সাত সকালেই ফোন।এই তুমি কই????
-আমি, আমি তো ঘুমাই।
-এখনও ঘুমাও!!!!তোমার না আজ আব্বুর সাথে দেখা করার কথা!!
-সেটা তো দুপুরে,এখন ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছো কেন??
-এখন ১১ টা বাজে।
-১১ টা!!!!ও আচ্ছা,ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে ফোন দিচ্ছি।
আজ আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ভাইবা পরীক্ষা ছিল।ওর(বুঝতেই পারছেন, কে?) আব্বুর কাছে আমাকে নিয়ে যাবে।ওর বাবা আমাকে দেখবেন,কি করি,বাসা কোথায়,আব্বু কি করেন এই সব জিজ্ঞাসা করবেন।(কলির কাল চইলা আসল!!!আগে দেখতাম মেয়ে দেখা হয়,আর এখন ছেলে দেখা )!!
আমি অনেক বার অনেক আজুহাত দেখাইছি যে আমি এখনও ছাত্র,কোন ইঙ্কাম নাই,ভাইয়াই এখনও বিয়ে করেন নাই......ইত্যাদি,ইত্তাদি।তার উত্তর,”আমিও এখন বিয়ে করতে চাইনা।কিন্তু বাসা থেকে যাতে কোন প্রেসার না আসে তাই এ ব্যবস্থা।আমি একমাত্র মেয়ে।আব্বু আম্মু কে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করা সম্ভব না।এখন তুমি আমাকে চাও নাকি আব্বুর সাথে দেখা না করে থাকতে চাও?!(পুরাই ইমোশনাল অত্যাচার) আর তুমি এত টেনশন করছ কেন?আমি তোমার সম্পর্কে সব বলেছি।আব্বু জাস্ট তোমাকে দেখতে চেয়েছেন,অন্য কিছুই না।“তাই আজকের এই আয়োজন
রেডি হয়ে ফোন দিলাম—
-জান, আমি রেডি।
-ভালো।কি ড্রেস পড়েছ???
-জিন্স,টিশার্ট।
-এই তোমার মাথায় কি কিছু নাই?আব্বুর সামনে টিশার্ট পড়ে যাবা?
-তো কি করব এখন??স্যুট-টাই পড়ব নাকি?!!!
-এটলিস্ট পাঞ্জাবী তো পড়তে পার।
ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে নিজেকেই নিজে গালি দিতে লাগলাম।কি দরকার ছিল প্রেম করার?একা ছিলাম সেই তো ভালো ছিলাম।
উনি আসলেন,আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।তারপর তার আর কথাবার্তা নিন্মরুপ-
-আমি কি বলব তোমার আব্বুকে?!
-যা জিজ্ঞেস করবে তার উত্তর দিবা।আগবাড়িয়ে কিছু বলতে যাবা না।আর প্লীজ আল্লাহর দোহাই লাগে এই সময় টা একটু শান্ত থাকার চেষ্টা করবা।
-আমি তো শান্তই
-আমি জানি তুমি কেমন শান্ত।আর তোমার সেন্স অব হিউমার টা একটু কন্ট্রোলে রাখবা।তুমি হয়ত মজা করে কিছু বলবা কিন্তু মুরুব্বিরা সেটা বেয়াদবি মনে করতে পারে।
-ব্যাপার টা কেমন না!পরে যদি তোমাকে বলে,কি একটা ছেলে পছন্দ করছিস,পুরা ভুদাই,সাত চড়ে নরে না টাইপ।
এই কথা বলার পর আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যে আমি যদি ওর দিকে আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতাম তাহলে ভস্ম হয়ে যেতাম।অনেক্ষন চুপ থাকার পরে বলল,কি ব্যাপার কথা বলছনা কেন???
আমি বললাম,”চুপ থাকার প্রাকটিস করছি”(আবার ও সেই অগ্নি দৃষ্টি,এখানে আমার কোন কথাটা ভুল ছিল আমি নিজেই বুঝলাম না......কথা বললেও প্রবলেম না বললেও প্রব্লেম।শালার পুরাই আবুল হয়া গেলাম)।!!!
ঠিক হল যে আমি ওর আব্বুর অফিসে গিয়ে দেখা করব।ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার দুই বন্ধুকে ফোন দিলাম।(সাহস বাড়ানোর জন্য)।ওরা আসলে,আমি ওদের কে পুরা ঘটনা বললাম।একজন বলল,”যাও মামা,কুরবানির হাটে উঠস,ক্রেতা রা যাচাই বাচাই করব।এটাই স্বাভাবিক,ভয় পায়োনা।“ আরেক জন আরেক কাঠি সরেস সে একটা ফুলের মালা ও কোত্থেকে যেন যোগার করে ফেলেছে!!!
যাইহোক,ওর আব্বুর প্রশ্নের ধরন কি হতে পারে আর আমার কিভাবে উত্তর দেয়া লাগবে তাই নিয়ে আলোচনা করছি একটা চায়ের দোকানে।এক ফ্রেন্ড সিগারেট দিল।টেনশনের সময় নাকি ইহা অত্যন্ত কার্যকর।এমন সময় তার ফোন,
-কই তুমি???
-এইতো তোমার আব্বুর অফিসের পাশেই।
-শোনো,আব্বু বলেছে এক সাথে লাঞ্চ করবে।আমিও আসছি।
(আমার বুকে একটু সাহসের সঞ্চার হল।এইরকম একটা ভাইবা পরীক্ষায় পরিচিত একজন থাকা ভালো)।বললাম কোন রেস্টুরেন্ট এ ???
তারপর যে নামটা শুনলাম,শোনার পর আমি নাই হয়ে গেলাম।ওই রেস্টুরেন্টের লোক জন আমার পরিচিত।!!!!এইটার মালিক ও আমার আব্বুর পরিচিত
এখন এই (রেস্টুরেন্টের)ব্যাপারে কথা বলা অর্থহীন।তাই বললাম আমি আসছি।
তারপর সেই মহেন্দ্রখন।এই জীবনে যত দোয়া কালাম পড়ছি তার সব পইড়া,বুকে ফু দিয়া ঢুকলাম ভিতরে।আমি ওকে দেখলাম,ওই টেবিলের দিকে গেলাম।কাছাকাছি যাওয়ার পর ও উঠে পরিচয় করিয়ে দিতে নিল----
-আব্বু ওর নাম হল আ.........
আমি সালাম দিতে নিলাম,কিন্তু পুরা সালাম দিতে পারলাম না-
আস-সালামু-আলা.....................এতটুকু বইলাই পৈটা,খিচ্চা দৌড়।এক দৌড়ে হোস্টেলে।
কি চিন্তা করছেন???কেন দৌড় দিলাম।আর শুইনা কি হইব??যা হওয়ার তাতো হইয়াই গেসে।
আমরা ফ্রেন্ড রা যেখানে চা,সিগারেট খাচ্ছিলাম সেখানে ওই ভদ্রলোক ও ছিল!!!!
আমার এক ফ্রেন্ড আবার ওনার কাছ থেকেই আগুন নিয়া সিগারেট ধরাইসিল(যারা সিগারেট খান,তারা সবাই জানেন,চায়ের দোকানে বা এরকম জায়গায় একজন আরেক জনের কাছ থেকে সিগারেট নিয়া আগুন ধরানো টা দোষনীয় কিছু না তা সে যত মুরুব্বি ই হোক না কেন।সিগারেট খোররা ওই জায়গায় সবাই কে একই বয়সী মনে করে)।
তারপর টানা ২ ঘণ্টা মোবাইল ক্লোজ।নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিলাম,ওর আব্বু হয়ত ওকে কিছু বলে নাই,আমি আজাইরাই টেনশন করছি।
পাক্কা ২ঘন্টা পর ফোন খুললাম।সাথে সাথে ই কল আসল।আমি হ্যালো বলার পর ওই প্রান্ত থেকে ১ম কথা ছিল
-তুমি নাকি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ??
(মনে মনে বললাম,এই কারনেই মুন তার ফাতেমা গানের মধ্যে বলেছে”আপনি কোন শ্বশুরের জাত না”)।
আমি-না, মানে খুব বেশি টেনশন এ পরলে খাই।
-তাই বলে,আমার আব্বুর সামনে?
-আমি কিভাবে বুঝব ওই ভদ্রলোক তোমার বাবা।তোমার চুল হাঁটু পর্যন্ত আর ওনার মাথায় স্টেডিয়াম,সে কিভাবে তোমার বাবা হয়??!!!
-কি সব আবোল তাবোল বলছ?কিভাবে আমার বাবা হয় মানে??আর স্টেডিয়াম মানে কি?
-মানে গড়ের মাঠ।
-সেটা আবার কি????
-মানে ছাদে মাল নাই(ওই লোকের উপর মেজাজ তখন পুরাই বিলা)।
-কি বলতে চাও ক্লিয়ার করো।
-মাথায় চুল নাই সেটাই বলছিলাম আর কি!!
-আমার আব্বুর মাথা স্টেডিয়াম, গড়ের মাঠ।তুমি কালকে ঠিক ৮টায় ম্যাসকটের সামনে থাকবা।কথা আছে।যদি ১ মিনিট ও দেরি হয় তাহলে তোমার খবর আছে।মনে থাকে যেন, ঠিক ৮ টা।
আল্লাহ ই জানে কপালে কি খারাবি আছে??!!!!!