আজ বাংলাদেশ জিতলে কি সেটিকে আপসেট বলা হবে?
কেন, আপসেট হবে কেন? আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯। হ্যাঁ, রেটিং পয়েন্টের পার্থক্যটা দশমিকে। তার পরও বাংলাদেশ তো ওপরে।
কোনো ম্যাচের ফেবারিট নির্ধারণে আরেকটি পথ আছে। দুই দলের সর্বশেষ কটি ম্যাচের ফলাফলে চোখ বোলানো। সর্বশেষ ৩টি ওয়ানডে বলছে—বাংলাদেশ ৩: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ০। তাহলে তো বাংলাদেশই আজ ফেবারিট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলে সেটিকেই বলা উচিত আপসেট।
এই হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকিটা আপনারও জানা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ৩টি ওয়ানডেতেই বাংলাদেশ জিতেছে বটে, তবে সেটি কোন ওয়েস্ট ইন্ডিজ? আজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রত্যাশার ম্যাচটির আগে প্রত্যাশাভঙ্গের হুমকি হয়ে যে কটি নাম বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে, সেটি আগে দেখে নিলে হয়—
ক্রিস গেইল—জ্যামাইকান বাঁহাতিকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি ফেরাতে হবে। যেকোনো বোলিং আক্রমণ ধ্বংস করে দেওয়াটা তাঁর কাছে ডালভাত।
শিবনারায়ণ চন্দরপল—প্রায় দেড় যুগ ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডল-অর্ডারের স্তম্ভ হয়ে থাকা গায়ানিজ বাঁহাতিকে উইকেটে জমতে দেওয়া যাবে না। ধরে খেলতে জানেন, আবার ৬০-৭০ বলে সেঞ্চুরিও করতে জানেন।
রামনরেশ সারওয়ান—আট বছর আগে বাংলাদেশেই অনেক সাধনার ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। নীরবে রান করে ফেলেন।
কাইরন পোলার্ড—টি-টোয়েন্টি যুগের প্রতীক। গায়ে অসুরের শক্তি। ছক্কা মারা ছেলেখেলা। উইকেটে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না।
কেমার রোচ—দেখতে ছোটখাটো বারবাডিয়ান গতিতে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলিংয়ের স্বর্ণযুগকে। ওর ১০ ওভার একটু সমঝে খেলাই ভালো।
ক্রিকেট বিস্ময় উপহার দিতে ভালোবাসে। এর বাইরেও কেউ তাই আজ দাঁড়িয়ে যেতে পারেন পথের কাঁটা হয়ে। তবে ম্যাচ শুরুর আগে ‘শত্রু-তালিকায়’ মূলত এই পাঁচজনই এবং এঁদের মধ্যে মাত্র একজনই ছিলেন ২০০৯ সালের সেই সিরিজে। যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে এসেছিল। তিনি কেমার রোচ। কোটলার স্লো-লো উইকেটেও হ্যাটট্রিক করার পর যাঁকে বলা যায় আত্মবিশ্বাসের প্রতিমূর্তি—‘ফাস্ট বোলারের জন্য উইকেট কোনো ব্যাপার নয়।’
বছর দেড়েক আগে বাংলাদেশ যখন রোচকে খেলেছে, তখনো ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগেই আসত তাঁর বল। রোচ উইকেট পেয়েছেন, মারও খেয়েছেন। সেই স্মৃতি মনে রেখেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রোচকে নিয়ে ভাবলেও ঘাবড়ানোর কিছু দেখছে না। রোচ জোরে বল করে তাতে কী, অনেক বাজে বলও দেয়।
চন্দরপল-সারওয়ান সমীহ জাগানো ব্যাটসম্যান, তবে ভীতিকর কখনোই নয়। তা হলে বাদ থাকল কে? জনাব ক্রিস গেইল ও কাইরন পোলার্ড। গেইল কাল প্র্যাকটিসে এলেন না। কারণটা সঠিক জানা গেল না। হয় পেটে সমস্যা অথবা ঠান্ডা লেগেছে। কারও অসুস্থতা কামনা করাটা ঠিক ভদ্রসমাজের রীতি নয়। তবে বিশ্বের সব বোলারই সম্ভবত মনে মনে গেইলের অসুস্থতা কামনা করেন এবং সে জন্য কেউ তাঁদের দোষও দেয় না। ভদ্রতা তো দ্বিপাক্ষিক হতে হয়, তাই না!
গেইলের অনুপস্থিতি অবশ্য শফিউল-রাজ্জাকদের জন্য সুখবর হয়ে আসছে না। এমনিতেও ম্যাচের আগের দিন সেভাবে প্র্যাকটিস করেন না। গত পরশুও নেট করেননি। একাডেমি মাঠের মাঝ উইকেটে থ্রো ডাউনে ধুমধাম মেরেছেন। গেইল খেলবেন বলেই খবর।
পোলার্ড এই বিশ্বকাপের জন্য নিজের নাম লেখা বিশেষ ব্যাট বানিয়েছেন। এখানে তামিমের সঙ্গে তাঁর মিল। আসল মিল অবশ্য গেইলের সঙ্গে। দুজনই বাঁহাতি, দুজনই ওপেনার। দুজনই বলকে মারার বস্তু ছাড়া আর কিছু ভাবেন না। গেইল অনুশীলনে না আসায় ফিসফাস উঠল। তামিম নেটে ব্যাটিং করার পরও। আয়ারল্যান্ডের ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় হাতে যে চোট পেয়েছিলেন, সেই ব্যথা এখনো যায়নি। শাহরিয়ার নাফীসকে নাকি তৈরিও থাকতে বলা হয়েছে। আজ সকালে তামিমের অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত।
‘প্রার্থনারত বাংলাদেশ’ লাইনে যে মুঠোফোন কোম্পানি বিশ্বকাপ প্রচারণা চালাচ্ছে, তারা চাইলে এখন প্রার্থনার বিষয়ও ঠিক করে দিতে পারে। তামিম ইকবাল যেন খেলতে পারেন এবং হাতের ব্যথাটা যেন ব্যাটে ঝড় তোলায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
তামিমের ঝোড়ো শুরু যে এই ম্যাচেও বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের পূর্বশর্ত। এর পর কোনটিকে রাখবেন? রাজ্জাকের ঘূর্ণিজাদু? সাকিবের আরেকটি অলরাউন্ড নৈপুণ্য? আশরাফুলের আশরাফুলে ফেরা?
জয়ের মালা গাঁথতে অনেককেই লাগবে। কেউ দেবে ফুল, কেউ বা সুতা। তবে গেইল-পোলার্ডদের আটকাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র মনে হচ্ছে দুটি। এর একটি জড়পদার্থ, অন্যটিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস। প্রথমটি মিরপুরের উইকেট, দ্বিতীয়টি মিরপুরের দর্শক।
গেইলরা যেকোনো উইকেটেই পারেন। তবে স্লো-লো উইকেটে অত সহজে পারেন না। সেই উইকেট থাকবে। থাকবে সেই দর্শকেরাও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের বীরত্বের পর বিদেশি সাংবাদিকদের সবাইকে একটা ব্যাপারে একমত দেখা যাচ্ছে—সেদিন আয়ারল্যান্ডকে আসলে হারিয়েছে গ্যালারি থেকে ওঠা বাঘের গর্জন।
প্রিয় দর্শক, আজও আদা-টাদা খেয়ে আসছেন তো!