কথাটা হচ্ছে "ধুম্রপান নিষিদ্ধ" এবং ধুম্রপান করলে ফাইন একশ টাকা'র বদলে এখন দু'শ টাকা এই নিয়ে। এখন আমাদের দেশের যত্র তত্র এই বেদবাক্য ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ষ্টেশনে এবং ট্রেনেতো সিগারেট টানা বহুকাল আগে থেকেই নিষিদ্ধ হয়েছে। বাস ষ্ট্যান্ডে সিগারেট টানা যেত তবে বাসে টানা যেতনা। অনেকে টানতেন, সহযাত্রীদের বিশেষ করে মহিলা-সহযাত্রীদের চেচামেচিতে আধখানাতেই ফেলে দিতে হতো। হাসপাতালে টানা যেত - কেউ ফাইন করতে আসতোনা। এখন পাবলিক খুব কড়া হয়েছে। হাসপাতালেও সিগারেট টানা যাচ্ছেনা। সমস্ত সরকারী অফিসে সিগারেট টানা সম্প্রতি নিষিদ্ধ হয়েছে। মহাকরণেও নিষিদ্ধ হয়েছে। আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সিগারেট টানেন। প্রকাশ্যেই টানেন। তবে মহাকরণে টানতে দেখিনি।
সরকার দেখেছে এত করেও সিগারেট টানা কমানো যাচ্ছেনা,তাই আমাদের মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফতোয়া জারী করেছেন যে, সারা দেশের কোনো স্থানে প্রকাশ্যে সিগারেট টানা যাবেনা। টানলেই দু'শ টাকা ফাইন এবং ফাইন নেওয়ার জন্য প্রচুর সিগারেট-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যারা মাটি ফুরে বেরিয়ে ফাইন আদায় করে নিচ্ছে। আমাদের রাজ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী'র ওসব বালাই নেই। তিনি সিগারেটতো খানই, সাথে সাথে বিড়িও ফোকেন।
কোলকাতায় বিপদে পড়েছি দু-বার । ট্রেনে একবার। রাতের ট্রেনের টয়লেটে গিয়ে সিগারেট ফুঁকে যাহা বেরিয়েছি ব্যস, পুলিশকে দু'শো টাকা ফাইন। যদিও রসিদ দিয়েছে।
বাড়ীতেও সিগারেট টানা নিষিদ্ধ। বউ'র গালাগালির ভয়ে ঘরের ভেতর সিগারেট টানা যাচ্ছেনা। ছাদে গিয়ে টানবো তারও উপায় নেই। পেছন পেছন যম গিয়ে হাজির। টয়লেটে গিয়েই শান্তিতে টানা যাচ্ছে।
আমাদের অফিসে এই একুশে আইন চালু হলেও কড়াকড়িটা এখনও নেই। অফিস-চেম্বারে নিশ্চিন্তে ধুমসে সিগারেট টানা যাচ্ছে। বাধা কেউ দিচ্ছে না। কিন্তু কতদিন কে জানে। যেভাবে সবাই হাত ধুয়ে সিগারেটের পেছনে লেগেছে! আরে বাবা সিগারেটের উৎপাদনটা বন্ধ করে দিলেইতো হয়। তা করা যাবে না। তাহলে উৎপাদন শুল্কটা মার খাবে যে। বিশাল অঙ্কের টাকা রোজগার কমে যাবে! তাহলে আমরা যারা সিগারেট টেনে তোমাদের রাজস্ব দিচ্ছি তাদের ঘেটে কি লাভ? মাননীয় অর্থ-মন্ত্রী জানেন নিশ্চয়ই। তিনি সিগারেট টানেন কিনা জানিনা।
আর আমি দিনে কটাই বা সিগারেট খাই। এই ধরুন সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের সাথে এককাপ চা। চা'র পরে একখান সিগারেট না হলে খবরগুলো ঠিক জমেনা।
তারপর তাড়াতাড়ি চানটান করে অফিস যাবার তাড়া থাকে। টয়লেটে একটা সিগারেট না হলে আমার আবার "ইয়ে" হয়না। খেতে খেতেই অফিসের গাড়ী এসে পড়ে। গাড়ীতে একটা সিগারেট না হলে টেনসনটা আবার কমেনা। অফিসে গিয়ে প্রাথমিক কাজ কাম শুরু করার আগে একটা সিগারেট টেনে নিয়ে কাজ শুরু। তারপর ফাইল আসে ফাইল যায়। আসে চা-এর পর চা। সিগারেটের পর সিগারেট। সহকর্মীরা আসেন। চা আসে । চা'এর পর সিগারেট না হলে চলে কি? প্রতিদিনই কাজের ফাকে "মনের কথা" অন্তত পক্ষে একবার সিগারেট ফুকতে আসবেই। তখন দুজনে মিলে জম্পেস করে সিগারেটে টান। দিনে খুব কম করে পনেরো থেকে বিশ কাপ চা। (হিসেবটা রাখবেন)। প্রতিবারই চায়ের পরে সিগারেট। কোনো ভিজিটার এলে চা-টা দিয়ে আপ্যায়ণ। সেরকম বুঝলে সিগারেটও। সিগারেট দেওয়া নেওয়াও চলে। (এই ব্লগটা এখন লিখছি, সিগারেটে টান না দিলে লেখাটাই আসবেনা।)
বড় সাহেবের সঙ্গে ঝামেলা, সিগারেট আপনার আত্মসন্মান ফিরিয়ে দেবে। বউ'র সঙ্গে ঝগড়া, সিগারেট আপনাকে আত্মপ্রত্যয় দেবে। কোথাও একা একা বোর হচ্ছেন, সিগারেট আপনার সঙ্গী । কোনো অনুষ্ঠানে/পার্টিতে আপনার সঙ্গী নেই তো কি, সিগারেটতো আছে। আপনার নিজেকে স্মার্ট মনে হবে।
রাতে ঘুম আসছেনা, ছাদে গিয়ে একটা সিগারেট টেনে এলে দেখবেন ঘুম এসে যাবে। সংসারের ঝামেলায় টেনসন? সিগারেট ফুকুন। নো টেনসন। ছেলে-মেয়ের কোনো সংবাদে উদ্বিগ্ন, নো টেনসন, সিগারেট টানতে টানতে ভাবুন, সমাধান বেরিয়ে আসবে। (কটা সিগারেট হলো, হিসেব করেছেনতো?) সিগারেট খাওয়া ছাড়া যায়?
তবে যাই হোক, সিগারেট খেলে শরীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি এটাতো রন্ধ্রে রন্ধ্রে সত্যি । সুতরাং ফাইনটা দু'শো থেকে বাড়িয়ে দু হাজার করা উচিৎ সঙ্গে তিরিশ দিনের জেল। জেলে গেলে সিগারেট খাওয়াটা কমবে। আইনটা কড়া হাতে লাগু করা দরকার।
আমার দু'কাল গিয়েছে। তিনকালের পরেই টেসে যাবো। চার কাল আর আসবে কিনা জানিনা। আমার এই স্বীকারোক্তি থেকে কি বার্তা পেলেন।
সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন স্বাস্থ্যবান হয়ে বাঁচে সে চেষ্টাই আমাদের করে যেতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে সিগারেট খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। আসলে "Life is great।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৩:০১