somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তন্দ্রা

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল ৭.৩০ মি। জমির উদ্দিন সাহেবের ঘুম ভাঙল। সকাল সাড়ে আট টার মধ্যে রওনা দেন অফিসে। এই সময়ের কিছুটা হেরফের হলে উনার সারা দিন অনেক বাজে ভাবে কাটে। গত রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে রাত ৩.৪৫ এর দিকে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। তাই সকালে ঘুম ভাঙতে আজ অনেক কষ্ট হল। হাজার কষ্ট হলেও উনি এক রুটিনের মানুষ। আজ প্রায় ৩৫ বছর চাকরি করছেন। চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ইচ্ছা করলে দেরিতে যেতে পারেন। কিন্তু নিয়মের হেরফের জমির উদ্দিনের ধাতে নেই।
জুন মাস সবে শুরু হয়েছে। তাই বর্ষা তার আগমনি বার্তা জানাবার জন্য প্রায় প্রতি সকালেই বারি ধারা বর্ষে যাচ্ছে। আজও নেমেছে ঝুম বৃষ্টি। গত সপ্তাহ ধরে এমনটা হচ্ছে। সময় করে অফিসে বেরুনোর সময় ই বৃষ্টির তোড় আরও বেড়ে যায়। এটা নিয়ে জমির সাহেবের কোন অভিযোগ নেই। যত অভিযোগ মনিরা বেগমের। আজ ৪০ বছরের দাম্পত্ত জীবনে এমন কোন দিন পাওয়া যাবে না যেদিন সকালে মনিরা বেগম ঝগড়া না করে জমির উদ্দিন সাহেব কে অফিসে যেতে দিয়েছেন। ঝগড়া বললে ভুল হবে। কারন জমির উদ্দিন কোন প্রত্যুত্তর করেন না। যা বকবক করার মনিরা বেগম ই করে যান। এক পক্ষ যুদ্ধ।

জমির উদ্দিন রাস্তায় নামলেন। রাস্তায় নেমে কিছুদূর যেতেই তার শু’র ভেতোর পানি ঢুকে গেল। এখন প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে তার। তবুও তিনি হেঁটে চললেন। ইচ্ছা ছিল বাসার সামনের মেইন রোডে এসে রিকসা নেবেন। কিন্তু আজ যে হারে বৃষ্টি নেমেছে ! তাতে রিক্সাওলাদের পাওয়া আর মঙ্গল গ্রহে পানি পাওয়া একই কথা। পায়ে হেঁটে গেলে বাস স্ট্যান্ড ১০ মিনিটের পথ। কিন্তু যে হারে বৃষ্টি তাতে না হেঁটে উপায় নাই। কারন রিক্সা পাওয়া যাবে না। কাদা পানি উপেক্ষা করে জমির উদ্দিন হেঁটে চলেছেন। রাস্তা দিয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে। তার জুতার ভেতোর আরও কিছু পানি ঢুকে গেল। উনি হাঁটছেন আর খল খল আওয়াজ হচ্ছে। অন্য রকম অনুভুতি।

হাঁটার অবসান হল। উনি বাস স্ট্যান্ডে চলে এসেছেন। একটা বাস ছেড়ে দেবে দেবে করছে। উনি প্রায় দৌড়ে বাসটার কাছে পৌঁছে গেলেন। হাতে ব্যাগ আর ছাতা বাসের হাতল ধরতে পারলেন না। হেল্পার তাকে ধরে তুলল। বাসের ভেতোরে কিছু সীট খালি। জানালার দিকের সিট গুলো বৃষ্টির দিন খালি থাকে কারন জানালা দিয়ে পানি পড়ে ওগুলো ভিজে যায়। জমির উদ্দিন জানালার পাশে একটা সিটে বসলেন। যদিও সীট টা সামান্য ভেজা। অনেকটা পথ হেঁটে আসায় সিট টা হাত ছাড়া করলেন না। বৃষ্টি কিছুটা কমে এসেছে। বাস ও খানিকটা পথ এগিয়েছে। উনি বাসে প্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু ঠিক সময় তন্দ্রা কেটে যায়। আর এই সময় বাস গুলো প্রতিযোগিতা করে। মাঝে মাঝে একটা বাসের সাথে আরেকটা ঘসা খায়। তন্দ্রা বেশিক্ষণ থাকে না।

আজও উনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। তন্দ্রায় মাঝরাতের সেই সপ্নটা আবার দেখলেন এবং জেগে উঠলেন। ব্যাগে রাখা বোতল থেকে কিছুটা পানি পেটে চালন করে দিলন। কিছুটা ভাল লাগছে। বাস থেকে বাইরের দৃশ্য দেখছিলেন আবার যে কখন তন্দ্রায় নিমগ্ন হলেন তা বোঝা গেল না । ঘুম ভাঙল তার। জমির উদ্দিন ঘুমিয়েই গিয়েছিলেন। জেগে বাইরে তাকান দেখেন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে তখনও। উনি ঘড়িতে সময় দেখলেন ৯.৩০ মি। উনি পাশে তাকালেন । পাশের সিট খালি। ভাবলেন হয়ত নেমে গেছেন। এবার তিনি ড্রাইভার এর দিকে তাকালেন বাস থামেতে বলার জন্য। কিন্তু ড্রাইভার নাই। কিন্তু গাড়ি ঠিক ই চলছে। উনি অবাক হলেন। বাসে আর কোনও যাত্রী ও নাই। এটা কী করে সম্ভব। এবার উনি চিৎকার দিলেন। সাথে সাথে বাস টা শক্ত ব্রেক করে থেমে গেল। দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। বাইরে তখনও বৃষ্টি। জমির উদ্দিন ছাতা মেলে ধরলেন তার পর বাস থেকে নামলেন। জায়গাটা পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু চিনতে পারছেন না।

সামনে এগিয়ে গেলেন । বৃষ্টির পানি আবারও তার জুতায় ঢুকে গেল। এবার কেন যেন তার ভাল লাগল। এবার পানি ঢুকে যাওয়াতে বিরক্ত হলেন না। সামনে এগিয়ে যেতে যেতে লক্ষ করলেন পানি বাড়ছে। পানি এবার জমির উদ্দিন সাহেবের জুতা ছেড়ে আরও উপরে। উনি সামনে এগোনোর সাহস পেলেন না। থেমে গেলেন। হুট করে বৃষ্টিও থেমে গেল। এবার জমির উদ্দিন সাহেব দেখলেন উনি একটা সমুদ্রের মাঝখানে দাড়িয়ে আছেন। শান্ত একটা সমুদ্র। কোন ঢেউ নেই।

মনিরা বেগম হাতের কাজ কিছুটা সেরে এক কাপ লেবু-চা নিয়ে তার প্রিয় চ্যনেলে সিরিয়াল দেখতে বসে গেছেন। যখন এড দিচ্ছে তখন চ্যনেল পাল্টে আরেকটা চ্যনেল যাচ্ছেন। বাইরে বৃষ্টি কছুটা কমে এসেছে। চ্যনেল পাল্টে আরেকটা তে যাবার সময় চোখ পড়ল বাংলা এটা নিউজ চেনেল। এক মহিলা প্রতিবেদক কি যেন বলছেন। ভলিউম বাড়ালেন মনিরা বেগম। যা শুনলেন এবং দেখলেন তা ছিল “ আজ আনুমানিক সকাল নয়টার দিকে মতিঝিল গামি দুই বাসের প্রতিযোগিতা করতে যাওয়ায় দুই বাস ই পাশাপাশি ঘর্ষনের ফলে একটি বাস উল্টে যায়। এতে করে ঐ বাসের প্রায় সব যাত্রী গুরুতর আহত হয়। ড্রাইভার সহ মারা যায় প্রায় ৭ জন যাত্রী ।সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যপার হচ্ছে একজনকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু তার জ্ঞান ফেরান যাচ্ছে না। উনি পিজি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ”
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×