বি এন পি জামায়াত জোট সরকারের সময় বিদ্যুৎ এর দাম বর্তমানের চাইতে অনেক সহনীয় ছিল। বর্তমান সরকার যে ভাবে বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি করছেন ঐ সময় এই রকম বাড়ানোর নজির নাই।
তখন আমরা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী ও ঐ ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের মুখে পেনা বের হতে দেখেছি একটা কথা বলতে বলতে সেটা হচ্ছে তারেক জিয়া এবং তার বন্ধুর খাম্বা ব্যবসা। তখন মুখে মুখে ছিল খাম্বা বসানো হচ্ছে বিদ্যুৎ লাইন টানা হচ্ছে কিন্তু ঠিক মত বিদ্যুৎ দিচ্ছে না। খাম্বা এবং লাইন টেনে দুর্নীতি করা হচ্ছে! এবং এই বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে কানসাটে খুব জোরালো আন্দোলন হয়েছিল, তখনকার বি এন পি জামায়াত সরকার কনসাটের মানুষের দাবী মানতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তারেক জিয়াকে একটা টকশোতে বলেছেন , প্রথমে বিদ্যুৎ চাহিদা তৈরি করে তারপর উৎপাদন শুরু করলে সরকার অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হবে না।
আমরা বিএনপি সরকারের সময় থেকে শুনে আসছি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা। বি এন পি সরকারের সময় প্রায় ৬৮ হাজার কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ করা হয়েছিল। বিদ্যুতের যা চাহিদা ছিল তার অর্ধেক ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। লোড-শেডিং গরমে খুব বেশি যখন হয়েছে তখন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা দৈনিক। বিদ্যুতের দামটা অসহনীয় ছিলোনা।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগে ভোটের জন্যে মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০১২ তে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সমস্যা তারা দুর করে পেলবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় তিন বছর নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া বন্ধ রাখে কিন্তু নতুন লাইন টানা বন্ধ রাখেনি। তিন বছর সংযোগ দেয়া বন্ধ-রেখে, কিন্তু ৭ মাসে নতুন সংযোগ দিয়েছে ২১ লক্ষ এগার হাজার প্রায় । আওয়ামীলীগ দাবী করছে তারা সরকারে আসার পর ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নতুন উৎপাদন করছে। তাহলে টোটাল বিদ্যুৎ উৎপাদন ৭২০০ মেগাওয়াট হওয়ার কথা সরকারের হিসাবে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করেছে। রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আছে ২২০০ মেগাওয়াট কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৭০০ মেগাওয়াটের মত, কিন্তু রেন্ট খরচ দিয়ে যাচ্ছে ২২০০ মেগাওয়াটের। সেই হিসেবে সরকারের ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নতুন উৎপাদনের হিসাব কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে টোটাল বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪২০০ মেগাওয়াটের মত। সরকার বাস্তবে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ৬০০ মেগাওয়াটের মত কিন্তু খরচ দেখাচ্ছে ৩৬০০ মেগাওয়াটের। এইটা পুকুর চুরি না, এটা হচ্ছে সাগর চুরি! খাম্বার মাধ্যমে তারেক যদি চুরি করে থাকে, তাহলে এই সরকার ২২ লক্ষ ১১ হাজার সংযোগ দিতে যে লাইন টেনেছে সে খানে কি ডাকাতি করেনি?
বর্তমানে বাংলাদেশে যে সংযোগ দেয়া আছে সে খানে বিদ্যুতের চাহিদা ৭০০০ মেগাওয়াট।
সরকারি হিসেবে যদি ৭২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তাহলে বাংলাদেশে বর্তমানে ২০০ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা। সরকার বার বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে গ্রাহক থেকে ৭২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ উঠিয়ে নিলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪২০০ মেগাওয়াট কিংবা তারও কম। আমরা টাকা দিচ্ছি ৭২০০ মেগাওয়াটের আর বিদ্যুৎ পাচ্ছি ৪২০০ মেগাওয়াটের কম। বাকি টাকা বিভিন্ন ভাবে ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে।
আমরা পত্রিকা টিবি মিডিয়ায় খবরে দেখি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা নিচের দিকে যাচ্ছে, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বিদেশী বিনিয়োগ কারীরা তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন, পোলটি শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে ঐ সংযোগ গুলো যে বন্ধ হয়েছে তা কি সরকারের কাছে হিসাব আছে?
সব কিছু হিসাব করলে মনে-হয়না যে ৪২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ এর লোড-শেডিং দৈনিক ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা, আমি গ্রামের কথা বলছি।
বি এন পি সরকারের সময়ে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো কে সচল রাখা হচ্ছে না তার কারণ ‘সিন্ডিকেট সদস্যরা’ অবৈধ ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবসা করতে পারবে না। সুতরাং ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবসাটা চালানোর জন্য এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে না।
কুইক রেন্টাল পদ্ধতির নিয়ম হচ্ছে , আগে নিজেদের স্থায়ী পাওয়ার প্লান্টের কাজ শুরু করতে হবে এবং কাজ চলা কালীন সময়ের জন্যে কুইক রেন্টাল পদ্ধতি গ্রহণ করবে। কিন্তু আমাদের বর্তমান সরকার জনগণের টাকা অপচয় করে, করেছে সম্পূর্ণ উল্টো। উন্নত বিশ্বে কুইক রেন্টাল কোম্পানি গুলো তাদের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রাখে সব সময়। যে দেশের সাথে চুক্তি হয় সে দেশে জাহাজের মাধ্যমে এসে কানেক্ট দিয়ে দেয় খুব সহজে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সরকার কি করেছে!
আমাদের সরকার তার মন্ত্রীদের আত্মীয় সজনের কোম্পানি থেকে এই বিদ্যুৎ কিনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ দেশীয় কোম্পানি গুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারের কাছে বিক্রি করবে কিন্তু সরকার তাদেরকে জ্বালানী সরবরাহ করবে, তাদের দক্ষতা আছে কিনা তা দেখার প্রয়োজন হয়নি। তারা বাংলাদেশের ব্যাংক গুলো থেকে লোণ নিয়ে চায়না থেকে লঙ্কর জঙ্কর যত বাতিল যন্ত্র পাতি আছে সব কিনে নিয়ে আসলো, বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে কি হবে না, তা তারা দেখার প্রয়োজন মনে করে নাই কিন্তু তারা ঠিকই সরকারের সাথে চুক্তি মোতাবেক তাদের পাওনা বাড়া সরকারি কোষাগার থেকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা যেন হরি লুট!
ব্যাংক গুলোতে তারল্য সংকট এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া সকল সমস্যার মূলে হচ্ছে এই বিদ্যুৎ এবং সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত আর ডাকাতি।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ধ্বংসের মূলে আছেন বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহি চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ। তৌফিক ই এলাহি চৌধুরী একজন অকর্মণ্য এবং বিতর্কিত সাবেক আমলা। তার মত একজন ব্যক্তিকে বানানো হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা। এছাড়া আবুল কালাম আজাদের মত একজন অপেশাদার নন-প্রফেশনাল লোককে বানানো হয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মত একটি কারিগরি, জটিল ও স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ের সচিব।
যে যে কারণে কানসাটে আন্দোলন হয়েছিল?
১.কয়েক বছরের মধ্যে মিটার ভাড়া ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৫ টাকা নির্ধারণ।
২. বিদ্যুৎ দিতে পারুক বা না পারুক গ্রাহকসংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ হাজার থেকে ৫৬ হাজারে উন্নীত করণ (প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার ভাড়া বাবদ বিপুল অর্থ আদায় করা যাবে)।
৩. গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করা।
এই সব লক্ষণের সাথে বর্তমানে বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং অসহনীয় লোড-শেডিং যোগ হওয়ায় বিদ্যুতের জন্যে মানুষের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হবে বলে মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ তারেক জিয়া কি বলতে চাইলেন একটু শুনুন।
Click This Link