যাত্রাবাড়ীর জ্যামের খবর তো সবাই জানেন। এই জ্যাম থেকে বাঁচতেই চারজন মিলে ঢাকায় আসার রুট পরিবর্তন করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম ট্রেনে করে ঢাকা আসব। বাসে করে নারায়ণগঞ্জের কালিবাজার পর্যন্ত গেলাম। সেখানে থেকে দু'পা হেটেই নারায়ণগঞ্জ বেল স্টেশন। স্টেশনটি ছিমছাম গোছানো। কিন্তু মানুষজনের ঢল নেমেছে। এর ঐ একটিই কারণ প্রথমত পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রেন চলাচল না করায় দ্বিতীয়ত রাস্তার জ্যাম ও অন্যান্য ভোগান্তি থেকে বাচার আশায় অনেকেই এই ট্রেন বেছে নেন। অপেক্ষার শুরু। মানুষজন বাড়ছে। এক সময় ট্রেন এলো। কিন্তু ট্রেনে উঠবো কি করে ট্রেন তো মানুষে ঠেসে আছে। কিন্তু জাদুর মতো সব মানুষই ট্রেনে উঠে গেল। প্রথমে ভাবলাম উঠবো না কিন্তু জানা গেল এভাবেই যেতে হবে। নারায়ণগঞ্জ বেল স্টেশন থেকে ছাড়ার পর কামড়াগুলোতে পা ফেলারও জায়গা নেই। তাঁর উপর বাচ্চাকাচ্চা, অসংখ্য মেয়েরাও উঠেছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাদেরও দাঁড়াবার এতটুকু জায়গা নেই। আমরা চারজন টিকিট কেটে উঠে বোকা হয়ে গেলাম যাদের জিজ্ঞেস করি কেউই টিকিট কাটেনি। চাষারা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ বেল স্টেশন থেকে পায়ে হেটে চাষাড়া যেতে সময় লাগে ঘড়ি ধরে ৩-৫ মিনিট। কিন্তু অনেকেই উঠেছেন তাদের গন্তব্য চাষাড়া। দাঁড়াবার জায়গা তো ছিলই না এখন পা রাখারও জায়গা নেই। একজন আমার পায়ের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর পায়ের উপরও নাকি অন্য একজন দাঁড়িয়ে আছেন। আমার বলার কিছু ছিল না। চাষাড়া আসতেই চোখে সরষে ফুল দেখতে পেলাম। সকলেরই টেনে টেনে নিশ্বাস নেওয়ার অবস্থা। তাও ট্রেনে করেই যাবেন। বাকি লোকগুলো গিয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রত্যেকের সিটের সামনে পা ফেলার জায়গায়। অসংখ্য মানুষ গেটের শিকগুলোতে বিপদজনক ভাবে ঝুলে রয়েছেন। এরই মধ্যে একজন অভিযোগ করলেন তিনি পা রাখতে পারছেন না। ট্রেনের সবাই এক সুরে তাকে বললেন পা'গুলো তুলে মাথায় রাখুন আর কোন ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আর নয় পরের স্টেশনেই নেমে যাব। খুব ছোট বেলায় ট্রেনে চড়েছিলাম। স্মৃতি ঝাপসা হয়ে এসেছে। গতানুগতিক পথ ছেড়ে ট্রেন বেছে নেয়াটাও এর একটা কারণ ছিল। ভেবেছিলাম ট্রেনে একবার চড়ে দেখি না। সেই চড়ায়ই এই ভোগান্তি।
শেষে পরের স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম। নেমে দেখি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনটিরও একই অবস্থা। গেট ছাড়িয়ে গেছে মানুষে (শেষের ছবিটি দেখুন)।
আরিফ হোসেন সাঈদ, ১২ই জুলাই, ২০১২