মহান স্বাধীনতার এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, স্মরণ করছি মেজর জিয়াউর রহমানকে, স্মরণ করছি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের কে, আমি সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আমরা জানি, এই দিনে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করে, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন করা হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
স্বাধীনতার ৪৩ বছরে আমাদের প্রাপ্তির ভাণ্ডার অনেক বিশাল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বলা যায় হয়নি। তারপরেও যা আমাদের প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে তাও কম নয়, আমারা পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিতে পেরেছি, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি, গার্মেন্টস শিল্পে আমরা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করছি, আমাদের গড়ে উঠেছে মেধাবী মানব সম্পদ যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে, আমাদের আছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আমরা এভারেস্টের ছুড়া জয় করতে পেরেছি...... ক্রিকেটে আমাদের ছেলেরা পৃথিবীর অন্য সব শক্তিশালী দেশের সাথে লড়ার শক্তি অর্জন করেছে, আমাদের দেশপ্রেমিক সাহসী সেনাবাহিনী শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে শান্তি রক্ষায় কাজ করছে।
আমরা স্বাধীনতা অর্জন কারী সেই গর্বিত জাতি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে আমরা বিভিন্ন রকম বিভক্তি দেখতে পাই... স্বাধীনতার প্রায় ৪৩ বছর পর আমরা যখন দেখি, আমাদের মধ্যে কেউ পাকিস্তানের পক্ষে আবার কেউ ভারতের পক্ষে কিংবা অন্য কোন দেশের পক্ষে কথা বলেন বা তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেন, তখন আমরা ব্যথিত হই।
আমরা চেয়েছি আমাদের ন্যায্য অধিকার, আমরা চেয়েছি গণতন্ত্র, আমাদের ভোটের অধিকার, পাকিস্তানি হানাদারেরা আমাদের অধিকার না দিয়ে করেছে নির্মম অত্যাচার, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমরা আমাদের সেই সব অধিকার পূর্ণ ভাবে পেয়েছি তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো না। এখনো আমাদের নদীতে সাগরে অজ্ঞাত লাশ বেসে উঠে, আজও আমাদের দেশে অধিকার আদায়ের মিছিলে নির্বিচারে গুলো চলে, আমার মাতৃভূমির প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি আজ নীতিতে পরিণত হয়েছে, রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে নেই গণতন্ত্রের চর্চা, ছাত্র রাজনীতিতে স্থান করে নিয়েছে সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত, অছাত্ররা। দীর্ঘ দিন যাবত হচ্ছেনা ঢাকসুর নির্বাচন, তৈরি হচ্ছেনা দেশপ্রেমিক বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতা।
আমাদের প্রত্যাশা শুধু বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করবেন বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশে হবে সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা, রক্ষিত হবে জনগণের ভোটাধিকার সহ সকল অধিকার।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। কিন্তু আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৩তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও কম এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশে বর্তমান জনসংখ্যা ১৫.৫৯ কোটির বেশী এবং বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, বিশ্বের সকল মুসলিম আমাদের ভাই, মুসলিম বিশ্বের সাথে আমাদের দেশের সরকারের ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে। দীর্ঘ দিন যাবত সৌদি আরব সহ অনেক গুলো মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র, যে সকল রাষ্ট্র থেকে আমাদের দেশে বিশাল অংকের রেমিটেন্স যায়, সে সকল দেশে দীর্ঘ দিন থেকে বিসা জটিলতার কারণে নতুন শ্রমিক আসতে পারছেনা। এই জটিলতা নিরসনে সরকারকে অতিদ্রুত ভূমিকা রাখতে হবে।
আমাদের ফরেন পলিসি এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আমরা দেশের সচেতন নাগরিকরা তাদের কে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাই।