শুরুতেই ফাইবার অপটিক্স নিয়ে দু লাইন কথা বলে নিই।
ফাইবার অপটিক্স: এই কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগের কাজ চলত। দেরিতে হলেও এখন আমরা এই সংযোগের জন্য ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উপর নির্ভর করি। অপটিক্যাল ফাইবারে অতি স্বচ্ছ যা সাধারণ কাঁচের তুলনায় দশ হাজার গুণ স্বচ্ছ কাচ ব্যবহার করা হয় এবং এর ফলে আলোক শক্তি রূপে তথ্য অনেক দ্রুততার সাথে প্রেরণ করা যায়, শোষিত হয় না। সেকেন্ডে দশ বিলিয়ন বার অন-অফ মোডে রেখে লেজার রশ্মির মাধ্যমে ফাইবার অপটিক্সে তথ্য প্রেরণ করা হয়। ফলে তথ্য আদান প্রদান হয় অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে। একটি অপটিক্যাল ফাইবার লাখ খানেক ভিস্যাট থেকেও বেশি ক্ষমতায় তথ্য আদান প্রদান করে।
গত ৬ই জুন সিঙ্গাপুরের অদূরে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমাদের দেশে ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি কমে যায়। বিটিসিএল থেকে জানানো হয়েছিল, ১৭ই জুলাই মধ্যরাতে এই ক্ষতিগ্রস্ত সংযোগটি মেরামত করা হবে ফলে ১৭ই জুলাই মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এই ৪ ঘণ্টা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে না। ইন্টারনেট সেবা দাতা সংগঠন ইসপাব’র সভাপতি সেসময় জানিয়েছিলেন, এ সময় ভিস্যাটের মাধ্যমে জরুরী সেবা দেয়া যেতে পারে।
এ নিয়ে ব্লগ, ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে বেশ উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। কেউ কেউ যারা ইন্টারনেটের উপর অনেক নির্ভরশীল তাঁরা তাঁদের ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। অনেকে জানিয়েছিলেন, এই সময়ে তাঁরা কে কি করবেন। অনেকেই বলেছিলেন তারা ঐ সময়টিতে গেমস খেলবেন। আবার ইন্টারনেটে আসক্ত কেউ কেউ এ সময় মুভি ও গেমস খেলার কথাও জানিয়েছিলেন। কেউ কেউ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার ঘটনায় তাদের ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন।
কার্যত ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল রাত ঠিক ১টা ১০ মিনিটের পরই পুরোপুরি ইন্টারনেট সংযোগ চলে যায় এবং ৩টা ২০ মিনিটের এর পর পরই পুরো দমে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়।
আবারও বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে পহেলা আগস্ট মধ্যরাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এই কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মধ্যবর্তী অংশে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের রাউটার পরিবর্তন করা হবে। যার ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।
কার্যত ক্ষেত্রে দেখা যায় রাত ১টা ৩০ মিনিটের পর ইন্টারনেট সংযোগ চলে যায় এবং ২টা ৩০ মিনিটের পর পরই পুরো দমে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়।
বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই একাধিক সাবমেরিন কেবল ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে একাধিক সাবমেরিন কেবল ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোন বিকল্প সাবমেরিন কেবল ব্যবস্থা নেই। যার ফলে আমাদের একটি সাবমেরিন কেবলের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। বহুদিন থেকে বিকল্প সাবমেরিন কেবল ব্যবস্থা তৈরির কথা থাকলেও এ পর্যন্ত এ ধরণের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার অর্থই হচ্ছে সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। যা এ যুগে আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে কল্পনাই করা যায় না। তাই অতিদ্রুত বিকল্প সাবমেরিন কেবল ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশকে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের আওতায় রাখা হোক। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হোক।
আরিফ হোসেন সাঈদ, ১লা আগস্ট, ২০১২
১৭ই জুলাই মধ্যরাতের বিচ্ছিন্ন সংযোগের গল্প পড়ুন এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:৪২