যান্ত্রিক জীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম, কোলাহল, শব্দ ও বায়ু দূষণ এবং সর্বোপরি নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে একটুরো নির্মল প্রশান্তির জন্য আজ আপনাদের নিয়ে যাবো পদ্মা নদীর মাঝখানের জেগে উঠা চরে গড়ে উঠা পদ্মা রিসোর্টে। ফ্যামিলি নিয়ে অথবা বন্ধুদের সাথে জমবেশ আড্ডায় পদ্মা রিসোর্ট হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা।
ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্টের দূরত্ব ৫০ কিমি. সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। পদ্মা রিসোর্ট গড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার নিকটবর্তী পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠা চরে।
অনেক ভাবেই যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্টে। যেতে পারেন বাস সার্ভিসে অথবা নিজের সাথে নেওয়া গাড়ি করে। লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি আসতে পারবেন ঢাকার গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা গাংচিল পরিবহনে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৪৫ টাকা।
অথবা আপনি মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন “গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহন” (মাওয়া-গুলিস্থান-মাওয়া) কিংবা “গোধুলী পরিবহনে” (মাওয়া-গাজীপুর/যাত্রাবারি-মাওয়া)। সেক্ষেত্রে মাওয়া ফেড়ীঘাট যাবার আগেই লৌহজং থানার যাবার পথের চৌরাস্তায় মোড়ে আপনাকে নামতে হবে। পরে রিক্সা অথবা অটোরিক্সাতে ১৫ মিনিটের পথ।
১) মাওয়া ফেরী ঘাট ২) লৌহজং চৌরাস্তা মোড় ৩) লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ী ৪) পদ্মা রিসোর্ট
আর নিজের সাথে গাড়ি থাকলে পথ চিনে যেতে কোন অসুবিধা হবে না। সেক্ষেত্রে যাওয়ার পথে আপনাকে দুই জায়গায় মোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। গাড়ি রাখার জন্য লৌহজং থানা প্রাংগনে আছে সুবিধা মত অনেক জায়গা।
পদ্মার অপলক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য বর্ষার বিকল্প নাই আর সেজন্যই পদ্মা রিসোর্টে এই সময়ে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশী। তাই সরকারী ছুটির দিনে যাবার আগে অবশ্যই আগে থেকে কটেজ বুক করে যেতে হবে। বর্ষার মৌসুমে সরকারী ছুটির দিন ছাড়া অথবা অন্য কোন মৌসুমে কটেজ বুক ছাড়াই আপনি যেতে পারবেন পদ্মা রিসোর্টে। আগে থেকে বুক করার জন্য পদ্মা রিসোর্টের ঢাকা অফিসে আপনাকে বুকিং মানি দিতে হবে। রিসোর্টের সাথে যোগাযোগের সমস্থ তথ্য পাবেন পদ্মারিসোর্ট.নেট এ।
লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটে গিয়ে দেখতে পারবেন সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ২-৩ টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিডবোট। এইগুলোই আপনাকে পৌঁছে দিবে ওপারের রিসোর্ট এ।
লৌহজং থানার কো-অর্ডিনেটঃ 23°28'00.31"N 90°19'54.99"E
১) লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ী ২) পদ্মা রিসোর্ট
লৌহজং থানার ঘাট থেকেই আপনি পদ্মা রিসোর্টের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পারবেন। সুবিশাল কোনো অট্টালিকা নয়, কুঁড়েঘরের আদলেই তৈরি এই রিসোর্টের অবকাঠামো। বিশাল পদ্মার মাঝে রং বেরঙ্গের কটেজগুলো যেনো আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পদ্মার বুকে জেগে উঠা এই বিশাল বিস্তৃত চরটি যেন প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য নিয়ে নিয়ে দীর্ঘকাল দাঁড়িয়ে আছে। রিসোর্টের চারপাশ ঘিরে কাশবনের বিশাল ঝাড় আর সামনের দিকে চরের সাদা বালির উপর ঘন ঘাসের সমারোহ। এ যেন আকাশ, সবুজ আর নদীর নিঃসর্গ মিলনমেলা। বর্ষায় ফুলে ফেঁপে উঠা পূর্ন যৌবনা পদ্মা যেন এই রিসোর্টের রুপ বারিয়ে দেয় বহুগুন। এই সময় কটেজের নিচে পানি চলে আসায় দুর থেকে মনে হয় পানির উপর ভাসছে পদ্মা রিসোর্ট।
পদ্মা রিসোর্টের কো-অর্ডিনেটঃ 23°27'46.50"N 90°19'55.22"E
পদ্মা রিসোর্টে পৌঁছানোর পরেই রিসোর্ট অফিস থেকে আগে থেকে বুকিং দেওয়া অনুযায়ী আপনাকে কটেজ বুঝিয়ে দিবে। মোট ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজের দিয়ে গড়ে উঠা এই রিসোর্ট। এর মধ্যে ১২টি কটেজের নাম করা হয়েছে বাংলার ১২ মাসের নাম অনুযায়ী আর বাকি ৪টা নাম হয়েছে ঋতুর নামে। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার পছন্দের কটেজের নাম উল্ল্যেখ করতে পারেন বুকিং এর সময়ই। নাহলে যে কটেজগুলো বুক হয় নাই সেগুলোই জুটবে আপনার ভাগ্যে। আপনি যদি একটু নিরিবিলি থাকতে চান তো সর্বপশ্চিমের কটেজগুলো হবে আপনার জন্য আদর্শ যা বাংলা মাসের নাম অনুযায়ী শুরু।
আপনি সারাদিনের জন্য অথবা রাত্রি যাবনের জন্য কটেজ নিতে পারেন। সারাদিন বাবদ কটেজ ভাড়া ২৩০০টাকা (২০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট) আর রাতের জন্য ৩৪৫০ টাকা (৩০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট)। প্রতিটি কটেজে থাকতে পারবেন ৮জন করে। প্রতিটি কটেজ সাজানো সুন্দর আসবাবপত্র দিয়ে৷ ঘরের চাল সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি ৷ দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে ৷ ডুপ্লেক্স এই কটেজের নিচ তলায় আছে এক সেট সোফা ও টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড, দেড় তলায় অত্যাধুনিক ফিটিংসহ (কমোড, বেসিন, লুকিং গ্লাস, শাওয়ার) ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাথরুম আর বসার জন্য সুবিশাল বারান্দা, ২য় তলায় পাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো ২টি সিঙ্গেল বেড, মধ্যখানে সেন্টার টেবিল, ওয়ারড্রোব, লাইট, ফ্যান ইত্যাদি।
রিসোর্টে বিদ্যুৎ সরবারোহ জন্যে আছে জেনারেটরের ব্যবস্হা। যদিও ফ্যান অথবা এসির অভাব আপনি অনুভব করতে পারবেন না। চারদিকে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় সারাক্ষনিই পাওয়া যায় মৃদু ঠাণ্ডা বাতাসের স্পর্শ৷
রুমে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার কথা মনে হতে পারে। চিন্তা নেই, পদ্মা রিসোর্টের সু-সজ্জিত রেস্টুরেন্ট যা ২০টি টেবিল চেয়ার দিয়ে সাজানো সেখানে আপনি ২০০ জন লোক নিয়ে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোন পার্টি আয়োজন করতে পারেন। রেস্টুরেন্টে যাবার আগে আপনাকে রিসোর্ট অফিস থেকে জনপ্রতি ৩৫০টাকা (৩০০টাকা + ১৫% ভ্যাট) দিয়ে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। দুপুরের খাবার মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, ইলিশ ফ্রাই (১ পিস), মুরগীর মাংস (বড় ১ পিস), সবজি, সালাত। মিনারেল ওয়াটার আলাদা ভাবে কিনতে হবে যার ১লিটারের দাম ৪০টাকা। পদ্মা রিসোর্টে খাবার জিনিসের দাম অনেক বেশি। বাহিরে থেকে খাবার আনার অনুমতিও নাই। পাবেন কোমলপানীয় (ক্যানঃ ৪০ টাকা, পেপসি ১.৫ লিটারঃ ১০০ টাকা, পেপসি ২ লিটারঃ ১৫০ টাকা)।
জমবেশ একটা খাওয়ার পরে রেস্টুরেন্টের বিশাল বারান্দায় চা হাতে বসে থাকতে পারেন কিছুক্ষন। দূরে পদ্মা নদীতে রং-বেরঙ্গের পাল তোলা নৌকা আর কাশবনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু বাতাসের দোলা। দেখতে দেখতে কেটে যাবে বেশ কিছুটা সময়।
বিনোদনের জন্য অতুলনীয় এই পদ্মা রিসোর্ট৷ ভরা বর্ষায় যখন পানির লেভেল কটেজের পাটাতন পর্যন্ত চলে আসে তখন আপনি রাবার বোটে ঘুরতে পারেন রিসোর্টের সীমানায়। নদীর শীতল পানিতে গোসল করতে পারেন অথবা স্পিডবোট (প্রতি ঘন্টা ২৫০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট), সাম্পান নৌকা (প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট) অথবা ট্রলার (প্রতি ঘন্টা ৬০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট) করে ঘুরতে পারেন পদ্মা নদী আর উপভোগ করতে পারেন পদ্মার অপার সৌদর্য্য।
শুস্ক মৌসুমে আপনি ইচ্ছে করলেই এই বালুচরে করতে পারেন পিকনিক ৷ ইচ্ছে করলে চড়তে পারেন ঘোড়ার পিঠে৷ সময় কাটানোর জন্য আছে দোলনা, ইজি চেয়ার। রাতে করতে পারেন ক্যাম্পফায়ার ও বারবিকিউ।
পদ্মা রিসোর্ট পূর্ণিমায় হয়ে ওঠে মায়াবি এবং সকালটি দেখলে মনে হবে ক্যানভাসে আঁকাঁ এক মনোহর ছবি ৷