আসুন কল্পনা করি একটি মসজিদ। কি দেখে বুঝা যাবে এটা একটা মসজিদ? কি দেখে বলা যাবে যে এটা কোন স্কুল ঘর নয়- থাকার ঘর নয়- কিনবা হাসপাতাল নয়?
আপনি প্রথমেই বলবেন মিনার দেখে। সুতারাং মিনার কে আমি প্রথমেই রাখছি।
মিনার হল সেই উচু চুড়া যা অনেক দূর পর্যন্ত আজান এর শব্দ কে প্রবাহির করে।
মিনার এর আরো কিছু গুনাগুন আছে।
১. মিনার আকাশের দিকে অনেক দূর পর্যন্ত দিক নির্দেশ করে। আকাশের সাথে মানুষের হাজার বছরের সম্পর্ক। মানুষ সব সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের সৃষ্টিকর্তা কে খুঁজে বেড়ায়। তাই এই আকাশ এর দিকে উঠে যাওয়া মিনার কে দেখে মানুষ আল্লাহ র নৈকট্য লাভ এর উদ্দেশ্যে মিনার এর দিকে ছুটে যেতে চায়।
২. মিনার দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। যেমন আমরা উদাহরন দিতে পারি- ঐ যে মিয়া বাড়ির মসজিদের মিনার আছেনা- তার পাশের গাছের পরের বাড়িটা আমাদের। এই উদাহরন দেখলেই বুঝবেন কেন এই মিনার।
৩. মিনার খুব সহজে আজান এর সুমিধুর ধ্বনি নিয়ে যায় অনেক দুরের মানুষের কানে। একবার আমি শুনেছিলাম ভোরের আজান। সেই মসজিদ টা হাতিরপুলের কোথাও হবে। সেই সুমধুর আজান এর ধ্বনি খুঁজতে গিয়েই দেখি সেই মসজিদ আমার শোনার স্থান থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত। এভাবেই আজান কে অনেক দূরে নিয়ে চলে যায় মিনার।
এবার আমরা যার নাম নিতে পারি সে হল গম্বুজ বা ডোম।
এই ডোম এর কাহিনী কি? ডোম হল সেই গোলাকার ছাদ যার নিচে দাঁড়িয়ে মুসল্লি রা নামাজ পড়ে। এই ডোম এর নিচে মানুষ নামাজ পড়তে ভালবাসে কারন এটা এক আল্লাহ এবং তাঁর একছত্র ছায়াতল নির্দেশ করে। ইসলামের মুল ভিত্তির সাথে মিল রেখে এই ডোম কে ব্যাবহার করতে জানার জন্যই ডোম।
ম হয়ে উঠেছে ইসলামিক স্থাপত্যের অংশাশু রীতি।
শেষে যার নাম নিতেই হবে তা হল আর্চ।
এই আর্চ প্রথমত রোমান রা শুরু করলেও পরবর্তী তে মুসলিম স্থাপত্য কলায় ঢুকে পড়ে অনিবার্য ভাবে। কেন?
আসুন আলোচনা করি।
এই হল আর্চ
এই আর্চ ছিল পুরোপুরি বৃত্তাকার। এটা বাড়ির ভর দুইভাগে কলাম এর উপর ফেলে দেয়। ফলে সে বাড়ি শক্তি শালী হয়।
কিন্তু মুসলমান স্থপতি রা এই আর্চ কে ব্যাবহার করে অর্ধগোলাকার উপায়ে। দেখে ফেলি সেই উপায় গুলো কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে।।
অবশেষে
এঁকে পয়েন্টেড আর্চ ও বলা হয়ে থাকে। কারন এখানে আর্চ এর উপরের কোণায় থাকে সকল শক্তি বিন্দু বা ভরকেন্দ্র।
এর পর আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হতে থাকে এই আর্চ
এক সময় এই আর্চের স্থাপত্য কলা র রীতি কে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরি শুরু করে গম্বুজ। একই পিন পয়েন্ট স্থাপত্য কলার কারনে আস্তে আস্তে আমাদের চোখের সামনে চলে আসে গোলাকৃতির ডোম।
আবার এই ডোমের আছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। যেমন - পেয়াজাকৃতি ডোম, ডীম্বাকৃতি ডোম, ওভাল ডোম প্রভৃতি। আসুন দেখি কিছু অনিন্দ সুন্দর ডোম।
সবার শেষে এটাই বলি-
এই ডোম এবং আর্চ এসেছে একদম স্থাপত্য প্রয়োজনীয়তার জন্য। কিন্তু বর্তমানে এর যথেচ্ছ ব্যাবহার বাংলার চিরায়ত স্থাপত্য কলা রীতিতে প্রভাব ফেলছে। কারন যেখানে এখন অনেক উন্নত স্ট্রাকচারাল সিস্টেম চলে এসেছে এখনো সেখানে বাংলা দেশে সেই আদিম রীতির আর্চ দেয়া হয়। স্থপতি দের কে নতুন কোন রীতি কিনবা আগের রীতির ট্রান্সফরমেশন করতেই দেয়া হয়না।
উদাহরন হিসেবে বলতে পারি- আমার নিজের করা তিনটি মসজিদ তৈরি হয়েছে এবং এখন আরেকটি মসজিদ এর ডিজাইন করছি। এর প্রতিটিতে সেই আদিম আর্চ আমাকে ব্যাবহার করতে হয়েছে ক্লায়েন্ট এর ইচ্ছার কারণে। উনাদের এটাই বুঝাতে পারিনি যে এটা মানুষের উন্নতির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের ও এখন উন্নত কিছু একটা আনা দরকার। কিন্তু কে শোনে কার কথা ।
আমার ডিজাইনের মসজিদ গুলো নিয়ে না হয় আরেকদিন বলব। আজ এই টুকুই।
ভাল থাকবেন সবাই ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:১৯