ভালো লাগলে আরো মজার মজার কবিতা, গল্প পড়তে ভিজিট করুন-
anupamdkan.blogspot.com
গ্রাম থেকে বাসে চড়ে ব্যাঙ গেলো শহরে,
পিছে পিছে গরু ছোটে, ‘নিয়ে যাও আমারে’।
‘খলিলের ডোবা আমি বেচেছি যে জলিলে,
তুমি কেন পিছে ধাও?’, গরুকে ব্যাঙ বলিলে।
‘ওরে বাবা, জানোনা? সে যে কি কাণ্ড,
দুধে বেশী পানি দিয়ে ভরে দিয়ে ভান্ড,
আধা দুধ গোয়ালারে, বাকি দুধ ফাঁকি মেরে,
পড়ে গেছি ধরা ভাই, পিছে মোরে তাড়া করে’।
‘ভাই ভাই বলিস না, আমি তোর সিনিয়র,
জমি নিয়ে কারবার, তুচ্ছ যে তুই চোর,’
ব্যাঙ ভাইয়ের কথা শুনে, গরু পেলো কষ্ট,
বাসে উঠে সকালেই মন হলো নষ্ট,
‘শহর তো গ্রাম নয়, বুঝবে যে ঠ্যালা,
ভালো হতো সাথে যদি থাকে কোন চ্যালা?’
ব্যাঙ ভাবে গরু হলেও কথা তো নয় মন্দ,
‘না হয় তুই ভাইই হলি, ঝগড়া কর বন্ধ’।
ব্যাঙ-গরু দুই ভাই, নামে গাবতলীতে,
ভাড়া দিতে গিয়ে দেখে টাকা নাই থলিতে,
ব্যাঙ বলে, ‘ভাই গরু, পকেট তো কাটা’।
গরু বলে, ‘জানতাম, কপালই তো ফাটা’।
‘চিন্তা কি?’, ব্যাঙ বলে, ‘তুই হোথা দাঁড়া’,
হাটে গরু বেচে ব্যাঙ দিলো বাস ভাড়া।
গরু তো বসে আছে ব্যাঙ ভাই এলো না,
একসাথে খাবে বলে খড় ভুষি খেলো না।
কিছু পরে গরুটার মনে হল সন্দ,
দড়ি-টড়ি নিয়ে এসে কেন করে বন্ধ?
লোকে এসে ওরে নিয়ে করে দেখি দামদর,
সামনেই কোরবানি, প্রাণ ভয়ে জড়োসড়।
গাঁয়ের গরু, শরীর ভালো, দাম উঠলো আশি,
নিজের দাম শুনে গরু বুক ফুলিয়ে খুশী।
অবশেষে ষাট হাজারে বিকোলো যে গরুটা,
মালিকের মুখ দেখে শুকালো তার বুকটা।
মালিক না কসাই সে দেখা বোঝা যায় না,
নিজেকেই ভয় পাবে, যদি দেখে আয়না।
বসে বসে খেয়ে দেয়ে গরু হলো মোটা বেশ
কালকেই কোরবানী, মালিকের নির্দেশ।
গরুটা বুঝে গেলো, সুখে থাকার দিন শেষ
হেথা আর থাকবো না, ছেড়ে দেবো এই দেশ
দড়ি ছিঁড়ে, গুঁতো মেরে গরু দিল চম্পট,
‘অতিথিকে কোরবানি, কত বড় লম্পট।’
বাসে বসে শুনেছিল ব্যাঙ যাবে মতিঝিল,
কিভাবে যে খুঁজে ফেরে সাথে নাই মোবাইল।
হঠাত পেপারে দেখে কোট পরে আছে ব্যাঙ,
বিষম আর হোঁচট খেয়ে মচকাল দুই ঠ্যাং।
ব্যাঙ ভাই এখন যে ধনী, কোটিপতি,
আর আমি গরু, কপালে যে আছে দুর্গতি।
অতিকষ্টে খুঁজে পেয়ে, গেলো গরু বাসায়,
‘কে তুই? কই যাস?’ দারোয়ানে শাঁসায়।
‘গিয়ে বল গরু ভাই আসিয়াছে দুয়ারে’।
‘কতো গরু এলো গেলো ঢুকিয়েছি খোঁয়াড়ে’।
দমে গিয়ে গরু ভাবে চলে যাই বাড়ি,
ঘুরেছে যেই, গেটে এসে থামে দামি গাড়ি,
গাড়ি থেকে ভিলেন স্টাইলে, নামে কালো জুতা,
পুরো বডি আগে নামে, পরে নামে মাথা।
ওরে বাবা, এটা কে? চোখে সানগ্লাস,
সেই ব্যাঙ? লুঙ্গি পরে চড়েছিল বাস?
গরুতো ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে গলা,
ফিরে আসে খেয়ে বডিগার্ডের কান মলা।
ব্যাঙ দেখে চিনে ফেলে, ‘ওরে সব্বোনাশ,
এই গাধা গরুতো সব করে দেবে ফাঁস’।
‘আরে ভাই কতোদিন খুঁজেছি যে তোমারে’।
‘এই তো, এসে গেছি, সাথে নাও আমারে’।
ঘরে এনে চুপিচুপি ব্যাঙ বলে গরুকে,
‘কেমন লাগে আমাকে এই নতুন মোড়কে?’
গরু বলে, ‘মন্দ নয়, ঘটনাটা বল কি?’
‘বলিতেছি, আগে তুমি খাও মুড়ি-মুড়কি,
মতিঝিলে গিয়ে দেখি বিশাল শেয়ার বাজারে,
কোটি কোটি টাকা ওড়ে, মানুষ শত হাজারে,
বেশী নয় একটু, ধোঁকা দিয়ে সটকে,
একটু হলেই দিতো মার, ঘাড় যেতো মটকে,
সেথা থেকে টাকা নিয়ে চলে যাই ব্যাংকে
ম্যানেজার ঘুষ নিয়ে ঋণ দেয় ব্যাঙকে।
সেই ঋণ এখনও ফেরত তো দেই নাই,
সম্মান? টাকার কাছে কোন কিছুর ছাড় নাই’।
গরু বলে, ‘চোর তুমি, আমাকেও সাথে নাও’,
ব্যাঙ ভাবে, ‘তুমি তবে মোর হয়ে জেলে যাও’।
ব্যাঙের দোষে সাজা পেয়ে জেল খাটে গরুতেই,
ছোট চোর এভাবেই ধরা খায় শুরুতেই।
বড় চোর ব্যাঙ বাবা, এসি খায় আরামে,
ব্যাঙ্গরুর গল্পটা শেষ করি্…… শরমে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৪