এতগুলো প্রাণহানির দায় কে নেবে??
অবশ্যই সাংবাদিকদের দায় এখানে সবচেয়ে বেশী। তাদের আচরনের কারনে অনেক তথ্যই পাচ্ছিল ভেতরে থাকা জংগীরা।
দু জন পুলিশ সদস্য প্রান দেবার পরও সময়ক্ষেপনের দায় এড়াতে পারে না সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো, রাতেই যেখানে এতগুলো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আর সবশেষে এই প্রাণহানির দায় সমগ্র বাংলাদেশের, সকল বাংলাদেশীর।
কারন, এই দেশ কোনদিন জঙ্গীদের আবাস ছিল না, ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির দেশ।
এদেশে সাম্প্রদায়িকতা এল, জঙ্গী এল ধর্মের অপব্যখ্যাকারীদের হাত ধরে, আমরা কি করেছি??
কেউ ধর্মকে ঘৃনা করেছি, কেউ ধর্মকে অন্ধভাবে পালন করেছি অন্ত:সারশূন্যভাবে, ঢুলে ঢুলে ধর্মগ্রন্থ পড়েছি কিছু না বুঝে, বিশ্বাস করেছি অপব্যাখ্যাকারীদের নিজেদের অজ্ঞতাকে ঢাকতে।
যারা বুঝেছি, তারা সব জেনেও চুপ করে থেকেছি, আমাদের সন্তানদের ব্রেইনওয়াশ হতে দিয়েছি, চেতনা আর পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত থেকেছি।
কি ফলাফল দিন শেষে??
২২ জন নিরপরাধ মানুষের প্রানহানি!!
জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, কিন্তু কিভাবে??
যেখানে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেদের সহজেই ধর্মের নামে ব্রেইনওয়াশ করে ফেলা যায়, সেখানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ তীব্র হয়। এই ব্যবস্থা মানুষ্যত্ব বা বিবেচনাবোধ তৈরী করার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা রাখে না।
আমাদের ক্রমাগত বাড়তে থাকা হতাশ তরুন সমাজকে কোন আলোর পথ দেখাতে পারছি না।
শত শত জিপিএ ৫ দিয়ে যখন ভাল চাকুরী মেলে না, মাদ্রাসা থেকে পাশ করে যখন ভাল কাজ মেলে না, সমাজের ইয়ো ইয়ো গ্রুপের সেল্ফি আর পাংকু চালচলন যখন বঞ্চিতদের আরো ক্ষুধার্ত করে তোলে, তখন এই উগ্রবাদীরা তার সুযোগ নেয়, এদের বিপথে নিয়ে যায়।
কিন্তু এদের জন্য কি কিছু করেছি আমরা??
আমাদের প্রতিরোধের শক্তি আছে, কিন্তু বিবেচনা নেই। তাই জঙ্গী হামলা ঘটলে দু চার জনকে ধরে ক্রসফায়ার এ ফেলে সমস্যার সমাধান করে ফেলতে চাই।
আধুনিক জঙ্গীবাদ বিশ্লেষন করলে দেখবেন, এটি কোন আদর্শের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে নেই; দাঁড়িয়ে আছে এক একটি অদৃশ্য শক্তির স্বার্থ আর লাভের উপর ভিত্তি করে।
আর সবচেয়ে নির্মম সত্য হল,
জঙ্গীবাদ হল পৌরানিক প্রানী হাইড্রার মত। আপনি এর একটি মাথা কাটবেন, সেখানে দুটো মাথা গজাবে!!
সমস্যার সমাধান তাই শুধু মাথা কেটে ফেলে করতে পারবেন না, বরং সম্মিলিতভাবে এই মাথা তৈরী হওয়া না ঠেকাতে পারলে কোন লাভ হবে না।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত থেকে, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ শুধু প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছিল মাত্র যুদ্ধ শেষ হয় নি!!
সত্যিকারের মুক্তি এখনো অনেক দূরে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬