জীবনে চলতে-ফিরতে ও সেটাকে চলার মত পর্যায়ে রাখতে আমরা নানা ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হই। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখার সময় এবং চাকরি প্রাপ্তি বা তাতে পদোন্নতির পরীক্ষাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পরীক্ষাগুলোর ভাল-মন্দের ওপর জীবনের অনেক কিছু নির্ভর করে। আমাদের সবারই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা থাকে এতে ভাল করার। আজকাল ভর্তি পরীক্ষাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চাহিদানুপাতে আসন ও সীট সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এসব পরীক্ষার শেষ অংশ হিসেবে থাকে মৌখিক (ভাইভা) বা ইন্টারভিউ এবং এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে। অনেক প্রতিযোগীর ভেতর থেকে যারা সবদিক থেকে ভাল পারফরমেন্স দেখাতে পারেন, তারাই পরীক্ষায় ভাল করেন বা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। মৌখিক পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ সম্পর্কে তাই আমাদের সকলের মনের ভেতর একটা অবিমিশ্র ভয় কাজ করে। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে ভুগি। হওয়া, না হওয়ার দোলায় দুলতে থাকি। দৈনন্দিন নিয়ম-কানুন, অভ্যাস, আচার-আচরণ ইত্যাদির হেরফের ঘটতে থাকে। যেন সামনে বিরাট যুদ্ধ। তরঙ্গায়িত জলধিতে পাড়ি জমাতে হবে এবং নির্বিঘেœ পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। এখন কিভাবে এই মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) ও ইন্টারভিউ মোকাবিলা করবেন এবং প্রত্যাশিত ফল পাবেন?
প্রথমে ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়ে বলব এবং এখানেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করব। চাকরি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুধু যেখানে ভিন্নতর ব্যাখ্যা প্রয়োজন সেটুকুই আলাদাভাবে উল্লেখ করব। আপনি পুরোটাই পড়বেন। এতে জানতে ও বুঝতে সহজ হবে।
শিক্ষাঙ্গনের মৌখিক পরীক্ষাঃ
পরীক্ষার ভাইভা সামনে। ভেবে ভেবে হয়রান হচ্ছেন। কি জানি কি প্রশ্ন করে, না জানা থাকলে কি করব, কোথা থেকে প্রশ্ন করবে তা যদি আগে জানতে পারতাম! প্রিয় শিক্ষক যদি কিছু বলে দিতেন- ইত্যাদি আরো কত কি! চিন্তিত হবার কিছু নেই, সম্ভাব্য যতটুকু পারেন পড়েন। পড়তে বসে সব সময় আপনার নিজের জীবনে যে পরীক্ষাটা (লিখিত বা মৌখিক) সবচেয়ে ভাল হয়েছে সেটার কথা মনে করুন। ভুলেও যেগুলো বা যেটা খারাপ হয়েছে সেটার কথা মনে আনবেন না। মনে আসতে চাইলে, যে পরীক্ষাটা সবচেয়ে ভাল হয়েছে সেটার কথা বার বার মনে করে খারাপটাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। মনে মনে সব সময় ভাববেন বা বলবেন- আমি সাধ্যমত যেটা পড়ছি বা জানি এর মধ্যে থেকেই আমাকে প্রশ্ন করা হবে এবং এর সুন্দর ও সঠিক উত্তর দিতে পারব। আর একান্তই যদি আপনার পরীক্ষা খুব ভাল করার রেকর্ড না থাকে তবে আপনার জীবনের অন্য কোন সাফল্যের কথা মনে করবেন। যে পরীক্ষাটা ভাল হয়েছে বা অন্য কোন সাফল্যের কথা বার বার স্মরণ করতে বলার পেছনে গ্রহণযোগ্য কারণ হল- আপনি অতীতে যখন সেই সাফল্যের ফলাফল জানতে পেরেছিলেন, তখন আপনার খুব ভাল লেগেছিল, খুব আনন্দিত হয়েছিলেন, এতে করে মন ও শরীরে একটা পরিবর্তন হয়েছিল। আপনার ভাল লাগা, আনন্দিত হওয়া এগুলোর ছাপ অবচেতন মনের মাধ্যমে তখন আপনার ব্রেনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আবার ভাল লাগা ও আনন্দিত হবার কারণে শরীর ও মনে যে পরিবর্তন এসেছে সেটাও লিপিবদ্ধ হয়েছে আপনার ব্রেনে। এখন বর্তমানে যখন যে ঘটনাটা মনে করছেন তখন আপনার স্মৃতিতে লিপিবদ্ধ সব তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং এর প্রভাবে আপনার ব্রেন ভাল লাগা ও আনন্দিত হবার অনুভূতিকে জাগ্রত করে দেবে। আপনার দেহ-মন পরিবর্তিত হয়ে সেই অবস্থায় প্রস্তুত হবে আর একটা নতুন সাফল্যকে গ্রহণ করার জন্য। নতুন সাফল্য পাবার জন্য দেহ-মন উন্মুখ হয়ে পড়বে। সাফল্যকে স্বাগত জানানোর, গ্রহণ করার ক্ষেত্র তৈরি করলেন। আর ওদিকে পড়ালেখার মাধ্যমে প্রস্তুতিতো নিচ্ছেনই। অতীতের সাফল্যকে মনে করলে প্রত্যাশিত আর একটা সাফল্য আকৃষ্ট হয়ে বাস্তবে রূপ নেয়। আর এর বিপরীতটা ঘটবে যদি আপনি পূর্বের কোন খারাপ ফলাফল পাওয়া পরীক্ষার কথা মনে আনেন। এতে করে আপনার স্মৃতি জাগ্রত হয়ে আপনার অতীতের খারাপ লাগার অনুভূতিকে উজ্জীবিত করবে এবং প্রভাবিত করবে আপনার বর্তমান প্রচেষ্টাকে। অন্য সবদিক থেকে আপনার সুন্দর প্রস্তুতিকে মুহূর্তেই তছনছ করে দেবে। আপনার প্রত্যাশিত সাফল্য বিফলে রূপান্তরিত হবে। আপনি বুঝতেই পারবেন না কখন কিভাবে কি ঘটে যাবে।
বস্তু জগত বা ফিজিক্যাল ডাইমেনশনে বিপরীতধর্মী কিছু পরস্পরকে আকর্ষণ করে, একইভাবে পরস্পরকে বিকর্ষণ করে অর্থাৎ Positive, Negativeকে কাছে টানে, আর Positive-Negative থেকে বা Negative-Negative থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু মেন্টাল ও স্পিরিচুয়াল ডাইমেনশনে ঘটে এর উল্টোটা। Positive-Positive কে টানে, Negative-Negative কে আনে। সাফল্য আর এক নতুন সাফল্যকে আনে, ব্যর্থতা আর এক ব্যর্থতাকে স্বাগত জানায়। যেহেতু পূর্বে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে আমরা আমাদের স্মৃতিতে লিপিবদ্ধ করে রাখি, সেখান থেকে প্রয়োজনে মনে করি এবং এগুলো অনুভবের ব্যাপার, সেহেতু এগুলো সবই মেন্টাল বা স্পিরিচুয়াল ডাইমেশনের ঘটনা। তাই এখানে ভাল ঘটনা আর একটা ভাল ঘটনাকে টানবে, খারাপ আর একটা খারাপকে নিয়ে আসবে। সুতরাং ইন্টারভিউ বা মৌখিক পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ও তারিখের অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেবার ক্ষণে আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে ভাল হওয়া পরীক্ষাটার (ভাইভা বা লিখিত) কথা অবশ্যই মনে করবেন। আর পরীক্ষায় সাফল্যের অভিজ্ঞতা যদি একান্ত নাই থাকে তবে চিন্তিত হবেন না, আপনার জীবনের অন্য যে কোন সাফল্যের ঘটনাকে মনে করুন। পুরো ব্যাপারটায় আর একটা কাজ আছে আরো মজার। এতে আপনি মনে মনে কিছু অনুশীলন করবেন। নাটক বা থিয়েটারে যারা অভিনয় করেন তারা যেদিন নাটক প্রদর্শিত হয় সেদিনই শুধু তাদের নির্ধারিত চরিত্রের সংলাপ বলা বা সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াকর্ম করেন না। সেটাকে একটা সুন্দর ও সর্বগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেক আগে থেকেই সেই নাটকের মহড়া দিয়ে থাকেন। এই মহড়া ও অনুশীলনই তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আপনাকেও এমনতর মহড়া দিতে হবে বেশ কিছুদিন ধরে। নির্ধারিত তারিখের মাসখানেক বা ১০/১৫ দিন আগে থেকেই আপনাকে এই অনুশীলন শুরু করতে হবে। আরও আগে থেকে আরম্ভ করলে আরও ভাল। সম্ভব হলে জেনে নিন কারা কারা আপনার ভাইভা বোর্ডে থাকছেন এবং সম্ভাব্য কোথায় সেটা হতে যাচ্ছে। সম্ভবপর হলে সে স্থান বা কক্ষটা একবার দেখে আসুন। ভেতরে ঢোকা সম্ভব না হলে দূর থেকে দেখে নিন। আপনি একটু চেষ্টা করলেই এ পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকেই আপনার মনের আয়নায় আপনার বাসা-বাড়িকে দেখতে পারেন। ঠিক এভাবে আপনার চেনা জানা যে কাউকেও দেখে থাকেন। যা কিছু পূর্বে একবার আমরা চাক্ষুস দেখেছি সেটা যখন পরে মনের পর্দায় দেখি বা অবলোকন করি সেটা হয় VISUALIZATION, আর যেটা বাস্তবে বা ফিজিক্যালি কখনো দেখিনি কিন্তু মনের চোখে একটা রূপ তৈরি বা ধারণা নিয়ে দেখি সেটা হয় IMAGINATION বা কল্পনাপ্রসূত। কল্পনায় প্রথম দেখার পর পুনরায় একই জিনিস বা ঘটনাকে আবার প্রত্যক্ষ করলে সেটা হয়ে যাবে VISUALIZATION বা অবলোকন, আপনার মন ও ব্রেনের দৃষ্টিকোণ থেকে। এভাবে কল্পনা করে কিছু তৈরি করে তার ওপর বারে বারে আলোকপাত করাটা একটা ইতিবাচক সৃজনশীল কাজ। ইতিবাচক এজন্য যে, এতে আপনি ভাল কিছু করতে চাচ্ছেন। আপনার ভাইভা বোর্ডে কারা কারা থাকছেন এবং সেটা কোথায় হচ্ছে সবই আপনার চেনা-জানা থাকলে সরাসরি VISUALIZE করবেন। আর এসব কিছু জানা না থাকলে বা কোন তথ্য জানতে না পারলে প্রথমে IMAGINE বা কল্পনায় সম্ভাব্য সব কিছু তৈরি করে নিয়ে দেখবেন মনের পর্দায় এবং পরবর্তীতে যখন সেটা বার বার দেখবেন তখন সেটা আর কল্পনা থাকবে না, হবে VISUALIZE করা।
এভাবে মনের পর্দায় VISUALIZE করে এবং মহড়া দিয়ে আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে ও তা চালিয়ে যেতে হবে পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত। সুবিধাজনক ও নিরিবিলি কোন স্থানে বসুন, চোখ বন্ধ করুন। সেটা আপনার পড়ার টেবিলেও হতে পারে। একটা দম নিয়ে তা কিছুক্ষণ ভেতরে আটকে রাখুন, কষ্ট অনুভব হতে থাকলে তা মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এভাবে দম নিয়ে অনুশীলন করলে ব্রেনের ভেতরে সৃষ্ট ভাইব্রেশনের ফ্রিকোয়েন্সি কমে আসে ও মন শান্ত হয়ে Creative বা সৃজনশীল স্তরে বিরাজ করে। দুশ্চিন্তা করলে, টেনশন করলে, বেশি এক্সাইটেড হয়ে পড়লে, রেগে গেলে, নার্ভাস ফিল করলে, দেহে বায়োলজিক্যাল পরিবর্তন হয় এবং ব্রেনের ভাইব্রেশনজনিত পরিবর্তন সাধিত হয় ও ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে গিয়ে মনকে অস্থির, চঞ্চল করে তোলে। চোখ বন্ধ অবস্থায় আপনার মনের পর্দায় VISUALIZE করুন নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নির্ধারিত স্থানটি। সকলে বসে আছেন কারোর অপেক্ষায়Ñ হ্যাঁ, আপনারই জন্য। খুবই সহজ ও সাবলীল ভঙ্গীতে আপনি কক্ষে প্রবেশ করলেন। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতার পর নির্দিষ্ট আসনে বসলেন। যেভাবে টিভি বা সিনেমার পর্দায় চলমান দৃশ্যাবলী আমরা দেখে থাকি সেভাবেই দেখতে থাকুন। উপস্থিত শিক্ষক বা ব্যক্তিবর্গ আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন, আপনি অতি স্বচ্ছন্দে তার সঠিক জবাব দিয়ে যাচ্ছেন, যেটাই জানতে চাওয়া হচ্ছে সেটারই জবাব আপনি সুন্দরভাবে দিচ্ছেন। ওনারা কি কি জিজ্ঞাসা করছেন আর আপনি কি কি জবাব দিচ্ছেন সেটা বোঝা, শোনা বা দেখার দরকার নেই। শুধু মনের পর্দায় অবলোকন করবেন- আপনি সুন্দরভাবে সবই পারছেন, আপনার মুখমন্ডলে এক পরিতৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠেছে; বোর্ডে উপস্থিত সকলেই আপনার দিকে সন্তুষ্ট চিত্তে তাকিয়ে আছেন। আপনাকে অহেতুক বিভ্রান্ত করার জন্য বেশি প্রশ্ন করা হচ্ছে না, অপ্রাসঙ্গিক কিছু বলাও হচ্ছে না। খুব সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে শেষ হবার পর আপনি হাসিমুখে বিদায় নিয়ে বিজয়ীর মুডে বেরিয়ে আসছেন। আর বোর্ডে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ আপনাকে হাসিমুখে বিদায় জানাচ্ছেন। ওনারা যে আপনার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তা তাদের অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছে। এরপর মনের পর্দায় দেখুন আপনার কাঙ্খিত ফল প্রকাশিত হয়েছে এবং সে তালিকায় আপনার নাম ও ক্রমিক নম্বর আপনি যেখানে প্রত্যাশা করছেন ঠিক সেখানেই আছে। আপনি কৃতকার্য হয়েছেন সেটা জেনে আপনি আনন্দিত হচ্ছেন।
উপরে উল্লেখিত উপায় আত্মস্থ করে পরীক্ষা পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিনই এটার মহড়া দিন ও অনুশীলন করতে থাকুন। আর বোর্ডে কারা থাকছেন ও কোথায় পরীক্ষা হচ্ছে সেটা জানা না থাকলে বা জানতে না পারলে চোখ বন্ধ রেখে প্রথমে IMAGINE করে আপনার মতো করে সব সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি করে নিন এবং মহড়া দিন। দ্বিতীয়বার যখন আবার একই ছবি দেখবেন তখন সেটা হবে VISUALIZE করা। প্রতিবার মহড়া দেবার সময় আপনার কল্পনায় সাজানো বিষয়টাকে VISUALIZE করে দেখতে থাকবেন ওপরে বর্ণিত নিয়ম মেনে।
চাকরি পেতে বা পদোন্নতির জন্য ইন্টারভিউঃ
শিক্ষা জীবনের জন্য বর্ণিত নিয়মের অনেকটাই প্রায় এখানে প্রযোজ্য হবে, শুধু শিক্ষকের স্থানে প্রতিষ্ঠানের কর্তা-ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন ইন্টারভিউ বোর্ডে। ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট রুম হবে ভিন্নতর। সাধারণত অফিস কক্ষের আদলে সেটা হতে পারে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কক্ষের অনুরূপ হবে সেটা। নতুন চাকরি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আগে থেকে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা বা জানা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে শহর বা শহরতলীর কোন্ স্থানে প্রতিষ্ঠানটার অফিস, শুধু সেটা জেনে নিয়ে প্রায় পুরোটাই আপনাকে IMAGINE করে নিতে হবে এবং পরে মহড়া দেবার সময় সেটাকে VISUALIZE করতে হবে। আর চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ হতে পারে তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারগুলো। কারা কারা বোর্ডে থাকছেন, তাদের অনেককেই হয়ত আপনি চেনেন বা জানেন। আর চাকরিতে যেখানে ইন্টারভিউ হবে সেটাও আপনার পরিচিত স্থান হতে পারে। সবগুলো জানা থাকলে সরাসরি পুরোটাই VISUALIZE করবেন। আর কিছু কিছু জানা না থাকলে সেগুলোকে IMAGINE করে পুরো সেট তৈরি করে নিন এবং পরবর্তীতে তা VISUALIZE করুন।
পরীক্ষা বা ইন্টারভিউস্থলে করণীয়ঃ
নির্ধারিত সময়ে শুরু হলেও প্রথমেই সরাসরি আপনাকে বোর্ড রুমে যেতে হবে না। পাশে কোন রুমে বা কাছাকাছি কোথাও অপেক্ষা করতে হবে। সেখানে থাকা অবস্থায় আপনার টেনশন, উৎকণ্ঠা, হতাশা, নার্ভাসনেস ইত্যাদি হতে পারে। এতে করে আপনি নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমন যাতে না হয় সেজন্য সেখানে মাঝে মাঝে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে তা কিছুক্ষণ ধরে রেখে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে ছেড়ে দেবেন। এতে করে সমস্ত টেনশন, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, নার্ভাসনেস, মুখ-গলা শুকিয়ে আসা ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে। আগের কোন ভাল স্মৃতি মনে করবেন- বিশেষ করে পরীক্ষা সম্পর্কীয় হলে ভাল। এমনও করতে পারেন- কোন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য মনের পর্দায় দেখতে থাকলেন। এতে করে আপনার মন শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসবে। আশেপাশে কে কি করছে সেদিকে ততটা নজর বা খেয়াল দেবেন না, এতে করে তাদের নেতিবাচক কোন কার্যকলাপ, কথাবার্তা আপনার ওপর তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। বরং বাইরে বসে থেকেও আপনি এতদিন যা যা মহড়া দিয়েছেন সেটা অবলোকন করুন এবং প্রত্যাশা করুন যেমন চেয়েছেন ঠিক তেমনই হবে। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে এক সাথে ২/৩ জন প্রশ্ন করে ফেলতে পারে। এতে ভয় পাবেন না, প্রার্থীকে নার্ভাস করে দেবার জন্য এটা করা হয়ে থাকে। এমন হলে আপনি মন দিয়ে খেয়াল করে যে কোন একজনের প্রশ্ন শুনবেন এবং সেটার জবাব দেবেন। অন্যদের দিকে খেয়ালই দেবেন না। নির্দিষ্ট এক জনের প্রশ্নের জবাব দেবার পর অন্যদের দিকে তাকাবেন এবং বলবেন- আপনারা যেন কি জানতে চেয়েছেন? ততক্ষণে অন্য প্রশ্নকর্তারা তাদের প্রশ্ন ভুলে গিয়ে থাকবেন। যদি ভুলে না গিয়ে সত্যি সত্যি আবার জানতে চান তখন জবাব দিন। এক সাথে আপনি ২/৩ জনের প্রশ্নের জবাব কখনো দিতে পারবেন না। যেটার জবাব দেবেন সেটা খুব সাবলীল ও সহজভাবে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে দিতে চেষ্টা করবেন। অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে নিজ থেকে কিছু বলতে যাবেন না। যেটার জবাব জানা নেই বা পারছেন না সেটা সরাসরি জানিয়ে দিন- আপনার জানা নেই। রুমে প্রবেশের সময় চেহারা ও চলনে এমন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলুন যে, আপনি বিশেষ ব্যক্তিত্ব- আপনার জন্যই এখানে সকলে অপেক্ষা করছেন এবং আপনার জন্যই আজকের এই আয়োজন।
প্রস্তুতির জন্য যা যা করবেনঃ
১। অতীতের সবচেয়ে ভাল হওয়া পরীক্ষা বা অন্য কোন ভাল ঘটনার কথা সব সময় মনে করবেন।
২। ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি ভালভাবে বুঝে নিয়ে আত্মস্থ করে প্রয়োগ করুন।
৩। যেখানে বা যারা বেশি নেতিবাচক ও হতাশার কথা বলে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
৪। ইন্টারভিউ দেবার আগ পর্যন্ত আপনার জীবনে যেকোন পর্যায়ে যত সাফল্য বা ভাল লাগার ঘটনা (ছোট হোক বা বড় হোক) ঘটবে, সেগুলোকে এপ্রিশিয়েট করুন, সাফল্যের জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দেবেন ও পরম করুণাময়ের কাছে শুকরিয়া জানাবেন।
৫। সব সময় ভাল আছি বলবেন। যখন যে অবস্থায় থাকেন সে অবস্থাতে নিজেকে সুখী মনে করবেন।
৬। কোথাও রওনা হবার আগে বা প্রত্যাশিত কোন কাজ শুরু করার আগে তা সুন্দরভাবে শেষ হবে -তা ভাবুন।
এখন থেকে যা যা একেবারে করবেন নাঃ
ক) যে পরীক্ষাগুলোতে বিফল হয়েছেন বা যে কাজ সুন্দরভাবে সমাধা করতে পারেননি সেটার কথা কখনো মনে আনবেন না। মনে আসলে, ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি প্রয়োগ করে সেগুলোকে সরিয়ে দিন।
খ) কখনো কোন হতাশাব্যঞ্জক কথা বলবেন না।
গ) কখনো অন্যের সাথে নিজেকে যেকোন পরিধিতে তুলনা করবেন না।
ঘ) নেতিবাচক কথা বা আচার-আচরণ কখনো প্রকাশ করবেন না।
আসুন, আমরা সকলে নিজেই নিজের সাফল্য আনার জন্য সচেষ্ট হই।