হায় কি আজব কল বটে – লালন ফকির
হায় কি আজব কল বটে।
কি ইসারায় টিপে দেয়
অমনি ছবি যায় উঠে।।
অগ্নি জল হতে সে কল সদা নাচে ভিতরেতে।
ধড়ফড় করে চলছে ছবি
কোন টিপে দাঁড়ায় হেঁটে।।
হু হু শব্দে ধূম উঠছে কল ফেটে।
একজনা সে ভিতর ঝোঁকে
তার জাগা ঐ বার পিটে।।
দমের ঘরে রয়েছে সকল কলের মূল গুটে
লালন বলে, সব অকারণ
কখন সে কল যায় কেটে।।
যে জন হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতেছে – লালন ফকির
যে জন হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতেছে,
ঘুচেছে তার মনের আঁধার, সে যে
দিন ছাড়া নিরিখ বেঁধেছে।।
হাওয়ার দমে বেঁধে ভেলা
অধর চাঁদ মোর করছে খেলা
ঊর্ধে নালে সদা চলা
বহু সাধন-গুণে কেউ দেখেছে।।
হাওয়া দ্বারে দম কুঠরি
মাঝখানে অটল বিহারী
শূন্য বিহার স্বর্ণ পুরী
কলকাঠি তার ব্রহ্মদ্বারে আছে।।
মন ছুটে প্রেম-ফাঁসি করে
জান শিকারী শিকার ধরে
ফকির লালন কয়, বিনয় করে
সে ভাব ঘটল না মোর হৃদয়-মাঝে।।
মানবদেহের ভাব জেনে কর সাধনা – লালন ফকির
মানবদেহের ভাব জেনে কর সাধনা।
দেল কোরান না পড়িলে আয়াত কোরান পড়লে
কিছু হবে না।।
মুণ্ডেতে ‘মিম’ আলো
‘হে’তে মগজ ছিল
‘তে’ ‘যে’ তে দুই কান জানা গেল
‘আয়েন’ ‘গায়েনে’ দুই নয়না।।
অধর যুগলে ‘লাম’ ‘মিম’
সর্ব অঙ্গে ‘আলেফে’র চিন
আরও দু বাজুতে ‘সিন’ ‘ছিন’
মুখেতে ‘বে’র গঠনা।।
‘লাম’ ‘আলিফ’ নাসিকাখানি
‘ছিয়া’তে দুই কন্ঠধ্বনি
‘মিমে’ হয় জেকের ধ্বনি
‘হে’ তে হাড়ের গঠনা।।
‘ফে’তে ফোঁফড়া পানি পুরা
‘কাফে’তে কলিজা ঘিরা
আরও বড় ‘কাফ’ নাড়িতে ঘিরা
‘জে’তে দমের ঠিকানা।।
‘তই’ ‘জই’ তিল্লিতে ছিল
‘ছোয়াত’ ‘দোয়াত’ হৃদে রাখিল
‘নফস’তে ‘নু’ হরফ হল
রূপেতে ভেদ যায় জানা।।
আরও টিমটিমারী ‘হামজা’ আরে
জেনে নেও মুরশিদের ধারে
‘দাল’ ‘জাল’ দুই জানুর ‘পরে
দলিতে তার নিশানা।।
দশ হরফে সাধনের গতি
সাধনে জ্বলে জ্ঞানের বাতি
নিষ্ঠায় রেখ রতি মতি
গুরু কর ভজনা।।
আরও লাহুত নাছুত মলকুত জবরুত
ছয় লতফা ঐ দেহে মজুত
দরবেশ লালন কয়, দিয়াছে মাবুদ
এই ‘জি’তে কেন খোঁজ না।।
মন কি তুই ভোড়ুয়া বাঙ্গাল জ্ঞান ছাড়া – লালন ফকির
মন কি তুই ভোড়ুয়া বাঙ্গাল জ্ঞান ছাড়া।
সদরের কাজ করছো সদায়,
পাছ-বাড়িতে নাই বেড়া।।
কোথা বস্তু কোথা রে মন
চৌকি পাহারা দেয় হামেশা কোন
কাজ দেখি পাগলের সমান
কথায় যেমন কাঠ ফাড়া।।
কোন কোণায় কি হচ্ছে ঘরে
একদিন তো দেখলি নারে
পৈতিক ধন নিলো চোরে
হলি রে তুই ফোকতারা।।
পাছ-বাড়ি আঁট করো
ঘর-চোরারে চিনে ধরো
লালন বলে, নইলে তোর
থাকলে না মূল এক কড়া।।