স্টার ট্রেক, স্টার ওয়ার্স, ২০০১ এ স্পেস ওডিসি, এলিয়েন কিংবা হ্যারি পর্টারের মতো বক্স অফিস কাঁপানো কোন সুপারহিট মুভি নিয়ে রিভিউ লিখছিনা। প্রোযেক্ট ব্লু বীম নামটি শুনতে কোন জটিল মুভির মতো মনে হলেও আসলে এটি একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, যা দাবি করে নাসা যায়নদের সাথে মিলিত হয়ে এক নব যুগীয় ধর্ম বাস্তবায়নের প্রয়াসে আছে যা সম্পূর্ণ কৃত্রিম প্রযুক্তি নির্ভর। ১৯৯৪ সালে ক্যুবেক সাংবাদিক এবং ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক সার্জ মোনাস্ট বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগ দাখিল করেন এবং পরবর্তীতে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তার লেখা প্রোযেক্ট ব্লু বীম (নাসা) বইটতে। প্রবক্তা এই তত্ত্বের পক্ষে নানা রকম যুক্তি দেখান। একসময় কানাডার সরকার তার মেয়েকে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসাবে দাবি করেছিলো যেন সে প্রোযেক্ট ব্লু বীম নিয়ে অনুসন্ধান থেকে বিরত থাকে। কিন্তু তিনি থেমে থাকার পাত্র নন। চলতে থাকে তার অনুসন্ধান। শেষে ১৯৯৬ সালে সার্জ মোনাস্ট হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান, তবে সেটা কোন স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো না। তাকে হত্যা করা হয়েছিলো বলেই দাবি করা হয়ে থাকে। তবে সেই হত্যার রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি।
পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্ম রয়েছে। ধরে নিলাম হিন্দু ধর্মের কথা। দেবী দূর্গা মা এক সন্ধ্যায় আকাশে এসে দেখা দিলেন এবং মানব জাতিকে ধর্মীয় দীক্ষা দিয়ে গেলেন। তখন আস্তিক নাস্তিক ভেদে মানব জাতির প্রতিক্রিয়াটা কি হবে ? অথবা ধরে নিলাম দেবী দূর্গা মা না; কোন এক সন্ধ্যার আকাশে স্বয়ং যীশু এসে দেখা দিলেন এবং মানব জাতির জন্য ধর্মীয় দিক নির্দেশনা দিলেন। তখন প্রতিক্রিয়াটা কেমন হবে?
খ্রিষ্টান ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যীশু একদিন ফিরে আসবেন আবার ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ঈসা (আঃ) পুনরায় আবির্ভূত হবেন এই পৃথিবীতে। তো যখন সন্ধ্যার আকাশে এমন একটি ঘটনা ঘটতে দেখা যাবে তখন ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে বিষয়টা কোন দিকে যেয়ে গড়াবে ?
নাসা ঠিক এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। নাসার অনেকগুলো গোপনীয় প্রোযেক্টের মধ্যে ব্লু বীম অন্যতম একটি প্রোযেক্ট। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশে স্থির ও চলতি প্রতিচ্ছবি স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোই এই প্রোযেক্টের আসল উদ্দেশ্য। একবার যদি এটি সফল হয়, তাহলে দেখা যাবে যেদিন সত্যি সত্যি যীশু কিংবা ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন সেদিন আর কেউ বিশ্বাস করছেনা কিংবা পুরো মানব জাতি দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যাবে। আর তখনই নাসার এই প্রোযেক্ট সফলতা পাবে। নাস্তিকরা পাবে ধর্মের উপর আঙ্গুল তোলার শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। এই প্রোযেক্টেরই একটি অংশ হলো নাস্তিকতার চর্চা। আগে থেকেই পৃথিবীতে ক্ষেত্রটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে মূলত নাস্তিকতার চর্চা। নতুবা হুট করে আকাশে ঈশ্বর এসে দেখা দিলে আর বিভ্রান্তি ছড়ানোর পক্ষে লোক পেতে প্রাথমিক ভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যাবে। তাই পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
চিত্রের মাধ্যমে প্রোযেক্ট ব্লু বীম কার্যপ্রক্রিয়াঃ
এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুযায়ী, ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার তখনই পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব; যখন পৃথিবীর সব মানুষকে তাদের সণাতন ধর্মের স্থলে এক নব যুগীয় ধর্মের আওতায় আনা সম্ভব হবে। মোনাস্টের মতানুসারে, এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চারটি ধাপে কাজ অরে আসছে।
ধাপ-০১
পৃথিবীতে মানুষের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক জ্ঞানের ভাঙ্গন। খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানা। নতুন কিছু প্রতিস্থাপন করতে হলে পুরাতন সব কিছু ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হয়। এই নীতির উপরেই ধাপ-০১ কাজ করছে। কিন্তু মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এমন যে চাইলেই ভেঙে দিয়ে সেখানে নতুন কিছু স্থাপন করা বেশ কষ্ট সাধ্য তবে অবাস্তব নয়। এই জন্য কাজ করে চলেছে নাস্তিকতার চর্চা। পৃথিবীর সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভেঙে ফেলার জন্য যথাযথ স্থানে চালানো হচ্ছে কৃত্রিম ভূমিকম্প প্রযুক্তি, যা হার্প নামে সুপরিচিত। মূলত খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করে দেয়াই এর আসল উদ্দেশ্য।
ধাপ-০২
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশে ত্রিমাত্রিক লেজার রশ্মির মাধ্যমে স্থির এবং চলতি প্রতিচ্ছবি স্থাপন করাই ধাপ-০২ এর কাজ। রাতের আকাশে কিংবা সন্ধ্যা মিলিয়ে যাবার আগে আকাশে বিভিন্ন ধর্মের দেব-দেবী কিংবা ঈশ্বররা এসে একসাথে দেখা দিয়ে যার যার ভাষায় কথা বলবে, তারপর এক ঈশ্বরে রুপ নিয়ে মানব জাতির উদ্দেশ্যে ধর্মীয় দীক্ষা প্রদান করবে, যা মূলত হবে যায়ন ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা। ধাপ-০২ এর দ্বিতীয় পর্যায় পৃথিবীর সকল সামাজিক এবং ধর্মীয় স্তর ভেঙে দেয়া হবে। সবাই একই জাতীয় সংগীতের আওতাভুক্ত হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে নব যুগীয় ধর্মে দীক্ষিত ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার।
ধাপ-০৩
টেলিপেথিক ইলেকট্রনিক দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করাই হলো ধাপ-০৩ এর কাজ। মানুষ ভাববে তাদের ঈশ্বর তাদের সাথে টেলিপেথিক ভাবে যোগাযোগ করছে, মানুষও তাদের ঈশ্বরের সাথে টেলিপেথিক ভাবেই যোগাযোগ করছে। প্রতিটা মানুষের মস্তিষ্কে পৃথক পৃথক ভাবে অত্যন্ত মৃদু বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে কাজটি সম্পাদনা করা হবে।
ধাপ-০৪
ধাপ-০৪ কাজ করছে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত হয়েঃ
১। সমগ্র মানব জাতির মধ্যে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে এলিয়েন আক্রমণের বিশ্বাস স্থাপনা।
২। খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপনা যে শীঘ্রই পরমানন্দময় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
৩। ইলেকট্রনিক এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির এক সংমিশ্রণ, যা প্রেরিত হবে ফাইবার অপটিক্স, টেলিফোন লাইন, মোবাইল, বেতার তরঙ্গ এর ভেতর দিয়ে সকল প্রকার ইলেকট্রনিক উপকরণ এবং যন্ত্রপাতিতে পরিব্যাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে। যার ফলশ্রুতিতে সর্বস্থানে সকলের কাছেই একটি বিশেষ মাইক্রোচিপ ইন্সটল হয়ে যাবে।
মোনাস্টের মতানুসারে, নব যুগীয় ধর্মের নব ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর সফল প্রয়োগ হবে সমগ্র মানব জাতিকে মূলত শয়তানের দীক্ষায় শপথ গ্রহণ করানোর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। প্রতিরোধকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে; যেমনঃ শিশুদেরকে যৌন দাস হিসেবে নিযুক্ত করা হবে, সাজাপ্রাপ্ত হাজতিদের চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণায় ব্যবহার করা হবে, সাজাপ্রাপ্ত হাজতিদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হবে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন মূলক অপারেশনে, শারীরিক ভাবে সক্ষমদের ব্যবহার করা হবে কৃতদাস হিসেবে ইত্যাদি।
প্রোযেক্ট ব্লু বীম বাস্তবায়নের ধারণকৃত কিছু ভিডিও চিত্রঃ
তারপর একদিন সকল তর্ক-বিতর্কের অবসান হবে। সকলেই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হবে ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডারের অধীনস্ত হতে। প্রোযেক্ট ব্লু বীম এর কার্যক্রম সফল ভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে মানুষের বিশ্বাসকে সাইকোলজিক্যালী গ্রাস করে ফেলা হয়েছে। মানুষ এখন মঙ্গল গ্রহে বাস করার স্বপ্ন দেখছে, এলিয়েন আছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, আকাশে ইউএফও উড়তে দেখা গেছে বলেও বিশ্বাস করছে। হলিউড হচ্ছে এইসব বিশ্বাস স্থাপনার জন্য মানুষকে সাইকোলজিক্যালী দূর্বল করে তোলার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রচার মাধ্যম। তৈরি হয়েছে ২০০১ স্পেস ওডিসি, স্টার ট্রেক, স্টার ওয়ার্স, এলিয়েন, ইটি, এক্স-ফাইলস এর মতো দর্শক নন্দিত চলচ্চিত্র। আমাদের সবারই নিশ্চয় জুরাসিক পার্ক চলচ্চিত্রটির কথা মনে আছে। যেখানে স্পীল বার্গ খুব সূক্ষ্ম ভাবেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বটিকে সত্য বলে তুলে ধরেছেন। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ভেতর অবিশ্বাস স্থাপনার একটি সফল প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে। ঈশ্বর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এই ধারনাকে মিথ্যা প্রমাণ করাই ছিলো এর আসল উদ্দেশ্য। আজকের নাস্তিক সমাজ ঠিক যেভাবে ভাবছে যে ঈশ্বর বলে কিছু নেই; ঈশ্বরের বাণী সবই আসলে মিথ্যা বানোয়াট।
দেখা গেলো কোথাও বাসে করে যাওয়ার সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে রেডিও এফএম এ কোন কোকিল কণ্ঠী আরজের বকবকানি শোনা শেষ করে হেডফোন খুলে রেখেছি মাত্র। অমনি কানে আসছে ঈশ্বর বলছে বান্দা আমিই তোর ঈশ্বর, আজ থেকে আমার আনুগত্য তুই গ্রহণ কর, আমি জানি তুই এই মুহূর্তে রেডিওর সেই আরজেকে খুব কাছে পেতে চাইছিস। আমি হয়ত বললাম ঈশ্বর আপনি জানলেন কেমনে? ঈশ্বর তখন ধমক দিয়ে বলবেন, মনে রাখিস আমি হোলাম তোদের ঈশ্বর। তারপর সন্ধ্যা মিলিয়ে যাবার আগে যখন আকাশে ঈশ্বর নামক মুভির প্রোজেকশন হবে তখন হকচকিয়ে পড়বো। পাশে দাঁড়িয়ে তখন নাস্তিকরা বিজয়ের হাসি হাসবে। পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে নব যুগীয় ধর্মের নব ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার।
আর সবকিছু মিলিয়ে এই হলো, প্রোযেক্ট ব্লু বীম। খুব খেয়াল করে দেখলে দেখা যায় যে, নাস্তিকতা মূলত বার বার খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মের প্রতিই অবিশ্বাস স্থাপনার মাধ্যমে কাজ করে থাকে। আসলে তারা তাদের অগোচরে যায়নদের এইসব ষড়যন্ত্রকেই বাস্তবায়িত করে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ
* প্রোযেক্ট ব্লু বীম
* দ্যা গ্রেটেস্ট হক্স
* ডেভিড ওপেনহেইমারের লেখা আর্টিকেল হোয়াট ইস দ্যা প্রোযেক্ট ব্লু বীম
* নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্ল্যান
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৮