বিশ্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ। বিদেশী সৈন্যের ভয়ে এদেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার যেমন ভীত তেমনি সরকারের উদাসীনতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সূচক ক্রমেই উপরের দিকে উঠছে। এদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কনীয় একটি অধ্যায় ‘সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন’। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাস দেখলে আমাদের আঁতকে উঠতে হয়। তারচেয়েও আতঙ্কের বিষয় গত ১০ বছরে ঘটে যাওয়া একটি সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনেরও বিচার হয়নি। কোন এক অজানা কারণে এদেশের সরকার সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে বিচারযোগ্য মনে করেন না। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনীর হাতেও প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা, সরকার নির্বিকার।
সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতা ও ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এদেশের সাধারণ মানুষ। এবং এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এছাড়া ব্যাপক আন্দোলন ও প্রতিবাদের মধ্যেও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের এক জরিপে দেখা যায় ২০১২ সালের শুধুমাত্র মে মাসেই ১৬ জন সাংবাদিক সরাসরি হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে বাংলা ভাষার ব্লগাররা এখন রাজপথে অবস্থান করছেন। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের ডাকা সকল আন্দোলন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলা ভাষার ব্লগাররা। এমনকি তারা এককভাবেও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইতিহাসের প্রথম বাংলা ভাষার ব্লগারদের রাজপথে প্রতিবাদ আন্দোলনটিও শুরু হয় সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রতিবাদের মাধ্যমেই বাংলা ভাষাভাষী ব্লগাররা অনলাইন দুনিয়া ছেড়ে রাজপথে নেমে আসেন। বাংলাভাষার এই তরুণ ব্লগাররা এই আন্দোলন প্রতিবাদ করতে গিয়ে সরকার ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়েছেন বহুবার।
গত ৮ই এপ্রিল ২০১২, বাংলাভাষার ব্লগাররা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে প্রথম রাজপথে নামেন। সেদিন ব্লগাররা প্রশাসনের রক্ত চক্ষুকে পাশ কাটিয়ে রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। তাদের বহন করা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডগুলোতে সাংবাদিক হত্যা ও বিচারের কথা বলছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০শে এপ্রিল ২০১২, ব্লগাররা দ্বিতীয়বারের মতো সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে রাজপথে নামেন। তারা প্রতিবাদী চিত্র লিপি ও চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এভাবে তারা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের বিপুল সমর্থন লাভ করেন।
গত ২৭শে এপ্রিল ২০১২, বাংলাভাষার ব্লগাররা সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী রোড পেইন্টিংয়ের আয়োজন করেন।
গত ১১ই মে ২০১২, ব্লগাররা সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রতিবাদী পথ সঙ্গীতের আয়োজন করতে যেয়ে সরকার ও প্রশাসনের বাঁধা ও হুমকির মুখে পড়েন। কিন্তু প্রশাসনের বাঁধাকে পাশ কাটিয়ে ব্লগাররা পথ সঙ্গীত ও প্রতিবাদী মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।
গত ৮ই জুন সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আবারো রাজপথে নামেন বাংলাভাষার ব্লগাররা। এবার তারা প্রতিবাদী চিত্র লিপি ও চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানান।
এছাড়াও ব্লগারদের মূল বিচরণ ক্ষেত্র অনলাইন দুনিয়ায় বিভিন্নভাবে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বাংলাভাষার ব্লগাররা ব্লগ বিরতি পালন করেন। ব্লগারদের এ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ব্লগার আবু সুফিয়ান জানান, “আমরা মৌসুমি প্রতিবাদী নই। আমরা যতদিন সাংবাদিক হত্যা বন্ধ না করতে পারব যতদিন সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ না হচ্ছে ততদিন ন্যায় বিচারের দাবিতে ব্লগারদের এ আন্দোলন চলবে।”
ব্লগারদের এ আন্দোলনের পথে মূল অন্তরায় কি, এমন প্রশ্নে ব্লগার সোহেল মাহমুদ বলেন, “আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে যেয়ে বহুবার পুলিশ প্রশাসনের বাঁধার মুখে পড়েছি।”
ব্লগারদের আন্দোলনের সকল খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে বিডিনিউজ ব্লগে। ব্লগার আইরিন সুলতানা ও ব্লগার আবু সুফিয়ান নিয়মিত এ আন্দোলন সম্পর্কে লিখে যাচ্ছেন।
এছাড়া সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক নির্যাতন, বিডিনিউজ কার্যালয়ে হামলা সহ সাংবাদিকদের সকল প্রতিবাদ কর্মসূচি ও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন বাংলা ভাষার ব্লগাররা।
এই লেখাটি ১৪ই জুন ২০১২, ফেসবুক'এ 'সাগর-রুনি'র হত্যাকারীদের বিচার চাই ' পাতায় প্রকাশিত হয়েছে।
আরিফ হোসেন সাঈদ, ১২ই জুন ২০১২