somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা পহেলা বৈশাখ পালনের বিবর্তন।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমে জানার চেষ্টা করি বাংলা পঞ্জিকা, পহেলা বৈশাখ এবং তার উৎপত্তি সম্পর্কে, পহেলা বৈশাখ বা বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিন।

হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হত গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর,নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত।

ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে।

প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত।

তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের পাওনা টাকা আদায় করে এবং ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত হিন্দু মালিকানার স্বর্ণের দোকানে।

এবার বলতে চাই আমার দেখা পহেলা বৈশাখ উদযাপন কেমন দেখেছি এবং কেমন দেখছি, আমি গ্রামের ছেলে ছোট বয়সে আমরা পহেলা বৈশাখ মানে বুঝতাম আম বড় হবে, আমের বিয়ে হবে, আমরা আম খাব। এদিকে হিন্দু বাড়ির দরজায় গড়াইয়া (মেলা) বসবে যেখানে ছোট ছোট হরেক রকম অস্থায়ী দোকান থাকবে, ছোট ছেলে মেয়েদের কাছে আকর্ষণীয় জিনিসপত্র বিক্রি হবে। গড়াইয়াতে আমাদের প্রধান আকর্ষণ থাকত বাঁশি বেলুন সহ বিভিন্ন খেলনা এবং আম কাটার ছুরি।

হিন্দু বা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা বড় বট গাছের গোরায় কিংবা তুলসী গাছের গোরায় এই দিনে পুঁজা দিতে দেখেছি।

গড়াইয়াতে ছয় গুটি দিয়ে এবং চরকা দিয়ে জুয়া খেলা হত, জুয়া মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ বিষয় হলেও, নামে মাত্র মুসলিমরা জুয়া খেলতে গড়াইয়াতে যেত এবং মাঝে মধ্যে এই নিয়ে হাঙ্গামাও হত।

আমার ছোট বয়সে একবার ঢাকায় এসেছিলাম বড় ভাই বিদেশ যাওয়ার সুবাদে, যে দিন বড় ভাই ঢাকা ত্যাগ করলেন তার পরদিন পহেলা বৈশাখ, আমার সাথে এসেছিল আমার চাইতে বয়সে বড় আমার এক বেয়াই, তিনি খুব খুশি আগামী দিন পহেলা বৈশাখে ঢাকায় রমনা পার্কে বেড়াবে এই জন্যে। ঢাকায় উঠেছি খালার বাসায়, বেয়াইয়ের সমবয়সী এক খালাত ভাই আছেন।

খালাত ভাই, বেয়াই আমিসহ সকালে বের হলাম, রমনা পার্কে লাল সাদা কাপড় আর মাথায় ফুল লাগিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে সুন্দরি মেয়েরা হইচই করে গান গেয়ে গুরে বেড়াচ্ছে, গান বাজনা হচ্ছে হাজার হাজার নারী পুরুষ রাস্তায় এবং এইদিনই আমি দেখলাম অন্যরকম এক পহেলা বৈশাখ।

খালাত ভাই আর বেয়াইসহ চটপটি, সিঙ্গারা, বুট বাজা, জিলাপি ইত্যাদি হাবিজাবি খোলা দোকান গুলো থেকে গুরে গুরে খেয়েছি যা আমার কাছে খুব মজার ছিল। বেয়াই আর খালাত ভাই মেয়েদের ভীরে অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করেছে, তা আমি তখন না বুঝতে পারলেও এখন বুঝি।

ঐ দিনের একটি ঘটনা না বললেই নয়, তখন মোবাইল ব্যবহার ছিলনা, আমরা তিন জন রমনা পার্কের ঘাসের উপর বসে আছি, আমাদের থেকে কিছুটা দূরে ফুল গাছের নিছে দুইটা মেয়ে বসে আছে। তারাও অন্যদের মত বৈশাখী সাজে সেজেছে, বেয়াই ওই মেয়ে দুইটির একটিকে দেখিয়ে খালাত ভাইকে বলল, এই মেয়েটার সাথে কথা বলে যদি ঠিকানা আনতে পার, তাহলে আমারা তিন জনে বিরানি খাব এবং টাকা দিবে বেয়াই। খালাত ভাই রাজি হয়ে মেয়ের পাশে বসে দীর্ঘ আলাপ সেরে ঠিকানা নিয়ে নিলো এবং আগামীতে কোথায় দেখা করবে সে ডেইট ও করে নিল, আমরাও তার সাথে ছিলাম।

আমি দেখে আশ্চর্য যেমন হয়েছি ভয়ও পেয়েছি, অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে যে ভাবে কথা বলে ঠিকানা নিলো, তা গ্রামে হলে মার খেয়ে ভুত হয়ে যেতে হত।

সবার কাছে আবেদন, পহেলা বৈশাখ পালন করতে যেয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করি, নিজের ধর্মের খেলাপ করে পাপী না হই। অন্যের ধর্ম পালনে যেন বাধা হয়ে না দাড়াই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:০৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উপমা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:১৭


ছবি: ইন্টারনেট

আজ তোমার ছুটি দিয়ে দিচ্ছি,
ভোর আর সাঁঝের বেলায় দিন রাত্রি মিলনের যে সময়টুকু পায়,
সেটুকু সময়ও আমার সাথে ছলনা করতে বিন্দুমাত্র ভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক জিয়ার কি হবে তাহলে!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২

আজকের এই বিশেষ দিনে নাহিদ ইসলাম ঠিক সকাল ৯টায় উঠে দেখলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে শুভেচ্ছাবার্তায়। কেউ লিখছে "আমাদের ভবিষ্যতের নায়ক", কেউ বলছে "নেক্সট লিডার"।

চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নাহিদ ভাবছেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ জন্মদিন নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৪



জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল নাহিদ ইসলাম।তোমরা এই জেন-যি প্রজন্ম সবাই আমার সন্তানের বয়সি বলে তুমি হিসাবে সম্বোধন করে এই পোস্ট লিখছি। রাজপথের মিটিং মিছিল থেকে জুলাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দূর্নীতিমুক্ত ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৬


কালের কন্ঠ(বসুন্ধরা গ্রুপ) গত ২১শে এপ্রিল সংবাদ করেছিলো দুদকের চেয়ারম্যান মন্তব্য করেছেন "অন্তবর্তী সরকার দূর্নীতিমুক্ত"। তিনি কিভাবে জানলেন যে সরকার দুর্নীতিমুক্ত ? একজন সংবিধিবদ্ধ স্বতন্ত্র সংস্থার প্রধান হয়ে কোনোরূপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেহেশত - দোযখ আর ফেরেশতা নিয়ে আমার চিন্তা-ভাবনা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১৩

আমার প্রিয় মানুষদের একজন রাজীব নূর ভাই। তিনি তাঁর মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলছেন। আমি তাঁর ভিডিওগুলো দেখি। সেগুলো আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি তাঁর সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×