বেশ কয়েকদিন ধরে ব্লগে ইভটিজিং নিয়ে আন্দোলন চলছে। প্রথম গল্পটা এই ইস্যুতেই শুরু করি।
স্কুল জীবনে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতাম আর সব মেয়েদের মতো টিজিং-এর শিকার আমাকেও হতে হতো। যারা দূর থেকে দুই এক লাইন গান-কবিতা শোনাতো তাদের কথা তেমন গায়ে মাখতাম না। কিন্তু যারা একেবারে এক হাত দূরত্বের কাছাকাছি এসে আমার পাশে পাশে সারা রাস্তা হেঁটে হেঁটে প্রেম নিবেদন করতো... খুবই প্রেস্টিজ ইস্যু ছিল সেটা।


স্বাভাবিকভাবেই বাসায় এসে আম্মাকে বলে দিতাম। এরা বেশিরভাগই এলাকার ছেলে ছিল। আম্মা এক বিকেলে তাদের ডেকে বাসায় আনতো, খুব মোলায়েম গলায় নাস্তা পানি খাইয়ে পরিচিত হতো, ও তুমি এ এলকাতেই থাকো, আমরা তো নতুন এসেছি অনেককে এখনো চিনি না। তা তোমার বাবা-মা কি করেন, বাসা কোথায়... আমার সাথেও পরিচয় করিয়ে দিত। বলতো, আমার মেয়ে বুঝছো, যা দিনকাল পড়েছে! মেয়ে একা স্কুলে আসা-যাওয়া করে... বাবা তোমরা একটু খেয়াল রেখো তো কোন অসুবিধা যেন না হয়। ঐ ছেলে যে টিজ করেছে সেটা নিয়ে আম্মা কিছুই বলতো না।

তবে ছেলে যা বোঝার বুঝে নিত, আর সরাসরি পরিচয় হয়ে যাওয়াতে এবং বাবা-মা-বাসার ঠিকানা সব জেনে ফেলাতে আর সাহস পেত না টিজ করার।

ডিপার্টমেন্টের করিডোরে দাঁড়িয়ে ক্লাশের ছেলে মেয়েরা গল্প করছি। এক ছেলে তার বিখ্যাত ডানপিটে স্কুলজীবনের গল্প করছে। রংপুর ক্যাডেট কলেজে তার সময়ে সে ছিল দুষ্টের শিরোমনির উপরে শিরোমনি। তার জ্বালায় স্যারেরা, ছাত্ররা সবাই অস্থির! স্কুলে কেউ কোন দুষ্টামী কান্ড ঘটলেই স্যারেরা এসে তারে ধরে, হয় এটা তোমার কাজ, না হয় তুমি জানো কে করছে...

দেশে থাকতে যে ক্যাম্পাসে জব করতাম, প্রায় এটা সেটা টেকি সেমিনার হতো। একবার নেটওয়ার্ক সিকিউরিটির উপর একটা সেমিনার ছিল। এসব টেকি সেমিনার/ ওয়ার্কশপ/ কনফারেন্সের সুবাদে লুতফুর রহমান স্যার, কায়কোবাদ স্যার, জাফর ইকবাল স্যারদের মতো দেশবরেণ্য নামি- দামী শিক্ষকদের খুব কাছ থেকে দেখবার এবং উনাদের অনেক দামী দামী কথা শোনবার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাই আমার চাকরী জীবনটা বেশ উপভোগ করেছি। যাক, যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, ঐ সিকিউরিটির সেমিনারে কয়েকজন বক্তার মাঝে একজন ছিলেন খুব সম্ভবত জাবির প্রফেসর। উনার কিছু কথা মনে পড়ছে। অনলাইন সিকিউরিটি তথা সাইবার আইন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রসংগক্রমে এসে পড়লো বাস্তব দুনিয়ার আইনের রক্ষকদের কথা।
উনি মজা করে একটা গল্প বললেন, সে্টা হলো এরকম, একটা সরকারী ট্রেনিং সেন্টারে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশদের ট্রেনিং হচ্ছে। প্রশিক্ষক বলছেন, আপনারা ভবিষ্যতে দেশের আইন শৃংখলা রক্ষা করবেন, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী, ধর্ষক এদেরকে পাকড়াও করতে হবে..... এর জন্য আপনাদের আগে বুঝতে হবে কিভাবে চোর চুরি করে, বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপগুলো কিভাবে ঘটে? তাই আসুন প্রথম ধাপে আপনাদের শেখাই কিভাবে চুরি করতে হয়, কিভাবে খুন করতে হয়.... ট্রেনিং-এর মাঝপথে এসে সরকারের বরাদ্দকৃত সব ফান্ড শেষ... তাই প্রশিক্ষক বাধ্য হয়ে তাদেরকে কর্মস্থলে ফেরত পাঠিয়ে দিলো .....



ইয়ে মানে আজকের মতো বিদায়। সবাই ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১২ রাত ৯:৪৭