ঢাকা স্টেডিয়ামে আবাহনী আর মোহামেডানের মধ্যে খেলা হবে। সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা। বাড়িতে বাড়িতে আবাহনী আর মোহামেডানের পতাকা উড়ছে। মোড়ের চায়ের দোকানে তর্ক জমে উঠেছে। এরই মাঝে পলাশ এলো মোহামেডানের জার্সি গায়ে দিয়ে। এক কথায় দুই কথায় ঝগড়া বেধে গেল শফিকের সাথে। শফিক আবাহনীর অন্ধ সমর্থক। ঝগড়ার এক পর্যায় শফিক পলাশের গালে একটা চড় মেরে বসল। ব্যাস আর যায় কোথায়? মারামারি বেধে গেল। সেই মারামারি ঠেকানোতো দূরের কথা বরং নিজেদের মধ্যে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে তুমুল মারামারি শুরু হয়ে গেল। খবর পেয়ে একদল চলে এলো লাঠি হাতে করে। শুরু হল ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। প্রায় ঘন্টা খানেক সময় জুড়ে চলল এই মারামারি। দুইজন মিলে ধরে পলাশের বাম পা লাঠি দিয়ে মেরে ভেঙে দিল। পলাশ মাটিতে শুয়ে কাতরাতে লাগল। অবস্থার ভয়াবহতা দেখে যে যার মত দৌড়ে পালিয়ে গেল। পলাশকে ধরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে শুরু করল মোহামেডানের বাকি সমর্থকদের মধ্যে। আবাহনীদের এর উচিত জবাব দেয়া লাগবেই।
পরদিন খেলা শেষে মোহামেডান হেরে যাওয়াতে বিষণ্ণ হয়ে এলাকার মাঠের এক কোনায় বসে রইল পারভেজ ও জিতু। ওদের দেখেই নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে এগিয়ে এলো শফিক সহ আরও কয়েকজন আবাহনীর সমর্থক। এমনিতেই মোহামেডানের হেরে যাওয়ার গ্লানি তার উপর গতকালের ঘটনার প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল। সে আগুন যেন রূপ নিল ভয়ংকর অগ্ন্যূৎপাতে। ওরা শফিকদের সেই অপমান মুখ বুঝে সহ্য করে চলে এলো সেখান থেকে। শফিকরা তাতে করে আরও মজা পেয়ে গেল। ওদের এই চলে যাওয়া নিয়ে উপহাস করতে থাকল। মাঠের পাশেই একটা সেলুন ছিল। সেলুন থেকে জিতু একটা ক্ষুর হাতে করে দৌড়ে শফিকের পেট বরাবর চিড়ে দিল। ভয়াবহ এক দৃশ্য। জিতু পালিয়ে গেল। শফিকের পেটে সেলাই দেয়া হলো। মাস খানেক ভোগার পর সে সুস্থ হয়ে উঠল। পলাশের পায়ের অবস্থা পুরোপুরি ঠিক হয়ে এলো। জিতুও খবর পেয়ে চলে এলো।
এরপর বহুবার মোহামেডান আর আবাহনীর মধ্যে খেলা হয়েছে। কিন্তু আর কখনও শফিক অথবা পলাশকে এই নিয়ে কোনরূপ তর্ক করতে দেখা যায়নি। তবে ওদের দুজনের মধ্যে এখন শুধু দেশের ফুটবল নিয়ে করুণা হয়। আর করুণা হয় যারা ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে তাদের নিয়ে। মাঝে মাঝে শফিক পলাশের কাঁধে হাত রেখে বাড়িতে বাড়িতে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকার ভিড়ে খুঁজে ফেরে আবাহনী কিংবা মোহামেডানের পতাকা। আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সিগারেটে একটা টান দিয়ে জিতু শফিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, দোস্ত চল বাংলাদেশ আজকে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে খেলবে। খেলাটা দেখা উচিত আমাদের।