ভূমি, সাগর, বায়ুমন্ডল ও মহাবিশ্বের পর সাইবারস্পেস হলো পঞ্চম সাধারণ ক্ষেত্র যেখানে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জাতির মধ্যে একটা পারস্পরিক সহযোগিতা, সমঝোতা এবং সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা দরকার। আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ পর্যায়ে সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার ক্রাইমকে অন্তর্ভুক্ত করে একটা চুক্তি বা নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার যার মাধ্যমে সাইবারস্পেসে গ্লোবাল শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা যাবে।
ইতিমধ্যে এ নিয়ে দেশে দেশে নানা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। যেমন, সর্বশেষ ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ইন্টারপোল এবং ইউরোপল মিলে ট্রান্সন্যাশানাল অপরাধের বিরুদ্ধে একটা সহযোগিতামুলক কর্মপরিকল্পনা তৈরী করতে একমত হয়েছে যার মাঝে সাইবার ক্রাইমও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ মাসেই বাহরাইনে সাইবারক্রাইম নিয়ে একটা বিল উথ্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও অষ্ট্রেলিয়ার 'হাউজ অফ রিপ্রেসেন্টেটিভ'এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল Cybercrime Legislation Amendment Bill 2011-এর উপর বিতর্ক। [১]
সাইবারক্রাইম আইন নিয়ে বাংলাদেশের প্রসংগে আসার আগে সংক্ষেপে জেনে নেই সাইবারক্রাইম বলতে আমরা কি বুঝি?
খুব সাধারণ অর্থে সাইবারক্রাইম হলো যেকোন ধরণের অনৈতিক কাজ যার মাধ্যম (tool) বা টার্গেট (target) বা উভয়টিই হলো কম্পিউটার। [২]
আরেকটু বিস্তারিতভাবে,
The computer may be used as a 'tool ' in the following kinds of activity- financial crimes, sale of illegal articles, pornography, online gambling, intellectual property crime, e-mail spoofing, forgery, cyber defamation, cyber stalking.
The computer may however be 'target' for unlawful acts in the following cases- unauthorized access to computer/ computer system/ computer networks, theft of information contained in the electronic form, e-mail bombing, data didling, salami attacks, logic bombs, Trojan attacks, internet time thefts, web jacking, theft of computer system, physically damaging the computer system. [৩]
এখানে বেশকিছু টেকনিক্যাল টার্ম ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পরবর্তীতে দেয়ার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশে প্রথম ২০০২ সালে তথ্যপ্রযুক্তসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয় যেটা ২০০৬ সালে পাশ হয় যা 'The Information and Communication Technology Act 2006' নামে পরিচিত।
এই অ্যাক্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী সংস্থা বা কর্পোরেশনের নানাবিধ জরুরী ডকুমেন্ট অনলাইনে আর্কাইভ করা। এর মাধ্যমে আর বেশি দক্ষতার সাথে সরকারী সেবা জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছানো। ইলেকট্রনিক ট্র্যান্ সেকশনের অথেনটিকেশন, ডিজিটাল সিগনেচারের অথেনটিকেশনসহ নানারকম অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ই-কমার্সের দ্বার অবারিত করা। নানারকম সরকারী গ্যাজেট অনলাইনে প্রকাশ করা। সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন অনলাইন ডকুমেন্ট যাতে হ্যাক বা নকল না হয় তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ আরো নানারকম তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত অপরাধের সমাধান খূঁজে বের করা। [৪]
ঐ অ্যাক্টে সাইবারক্রাইম বলে যেসব বিষয়কে চিন্হিত করা হয়েছে সেগুলো হলো,
a. Hacking or unauthorized entry into information systems
b. Virus introduction
c. Publishing or distribution of obscene content in eletronic form
d. Tampering with electronic documents required to be kept under
the law
e. Frauds using electronic documents
f. Violation of privacy rights such as STALKING
g. Violation of Copyright, Trademark or Patent design
h. Defamation through e-mail
i. Holdings out threats through e-mail
বর্তমান সরকার আসার পর এই নীতিমালাতে আরো কিছু সংশোধন আনা হয়েছে যেটা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মণ্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। [৫]
এই নীতিমালা মাধ্যমে ২০১০ সালের মে মাস বাংলাদেশে ফেইসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল কিছুদিনের জন্য যেটা সবমহলেই বিতর্কিত হয়েছ, কারণ এর মাধ্যমে অনলাইন সোশাল নেটওয়ার্কিংকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। এটা নীতিমালার একটা অপব্যবহার হিসেবেই চিন্হিত হয়েছে। [৬]
২০০৯ সাল থেকেই এই নীতিমালার অধীনে কিছু আইন তৈরীর চিন্তাভাবনা শুরু হয় সরকারী মহলে। সুপ্রীম কোর্টের সাথে আলোচনাও হয়েছিল একটা সাইবার ট্রাইবুনাল গঠন করা নিয়ে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে 'Pornography Control Bill-2010' নামে একটি ড্রাফট বিল তৈরী হয় যেটা, স্বরাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় আইন মণ্ত্রনালয়ের কাছে পাঠিয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। সেটা তার পরবর্তী কেবিনেট সভায় পাস হবার কথা। এরপরের খবর আমার আর জানা নেই।
সেই ড্রাফট বিলে যেকোন সাইবার ক্রাইম বা সাইবার সম্পর্কিত পর্নোগ্রাফীর অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবার আইন প্রস্তাবনা করা হয়েছে। [১, ৭, ৮] ঐ সময়ে র্যাবের ডিজি নিউ এইজ পত্রিকাকে বলেছেন, তাদের কাছে সাইবার সম্পর্কিত পর্ণগ্রাফীর অপরাধ যারা করে তাদেরকে সনাক্ত করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত আইনের অভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
আমরা বিভিন্ন সময়ে ব্লগে, ফেইসবুকে বা ওয়েবসাইটে বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দিতে দেখেছি যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা সমাজে নানা রকম হয়রানির স্বীকার হয়েছেন, হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এতে করে প্রাইভেসী ক্ষুণ্ণ হবার মতো ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন রকম অশালীন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে বিভিন্ন ব্লগার বা ফেইসবুক ইউজার বা অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের উত্যক্ত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যার বেশিরভাগই করা হয় মূলত নারী ইউজারদের যেটা সাইবার মবিং-এর পর্যায়ে পড়ে।
তাই আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি অতি দ্রুত যেন এই আইন পাশ করা হয়, এবং সব অনলাইন মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী ফোন নাম্বার বা ই-মেইল এড্রেস তথা যোগাযোগ করার ঠিকানা দিয়ে দেবার জন্য যাতে করে একজন ভিক্টিম খুব সহজেই তার অভিযোগ জানাতে পারেন।
১. Click This Link
২। The ICT Act 2006
৩। http://www.scribd.com/doc/3399476/Cyber-Crime
৪। Click This Link
৫। Click This Link
৬। Click This Link
৭। Click This Link
৮। Click This Link