সামহোয়্যার ইন ব্লগের অফিসে এসেছি। এইটাকে ঠিক অফিস বলবো না চিলেকোঠা বলবো বুঝতে পারছিনা। তবে বেশ ছিমছাম পরিবেশ। সবকিছু খুব সাদামাটা ভাবে গোছানো, পরিষ্কার। মালিকের রুচি বোধের প্রশংসা করতেই হয়। একপাশের দেয়াল পুরোটা কাঁচের। সেই কাঁচের দেয়াল দিয়ে পুরো ছাদটা দেখা যাচ্ছে। ছাদের পুরোটা জুড়েই বাগান। বাইরের আকাশটাকে দেখাচ্ছে অদ্ভুত সুন্দর। এমন একটি অফিসে চাকরী করতে পারার মাঝেও আনন্দ রয়েছে। জানিনা চাকরীটা পাবো কিনা। তবে এখানে চাকরী পাওয়ার জন্য যত প্রকার লবিং করার দরকার; প্রয়োজনে তাই করতে হবে।
দরজার পাশেই একটা ডেস্ক। খুব সম্ভবত এটাই এই অফিসের রিসিপশন। রিসিপশন ডেস্কে একটি মেয়ে বসে আছে। চোখে কালো রঙের সানগ্লাস পরে সামনে রাখা ল্যাপটপে গভীর মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সানগ্লাসের কারণে বোঝা যাচ্ছেনা যে আসলে তাকিয়ে আছে না ঘুমিয়ে আছে। অফিসে রিসিপশন ডেস্কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চোখে সানগ্লাস পরে থাকাটা বিস্ময়কর। মালিক দেখলে নিশ্চিত চাকরী থেকে বহিষ্কার করে দেবে।
এক্সকিউজ মি !
জী, বলুন। আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি ?
জী, আমি এসেছি চাকরীর ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য।
আপনার নাম ?
জী, আমি কান্ডারি অথর্ব।
ওহ ! আচ্ছা আপনিই কান্ডারি অথর্ব।
(এই কথা শোনার পর নিজেকে বেশ সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি বলে মনে হতে লাগলো।)
বসুন। তারপর বলুন কেমন আছেন ?
ভাল আছি।
আপনার সিভি আমরা পেয়েছি। কিন্তু আপনি এখানে চাকরী করার আবেদন করেছেন দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম।
অবাক হবার কিছু নেই। আমার একটা চাকরীর খুব দরকার। আর আপনাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ভাবলাম যেহেতু আপনাদের প্ল্যাটফর্মে অনেকদিন ধরেই লেখালিখি করে আসছি তাই হয়ত একটু চেষ্টা তদবীর করলে চাকরীটা পেয়েও যেতে পারি। সেই আশাতেই এসেছি। আচ্ছা ম্যাডাম কি আছেন অফিসে ?
কোন ম্যাডাম ?
ম্যাডাম মানে জানা আপুর কথা বলছি।
(এই কথা শুনে মেয়েটি সানগ্লাস খুলে টেবিলের উপর রেখে আমার দিকে তাকালো। অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী চোখ। চোখে কোন সমস্যাও দেখছিনা। তাহলে এমন অফিসের ভেতর সানগ্লাস পরে থাকার হেতু কি বুঝতে পারছিনা।)
না, ম্যাডামতো আজকে অফিসে আসেন নি।
ওহ ! আচ্ছা। তাহলে কি আমি আজকে চলে যাবো ?
চলে যাবেন কেন ? বসুন আপনার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করি।
হুম ! তা বসা যেতে পারে।
মেয়েটি পিয়ন গোছের একজন লোককে ডেকে কফি দিতে বলল।
আমি কিন্তু আপনার লেখার দারুণ একজন ভক্ত। আপনি খুব ভাল লেখেন।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার কি কোন নিক আছে ? আপনিও কি লেখালিখি করেন ?
না, না আমার কোন আইডি নেই। আমি শুধু পড়ি।
ওহ ! আচ্ছা। তবে আপনি কিন্তু চাইলে একটা নিক খুলে লিখতে পারেন।
আরে না, না। আমায় দিয়ে লেখালিখি হবেনা।
(মনে মনে আমি খুব হাসলাম। আরে আপনি লিখবেন কি ? যে মেয়ে অফিসে বসে সানগ্লাস পরে স্টাইল করে তার জ্ঞান সম্পর্কে আমার বোঝা হয়ে গেছে। আর ইনি যে ব্লগ পড়েন সেটাও বিশ্বাস করার মতো কিছু দেখছিনা। আমাকে তার সামনে বসিয়ে রেখে কথা বলছে ভাব দেখানোর জন্য। যাই হোক চাকরীর জন্য এসেছি। এখন অনেক কিছুই হজম করে নিতে হবে। নতুবা দেখা যাবে এর কথাতেই চাকরীটা আর নাও হতে পারে। আবার দেখা গেলো একে ইমপ্রেস করতে পারলে আমার জন্য ইনিই তদবীর করবেন।)
কি যে বলেন না। আপনি একটা নিক খুলে লিখতে শুরু করে দিন। কোন ব্যাপারি না। লিখতে লিখতেই একদিন ভাল লেখক হয়ে উঠবেন। আর সবার সাথে আন্তরিক থাকবেন। দেখবেন সবাই আপনাকে সাহায্য করবে। নিক খুলে প্রথম যে পোষ্টটি দিবেন আমি সেটাকে প্রমোট করে দিবনে।
আপনি প্রমোট করে দিলেতো আর কোন কথাই নেই। কিন্তু আমি কি লিখবো ? আমিত এই কাজ কখনওই করিনি।
আরে যা খুশি একটা কিছু লিখে ফেলুন।
সেটা কেমন ?
ধরেন আপনি আজকে সারাদিন কি করলেন তাই কিছুটা গুছিয়ে লিখুন না।
ওকে ! আমি আজকেই একটা আইডি খুলবো।
এখানে একটা কথা আছে অবশ্য। নিক খুলে প্রথমে কিছু লিখলেই কিন্তু আপনার লেখা প্রথম পাতায় আসবেনা। আপনাকে কিছুদিন ওয়াচে রাখা হবে সেটা জানেন নিশ্চয়।
সেটা কোন সমস্যা না। আমি জানা ম্যাডামকে দিয়ে সেফ করিয়ে নিব।
হুম ! সেটাও হয়।
আপনি কিন্তু আমাকে সাহায্য করবেন। আমি কিন্তু আপনার ভরসায় আইডি খুলছি তাহলে।
অবশ্যই।
আচ্ছা আপনি কি আমাকে আইডি খোলার ব্যাপারে সাহায্য করবেন ? আসলে আমিতো কখনও আইডি খুলিনি তাই জানিনা কি করে সব কিছু করতে হয়।
অবশ্যই সাহায্য করবো।
(আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে মেয়েটাকে নিক খোলার কাজে সাহায্য করছি। নিকের নাম ঠিক করা হয়েছে ফান্টুশ। নামটা মেয়েটা নিজেই ঠিক করেছে। পিয়ন গোছের লোকটা টেবিলে ওয়ান টাইম প্ল্যাস্টিকের গ্লাসে করে কফি দিয়ে গেছে।)
নিন কফি খান।
আমি কফির গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম আর ভাল কথা শুনুন। প্রথম প্রথম পড়ুন আর নাই পড়ুন সবার পোষ্টে পোষ্টে গিয়ে প্লাস দিয়ে ভাল লাগা জানিয়ে আসবেন অবশ্যই। এতে আপনার পরিচিতি খুব দ্রুতই হয়ে যাবে সবার সাথে। দেখবেন সবাই আপনার পোষ্টে এসেও ভাল লাগার কথা জানিয়ে যাবে।
হুম !
আর যদি একেবারেই কিছু লিখতে না পারেন তাহলেও সমস্যা নেই।
সেটা কেমন ?
ধরুন একটা কৌতুক লিখে দিলেন দুই তিন লাইনের অথবা সবাইকে হাই হ্যালো টাইপ কিছু লিখে অথবা দুইটা তিনটা ছবি আপলোড করে পোষ্ট দিয়ে দিতে পারেন। তাতেও কাজ হয়ে যাবে। আপনার পোষ্ট হিট হবে নিশ্চিত।
চমৎকার আইডিয়া দিয়েছেনতো ! আচ্ছা কফি কেমন হয়েছে ?
আমি কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললাম ভাল।
এরই মধ্যে একটি ছেলে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে অফিসে ঢুকেছে। আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে সুন্দর করে হাসি দিয়ে বলল জানা আপু সরি ! আজকে একটু লেট করে ফেললাম অফিসে আসতে। রাস্তায় আজকে প্রচন্ড রকমের জ্যাম।
মেয়েটিও হাসি দিয়ে বলল কোন সমস্যা নেই। এসো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ও হলো আমাদের কান্ডারি অথর্ব। জানা আপু মিষ্টি করে একটা হসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন কান্ডারি পরিচয় হও ও হলো আমাদের মডু মামা।
আমি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। অসস্তিকর ভীষণ লজ্জাজনক এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছি। এতক্ষণ ধরে আমি জানা আপুর সাথে বসে কথা বলছি অথচ আমি তাকে চিনতে পারিনি। আর এতক্ষণ ধরে আমি অধম জানা আপুকেই জ্ঞান দিয়ে চলেছি। আমি আসলেই একটা অথর্ব। চাকরী আর পাওয়া হয়েছে এখানে ! চরম একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি। আমার কাছে মনে হচ্ছে টেবিলে রাখা জানা আপুর সানগ্লাসটা এখন আমি নিজেই পরে ফেলি। সানগ্লাস শুধু যে রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই মানুষ পরে না; আরও নানা কারণেই সানগ্লাস পরাটা বেশ উপকারী বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারলাম।
পুনশ্চঃ
গল্পটা নিতান্তই আমার কল্পনা প্রসূত। এটাকে বাস্তব হিসেবে ধরে নেয়ার কোন কারণ নেই। সামহোয়্যার ইন ব্লগের দশম বর্ষপূর্তি এবং সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবসের জন্য লেখা একটি নিছক রম্য। সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবসে প্রিয় এই মাতৃভূমির সকল স্তরের মানুষকে, সকল সহ ব্লগার, পৃষ্ঠপোষক এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই সামহোয়্যার ইন ব্লগের পক্ষ থেকে হৃদ্যতাপূর্ণ শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং অশেষ ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
আপডেটঃ
আজকে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবসকে কেন্দ্র করে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছে মতামত পাতায়। এইজন্য আমি সামহোয়্যার ইন ব্লগের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। অগণিত ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা এবং হৃদ্যতাপূর্ণ ভালোবাসা সুপ্রিয় সামহোয়্যার ইন ব্লগ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭