প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ স্যার আপনি যেখানেই আছেন দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে তার রহমতের সবটুকু শান্তি যেন দান করেন ।
বাকের ভাইয়ে ফাঁসির পর বদি আর মজনুর শোকের ঘোর কাটতে অনেকটা সময় লেগে যায় । কিছুদিন পর বদি পাড়ি জমায় লন্ডন আর মজনু জড়িয়ে পরে নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে । র্যাবের তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসাবে নাম চলে আসে এবং ক্রসফায়ারে পরে মারা যায় মজনু । কয়েক বছর পর বদি দেশে ফিরে আসে। শুরু করে গার্মেন্টস ব্যাবসা । এখন সে দেশের একজন নামকরা শিল্পপতি । বিরাট অফিস নিয়েছে গুলশানে । বদির অফিসে এসেছে হিমু ।
আরে আপনি হিমু ভাই না ? জি আমি হিমালয় । আমি একটু বদি ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই । রিসিপ্সনে বসে থাকা মেয়েটি একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল যান স্যার ভিতরে আছে দেখা করে আসুন । আর জাওয়ার আগে আমার সাথে একটু দেখা করে যাবেন । আশ্চর্য মেয়েটিকে খুব চেনা চেনা লাগছে । কিন্তু কিছুতেই নাম মনে করতে পারছেনা হিমু । আমি কি আপনার নাম জানতে পারি। জি আমার নাম মিরা। এইবার হিমুর মনে পরেছে । মিরা আমিত আপনাদের বাড়িতে একবার গিয়েছিলাম । জি আমার মনে আছে আপনি হয়ত ভুলে গেছেন । ঠিক আছে আমি তাহলে যাবার আগে আপনার সাথে দেখা করে যাব ।
বদি ভাই কেমন আছেন ? ভালো না । স্রষ্টা বিহীন জীবন কেমন তা এবার বুঝতে পারছি । তুমি কেমন আছ ? বদি ভাই আমার একটা চাকরীর খুব দরকার । তুমি চাকরী করবে ! জি আমার খুব দরকার । এভাবে জীবন চলতে পারেনা । স্রষ্টা নাই কিন্তু আমার জীবন এভাবে চলতে পারেনা । আমার সংসার করতে মন চায় । আমি ঠিক করেছি একটা চাকরী পেলে রুপাকে বিয়ে করব । ঠিক আছে তুমি আমার সাথে পরে দেখা কর । আমি দেখি তোমার জন্য কি করতে পারি । যাবার আগে মিরার সাথে দেখা করল না । মেয়েটিকে এভাবে একটু কষ্ট দিয়ে হিমুর মনে খুব আনন্দ হল।
অনেক খোঁজা খুজির পর মিসির আলীর বাসা খুঁজে পেল বদি । এক প্যাকেট সিগারেট কিনেছে বদি মিসির আলীকে দিবে বলে । স্যার আপনার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট এনেছি । বদির দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল মিসির আলী । তুমি কি সিগারেট চিবিয়ে খাও নাকি বদি । জি আপনি কি করে বুঝলেন ? তোমার মুখে তামাক লেগে আছে । চিবিয়ে না খেলে তামাক লেগে থাকার কথা না । স্যার আমি খুব বিপদে আছি । আমাকে আপনার সাহায্য করতেই হবে । তোমার বিপদ আমার চেয়ে বড় নয় নিশ্চিত ! স্যার আপনার আবার কি বিপদ । যান আমার জীবনটা এক জায়গায় এসে থেমে গেছে । বয়স যেন আর বাড়ছে না । কিভাবে বাকি জীবন চলবে সেটা ঠিক করতে পারছিনা । মিসির আলী একটা সিগারেট ধরালেন । খুব আয়েশ করেই টানছেন আর ধোঁয়া যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে কোন বিষাদ ময় জীবনের প্রতিচ্ছবি আঁকছে । স্যার আমি তাহলে আজ যাই । পরে আসব বলেই বদি উঠে চলে এলো । মিসির আলী কোন কথা না বলেই আরেকটা সিগারেট ধরালেন ।
ময়ূরাক্ষী নদীর পাড়ে বসে আছে হিমু । আজ মনে হচ্ছে জীবনের শেষ সময়টা যদি এই ময়ূরাক্ষী নদীর পাড়ে কাটিয়ে দেয়া যেত তবে জীবনে আর কিছু চাইবার থাকত না । কিন্তু স্রষ্টা আমাকে সে পথ দেখিয়ে দিয়ে যায়নাই । খুব চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে মন । এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল । মাজেদা খালা ফোন দিচ্ছে । অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফোন ধরল হিমু । হিমু তুই কোথায় আছিস । বাড়িতে এক এলাহি কাণ্ড ঘটেছে । খালা তোমার সব কিছুতেই কি একটু বাড়াবাড়ি না করলে হয় না । বাজে কথা বলবি না । এখনি চলে আয় । মাজেদা খালার সাথে যে মেয়েটি বসে আছে তাকে দেখে হিমু অবাক হল । রুপা তুমি এখানে ! হ্যা তবে বলছি কি তোকে না বললাম আর তুই বলিস আমি খালি বাড়াবাড়ি করি । এই মেয়ে কি বলছে শোন । এই মেয়ের সাথে তোর নাকি অবৈধ সম্পর্ক আছে । এই মেয়ে নাকি তোর সন্তানের মা হতে চলেছে । তুই ওকে এখুনি বিয়ে করবি । আমি কাজী ডেকেছি । তোর খালু খুব খুসি হয়েছে। উনি তোর বিয়ার সব বাজার করে ফিরবে। রুপা মুচকি মুচকি হাসছে । হাসিতে রুপাকে মনে হল যেন এই মাত্র স্বর্গ থেকে হিমুর মা পৃথিবীতে নেমে এসেছে হিমুকে আদর করবে বলে। কিন্তু খালা আমিত এই বিয়ে করতে পারবনা । কি বলছিস তুই এসব। এই মেয়ের তাহলে কি হবে ? খালা আমি বিয়ে করব আর আমার স্রষ্টা থাকবেনা আমার বিয়েতে তা হয় না । এসব কি বলছিস । এখন তোর স্রষ্টাকে আবার পাব কোথায় ?
বদি আবার ফিরে এসেছে মিসির আলীর ঘরে । স্যার কি ঘুমিয়ে ছিলেন ? আর ঘুম! এস । স্যার আপনার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট এনেছি । তুমি আজকেও সিগারেট চিবিয়ে খেয়েছ । জি স্যার আমি এভাবেই সিগারেট খাই । তোমার কি যেন একটা বিপদের কথা বলছিলে। স্যার আজকে বলব । স্যার একটি সিগারেট খাই যদি বেয়াদবি না নেন । মিসির আলী চেয়ে দেখছে বদি পুরা সিগারেট চিবিয়ে খেয়ে ফেলল । স্যার আমার অফিসে একটা মেয়ে আছে নাম তার মিরা । মেয়েটিকে আমার খুব ভালো লাগে । কিন্তু আমি কিছুতেই মেয়েটিকে বলতে সাহস পাই না । বদি তুমি যে আমার কাছে এই প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে আসনি তা আমি বুঝতে পারছি । তোমার আসল সমস্যা অন্য জায়গায় । স্যার আমি কি আরেকটা সিগারেট খেতে পারি । নিশ্চয়ই চিবিয়ে খাবে? বদি মাথা নত করে বসে রইল ।
শুভ্র আর মিরার সংসারে ইদানিং কালে চলছে টানাপড়েন । মিরার চোখের পানিগুলো বলে দেয় শুভ্রকে মিরা কতটা ভালোবাসে । কিন্তু শুভ্রর হৃদয়ে মিরার প্রতি জন্ম নিয়েছে শুধু ঘৃণা । মিরা কিছুতেই বুঝতে পারেনা তার কি দোষ । আজকেও শুভ্র মদ খেয়ে বাড়ি ফিরেছে । বাড়ি ফিরেই চিৎকার করা শুরু করেছে । এই মিরা মিরা । চিৎকার করছ কেন ? আমি শুনতে পাচ্ছি । তা শুনতেই যখন পাও তখন বসে আছো কেন ? কাছে আসছনা কেন ? তোমার কাছে এসে কি লাভ । তুমিত আজকেও মদ খেয়ে এসেছ । তাতে তোমার সমস্যাটা কোথায় ? আমি মদ খাই আর ডাইল খাই তাতে তোমার কি এসে যায় ! তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও । গো টু হেল ইউ বিচ ! বলেই শুভ্র বিছানায় পরে গেল । পাশে বসে মিরা কাঁদছে আর স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আনমনে বলে উঠল শুভ্র আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি । তুমি কেন বুঝনা । সে কথা হয়ত শুভ্রের হৃদয়ে না বাজলেও প্রতিধ্বনি হয়ে বার বার ফিরে আসতে লাগল মিরার হৃদয়ে । ভালোবাসা এমনই হয় বুঝি ।
হিমু আর রুপা মুখ মুখি বসে আছে । মাজেদা খালা অনেকটা জোর করেই বসিয়ে দিয়ে গেছেন । হিমু একটা সিগারেট ধরিয়েছে । ইদানিং সিগারেট খেতে হিমুর খুব তৃপ্তি লাগে । মনে হয় হিমালয়ের মত বিশালতার গৌরবময় চুড়ায় পৌঁছে গেছে সে । রুপা তোমার পেটে যে বাচ্চা এসেছে তার বয়স কত মাস হল । মানে কি? মানেটা খুব সহজ তুমি এখন কত মাসের পোয়াতি ? এসব কি ভাসা হয়েছে হিমু তোমার । আমার মত এমন জঘন্য লোকের মুখের ভাষা এমনটা হবে এটাই স্বাভাবিক রুপা। আচ্ছা তুমি কি জানতে পেরেছ বাচ্চাটা ছেলে নাকি মেয়ে হবে । আমার একটা মেয়ে বাচ্চার খুব সখ । মেয়ে হলে আমি ওকে বানাব মহিলা হিমু । কারন আমার স্রষ্টা এই খানে একটা বড় রকমের ভুল করে গেছেন । জগতে যেমন পুরুষ হিমুদের দরকার তেমনি দরকার মহিলা হিমু । বেগম রোকেয়া বলে গেছেন জগতে যা কিছু তার অর্ধেক নাকি করেছে পুরুষ আর বাকি অর্ধেক করেছে মহিলারা। মহিলারা হল পুরুষের অর্ধাঙ্গ। তাহলে দেখ একজন মহিলা হিমুর কত গুরুত্ত । তুমি থামবে হিমু । শুধু বল তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে ?
আমি তোমার বিহনে কান পেতে রই
তুমি আসবে বলে আমি পথ হারা হই
জান রুপা আজ যদি আমার স্রষ্টা বেঁচে থাকতেন তবে খুব সুন্দর একটা সমাধান করে দিতেন তোমার আমার বিয়ে নিয়ে ।
রুপা যেন কিছু বলতে যেও বলতে পারলনা । শুধু একটা চাপা কান্না এসে ভর করল বুকের ভিতর ।
স্যার আমার কিছু দিন ছুটি লাগবে । কেন মিরা কোথায় যাবে? তুমি ছাড়া অফিস চলবে কি করে ? ছুটি না নিলে কি হয় না ? স্যার আমার হাসবেন্দ খুব অসুস্থ্য ওকে দেখা শোনা করার আমি ছাড়া আর কেউ নাই । ঠিক আছে ছুটি নাও । আর একটা কাজ কর হিমুকে একবার অফিসে আসতে বলে দাও । বেচারার একটা চাকরী দরকার দেখি ওকে একটা চাকরী দেয়া যায় কিনা । মিরার চোখে হাসি ফুটে উঠল। স্যার উনাকে কি আমাদের অফিসেই চাকরী দেবেন ? দেখি আগে ওকে আসতে বলে দাও । আর শোন তোমার হাসবেন্দের জন্য আমি বিশ হাজার টাকা দিয়ে দিচ্ছি । এটা দিয়ে উনার চিকিৎসা করাও । স্যার লাগবে না । আমি বলছি টাকাটা নাও তোমার লাগবে । স্যার লাগবেনা আমার কাছে আছে। তোমার কাছে যতই থাকুক আমি দিচ্ছি তুমি এটা নাও ।
হিমু ভাই বলছেন ? আরে মিরা কেমন আছেন ? আপনি আমাকে চিনলেন কি করে ? কারন খুব সহজ আপনি বদি সাহেবের অফিসের নাম্বার থেকে কল করেছেন। আর আমি জানতাম আপনি আমাকে কল করবেন। কিন্তু মিরা এই মুহূর্তে আমি আসতে পারবনা । আমি সপ্তাহ খানেক পর এসে বদি সাহেবের সাথে দেখা করে যাব । আর আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি । আপনাকে আমার বিয়ের দাওয়াত দিব বদি সাহেব কেও বলব আসার জন্য । সেট খুবি খুসির খবর হিমু ভাই আপনার জন্য আরও একটা খুসির খবর আছে । আমি জানি বদি সাহেব আমার জন্য একটা চাকরীর ব্যাবস্থা করেছেন । হিমু ভাই আমি খুব সমস্যার মধ্যে আছি । আপনার সাথে দেখা করতে চাই । কিন্তু আপনার যেহেতু বিয়ে তাহলে আমি পরেই দেখা করি । ঠিক আছে মিরা তাহলে ফোনটা এখন রাখি আমি এই মুহূর্তে আমার বিয়ে নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত তাই আর কথা বলতে পারছিনা ।
( চলবে ------------ )
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৯