ত হয়ে যায়। যে তরল পড়ে থাকে সেটাকে বলা হয় সিরাম। এ সিরামও নানা পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
নানাভাবে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কতটা রক্ত লাগবে বা তার কোন অংশ লাগবে— সেটা নির্ভর করছে কি পরীক্ষা তা দিয়ে করা হবে তার ওপর। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্ত-শর্করা মাপার জন্য কয়েক ফোঁটা রক্ত
আঙুলের ডগায় ছুঁচ ফুটিয়ে নিলেই যথেষ্ট। আবার সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষার জন্য বেশকিছুটা রক্তের প্রয়োজন হয়, যা সাধারণত হাতের কনুইয়ের সামনের ভাঁজের শিরা থেকে নেয়া হয়।
Complete Blood Count (CBC) বা সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা থেকে রক্তের বিভিন্ন সেল বা কণিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এ পরীক্ষার ফলাফল থেকে যার রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা করা যায়। তার কোনো রোগ হয়ে থাকলে বা কোনো উপসর্গ থাকলে সেগুলোর কারণ কি, তা বহুক্ষেত্রেই বের করা যায়।
আমাদের রক্তে নানা রকমের কণিকা থাকে, যেমন: —শ্বেতকণিকা, লোহিতকণিকা ও প্ল্যাটিলেট। প্রত্যেকেই আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে নানাভাবে সাহায্য করে। সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষায় সাধারণত তাদের সম্পর্কে এ তথ্যগুলো থাকে—
রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা
শ্বেতকণিকা আমাদের শরীরকে অসুখ-বিসুখের হাত থেকে রক্ষা করে। যদি দেহে কোনো রোগের সংক্রমণ হয়, তাহলে দেহের শ্বেতকণিকা সেই সংক্রমণের জন্য দায়ী জীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদিকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে। আকৃতিতে শ্বেতকণিকা লোহিতকণিকার থেকে বড় হয় এবং সংখ্যাতেও তারা কম হয়। দেহে যদি কোনো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়, তাহলে শ্বেতকণিকার সংখ্যা খুব বেড়ে যায়। শ্বেতকণিকার সংখ্যা থেকে সংক্রমণের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সময়বিশেষে এগুলো অন্যান্য তথ্যও চিকিত্সককে দেয়। যেমন—ক্যান্সারের চিকিত্সার সময় এর সংখ্যা থেকে চিকিত্সার কার্যকারিতা আঁচ করা যায়।
শ্বেতকণিকার রকমভেদ
বিভিন্ন ধরনের শ্বেতকণিকা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে নিউট্রোফিল, লিমেম্ফাসাইট, মনোসাইট, ইয়েসোনোফিল এবং ব্যাসোফিল হলো প্রধান। অপরিণত নিউট্রোফিল, যাকে ব্যান্ড নিউট্রোফিল বলা হয়, সেগুলোকেও পরীক্ষার সময় গোনা হয়। শরীর রক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শ্বেতকণিকার বিভিন্ন ভূমিকা আছে। তাই এদের সংখ্যাগুলো শরীরের প্রতিরোধ-ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়। বিভিন্ন শ্বেতকণিকার কমা বা বাড়ার ওপর নির্ভর করে কি জাতীয় সংক্রমণ, বোঝা যায় এটি অ্যালার্জি বা টক্সিনজনিত প্রতিক্রিয়া না লিউকোমিয়া ইত্যাদি।
রক্তের লোহিতকণিকা সংখ্যা
রক্তে লোহিতকণিকার কাজ হলো—ফুসফুস থেকে অক্সিজেন বহন করে শরীরের সব জায়গায় পৌঁছে দেয়া এবং সেখান থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করে ফুসফুসে নিয়ে আসা, যাতে ফুসফুস সেগুলো দেহ থেকে বের করে দিতে পারে। লোহিতকণিকার সংখ্যা কম হওয়া অ্যানিমিয়ার লক্ষণ। এর অর্থ শরীর প্রয়োজন মতো অক্সিজেন পাচ্ছে না। লোহিতকণিকার সংখ্যা যদি বেশি বেড়ে যায়, তাহলে ভয় থাকে সেগুলো একসঙ্গে জমাট বেঁধে উপশিরাগুলোর ভেতরকার পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
হেমাটোক্রিট
লোহিতকণিকা রক্তের কতটা অংশ (ঘনায়তন বা volume-এর মাপে) জুড়ে আছে সেটি বোঝাতে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি মাপা হয় শতাংশ বা পার্সেন্টেজ হিসেবে। যদি হেমাটোক্রিট ৪০ বলা হয়, তার মানে রক্তের ঘনায়তনের ১শ’ ভাগের ৪০ ভাগ লোহিতকণিকাপূর্ণ।
হিমোগ্লোবিন
লোহিতকণিকার একটি প্রয়োজনীয় অংশ হলো হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিনই অক্সিজেনকে বহন করে এবং লোহিতকণিকার রক্তবর্ণের জন্য দায়ী। পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সাধারণভাবে নির্দেশ করে দেহ কতটা অক্সিজেন পাচ্ছে।
লোহিতকণিকা নির্দেশিকা
লোহিতকণিকার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়ার জন্য তিন রকম নির্দেশিকা ব্যবহার করা হয়। গড় কণিকাকার ঘনায়তন, গড় কণিকাকার হিমোগ্লোবিন এবং গড় কণিকাকার হিমোগ্লোবিনের গাঢ়করণ। এগুলো একটি যন্ত্রের সাহায্যে এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষণ থেকে মাপা হয়। গঈঠ থেকে লোহিতকণিকার আয়তন কি বোঝা যায়। গঈঐঈ নির্দেশ করে হিমোগ্লোবিন লোহিতকণিকায় কতটা ঘণীভূত অবস্থায় রয়েছে। এই তথ্যগুলো থেকে কি ধরনের অ্যানিমিয়ায় লোকে ভুগছে সেটা বোঝা যায়। লোহিতকণিকাগুলোর আয়তন সব এক হয় না, কম-বেশি থাকে। সেটি দেখানোর জন্য অনেক সময় লোহিতকণিকার ব্যাপ্তি বণ্টনের উল্লেখও রিপোর্টে থাকে।
প্ল্যাটিলেট বা থ্রম্বোসাইটের সংখ্যা
এগুলো হলো রক্তের ক্ষুদ্রতম কণিকা। রক্তে জমাট বাঁধার ব্যাপারে এগুলোর বড় ভূমিকা আছে। যখন কেটে রক্ত ঝরতে থাকে, তখন এই প্ল্যাটিলেট আকারে বৃদ্ধি পেয়ে একসঙ্গে জমাট বেঁধে একটা আঠার মতো পদার্থে পরিণত হয়। সেটাই কাটা জায়গায় আটকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। প্ল্যাটিলেট খুব কম থাকলে, রক্ত পড়তে শুরু করলে, সেটা বন্ধ হতে চাইবে না। আবার যদি খুব বেশি প্ল্যাটিলেট থাকে, তাহলে দেহের রক্তবাহী নালীগুলোতে জমে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।
রক্ত লেপন পরীক্ষা
এতে এক ফোঁটা রক্ত কাচের স্লাইডে ফেলে সেটিকে আরেকটা স্লাইড দিয়ে ঘষে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তারপর এক ধরনের বিশেষ রং দিয়ে সেটিকে রঞ্জিত করা হয়। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে রঞ্জিত স্লাইডটি পরীক্ষা করলে রক্তকণিকার অস্বাভাবিক গঠন, আয়তন ইত্যাদি ধরা পড়ে। তা থেকে ম্যালেরিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া ইত্যাদি নানা রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা পড়ে উঠেছে অ্যান্টিবডি, শ্বেতকণিকা ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রোটিনের সাহায্যে। যখনই এরা মনে করে দেহে বাইরের কোনো কিছু এসে বাসা বাঁধতে চেষ্টা করছে (তা ব্যাকটেরিয়াই হোক, বা ভাইরাসই বা অন্যকিছু হোক) এরা গিয়ে তাদের আক্রমণ করে। এ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্যই আবার অ্যালার্জি হয়। সেটা ঘটে যখন এরা ভুল করে পোলেন, ওষুধ, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদিকে দেহের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে ধরে নেয়। মাঝেমধ্যে এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে শরীরের নিজস্ব কোষগুলোকেই আক্রমণ করতে শুরু করে। এটাও এক ধরনের জটিল অসুস্থতা, যাকে বলা হয় অটো-ইমিউন ডিজিজ।
(ইন্টারনেট অবলম্বনে)
সূত্র : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৯