somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজানের সিয়াম ও চিকিৎসা বিজ্ঞান।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুরআন ও সুন্নাহের প্রতিটি বিধান বিশ্ব মানবতার জন্য কল্যাণকর। শারীরিক-আত্মিক, ইহলৌকিক-পরলৌকিক যাবতীয় কল্যাণ ও চিরশান্তির মূল উৎস। আমাদের জ্ঞানের সঙ্কীর্ণতার কারণে যা ইচ্ছে তা বলার অবকাশ রয়েছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। পৃথিবীর অনেক ধর্মে উপবাস বা রোজা রাখার বিধান রয়েছে। অন্যান্য ধর্মালম্বিদের সঙ্গে মুসলমানদের রোজার পার্থক্য হলো এই যে, মুসলমানরা রোজা থাকর জন্য সেহরি গ্রহণ করে, অপরপক্ষে অন্যান্য আহলে কিতাবদ্বারিরা সেহরি গ্রহণ করে না। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, সেহরিতে পর্যাপ্ত বরকত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও সেহরি কল্যাণকর। রোজাদারগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইফতারি ও সেহরির তাৎপর্যপুর্ণ ও ইতিবাচক ভুমিকা রয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসে পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে এ আশঙ্কায় কেউ কেউ রোজা রাখেন না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, দেহের বেশিরভাগ রোগের সৃষ্টি হয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের ফলে। এমনকি আমাদের গৃহীত খাদ্যদ্রব্যের ২৫ শতাংশ বা ততধিক অংশ অপ্রয়োজনীয়। আমাদের জন্য এ বাড়তি খাদ্যদ্রব্যাদি স্বাস্থ্য রক্ষায় বিপদের কারণ হয়ে থাকে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সর্বক্ষণ আহার, সীমাতিরিক্ত ভোজন ও দুষিত খাদ্য খাওয়ার কারণে শরীরে এক প্রকার বিষক্ত উপকরণ ও উপাদানের সৃষ্টি হয় এবং জৈব বিষ জমা হয়। যে কারণে দেহের নির্বাহী ও কর্মসম্পাদক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো বিষাক্ত উপকরণ ও জৈব বিষ দমনে সক্ষম হয় না। ফলে জটিল ও কঠিন রোগের জন্ম হয়। দেহের মধ্যকার এহেন বিষাক্ত ও দূষিত উপাদান গুলো অতি দ্রুত নির্মলকরণের নিমিত্তে পরিপাক যন্ত্রকে মাঝে মধ্যে খালি করা একান্ত প্রয়োজন। কিছুদিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাকস্থলিকে খালি রাখার কারণে দেহের অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায়। সুতারাং ঐ বিষাক্ত রস শরীরের ভেতর কোনো ক্ষতিসাধনে সক্ষম হয় না। রোজার সময় উপবাস থাকাকালীন পেটের মধ্যে কোনো খাদ্য সাময়িকভাবে মজুদ না থাকার ফলে শরীরের পরিপাক যন্ত্রের সাহায্যে বিষাক্ত রোগ জীবাণু বা রস জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নিঃশেষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া খাদ্যদ্রব্য হজম ও খাদ্যপ্রাণ তৈরি কারে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণের ব্যাপারে দেহের শক্তি প্রচুর পরিমাণে ব্যয় হয়। আর ঐ জমাকৃত শক্তি দেহের অব্যন্তরীণ পরিচ্ছন্ন সমতা, উন্নয়ন ও নবায়নের কাজে বিরাট সুযোগ পায়। এভাবে দেহের বাড়তি ওজন,রস,চর্বি ইত্যাদি হ্রাস পেয়ে চলাফেরা, কাজকর্মের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রোজা দ্বারা শরীরের মেদ কমাতে রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্যনিয়ন্ত্রণ অপেক্ষায় অধিক কার্যকর।

পাকিস্তানের প্রখ্যাত প্রবীণ চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ হোসেন জানান, যারা নিয়মিত রোজা পালনে অভ্যস্ত সাধারণত তারা বাতরোগ,বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত কম হন।

পাশ্চাত্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. ক্লাইভ বলেন সিয়াম সাধনার বিধান স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত । সেহেতু ভারত,জাপান,ইংল্যান্ড,দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তূলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় রোগ ব্যাধি অনেক কম দেখা যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথিকৃত হিসেবে খ্যাত ডা. হিপেপাক্রেটিস অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে রোগাক্রন্ত দেহকে যতই পুষ্ট করার চেষ্টা করা হোক, তাতে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকবে।

চিন্তাবিদ ডক্টর ডিউই, উপবাস থাকা প্রসঙ্গে বলছেন, রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলি হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগণ মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।'

রাশিয়ার অধ্যাপক ডি এন নাকিটন বলেছেন, তিনটি নিয়ম পালন করলে শরীরের বিষাক্ত দ্রব্যাদি বের হয়ে যাবে এবং বার্ধক্য থামিয়ে দেবে।' তার বর্ণিত নিয়ম তিনটি হলো অধিক পরিশ্রম, অধিক ব্যায়াম, এবং মাসে কমপক্ষে একদিন উপবাস।

প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের কখনো কখনো তিন সপ্তাহ ধরে উপবাস থাকতে নির্দেশ দিতেন।

ডা. অ্যালেক্স হেইগ বলেন, ' রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়।

চিকিৎসকরা আরো বলেন রোজার কারণে সাইকোসোমাটিক জাতীয় ব্যাধিসমূহ রোজা রাখার কারণে তুলনামুলকভাবে কম হয়।
রোজা রাখার কারণে মানবদেহে বিপাক ক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ রোজা পালনকালে মানবদেহে স্ট্রেস হরমোন করটিসোলের নিঃসরণ হ্রাস পায়। অপরদিকে রোজা রাখার কারণে কর্ম উদ্দীপনা ও মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়। এর অন্যতম কারণ হলো রোজা রাখলে মস্তিষ্কের মেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়। রোজা এদিক থেকে সুস্থ দেহ ও মনের জন্য সহায়ক। এ কারণে একজন খ্যাতনামা চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন। রোজা সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হলেও শুধু রোজা রাখলে যে স্বাস্থ্য সুস্থ থাকবে তা নয়। রোজায় স্বাস্থ্যকে নীরোগ রাখতে হলে ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। রোজা পালন শেষে ভাজাজাতীয় খাদ্য অত্যধিক গ্রহণের প্রবণতা কখনো পেটে প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ইফতারি বা সেহরি খাদ্য সহজপাচ্য হওয়া আবশ্যক।

এব্যাপারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানী মুহাম্মদ (সাঃ) কম খাওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বারোপকরেছেন । ক্ষুধা লাগলে খেতে বলেছেন এবং ক্ষুধা থাকতেই খাওয়া বন্ধ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত।
খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুযায়ী পেটের তিন ভাগের অন্তত একভাগ অংশ খালি রেখে খাদ্য গ্রহণ করলে অনেক সময় স্বাস্থগত দিক থেকে নিরাপদ থাকা যায়। মহানবী(সাঃ) এরশাদ করন, রোজা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ। একনাগাড়ে একটি পূর্ণ চন্দ্র মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অসতকাজ, ক্রোধ, লোভ,মোহ, মদ ইত্যাদি দমন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে রোজাদারমাত্রই রোজার মাধ্যমে আত্মসংযমের পরিচয় দিয়ে মিথ্যা, পরনিন্দা, গালাগালি,বদমেজাজ, ফাঁকি দেয়া, নিরর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে নিবৃত থাকবে, সিয়াম সাধনার শিক্ষাই হলো এটি। আর এভাবে সারাবছর চলার এক বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রত্যেক রোজাদার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে পেয়ে থাকে। অতএব রোজার প্রভাব মানুষের ব্যক্তি,পারিবারিক ও সামাজিক এবং রাষ্টিয় জীবনেও প্রবল ভূমিকা রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:২৬
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×