somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য রচনা: জনৈক বাচাল কন্ডাক্টর মামা আর আমার বাসে একদিন। :D:D:D:D:D

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতঘড়িটায় সময় দেখলেম, "যাহ! ৭.৪৫ বাজে, মানে বাস মিস।" আর কি করা, আজকে তাহলে আর ভারসিটির বাসে যাওয়া হচ্ছে না। অগত্যা রাস্তার পাশে দাড়িয়ে পড়লাম বাইরের বাস ধরার জন্য।
দশ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছি, কোন বাসের দেখা নাই X( প্রতিদিন যেখানে মিনিটে ২ টা করে বাস আসে, আজকে সেখানে বাসের জন্য হাহাকার? একে ভারসিটির বাস মিস করে মেজাজ খারাপ তার উপর বাইরের বাসের দেখা নাই। ধৈর্য ধরে দাড়িয়ে রইলাম। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্তির সীমা যখন চরমে তখন শেষপর্যন্ত একটা বাসের দেখা পেলাম।
দূর থেকে বাসটাকে দেখে মনটা যাও একটু খুশি হয়ে উঠেছিল, বাসটা কাছে আসতেই তা কর্পূরের মত উবে গেল। X( X( X(
বাসে তিল ধরানোর ঠাই নাই। মানুষে ঘাড়ের উপরে যেন মানুষ দাড়িয়ে আছে। জানালা দিয়ে ঝুলে আছে কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ বাসের ভিতরে বোচকা নিয়ে দাড়িয়ে। বাসটার প্রায় সব গ্লাসই ভাঙা। বাসটা কেমন যেন ডানদিকে হেলে গিয়েছে, আমার সন্দেহ হল এই অবস্থা হয়েছে মানুষের ভারে X(X(X( আমার এই ক্ষুদ্র জীবনেও আমি কোন বাসের এই কন্ডিশন দেখিনি। একে মিউজিয়ামে দিলে দিনে দুইপয়সা কামাই হয়ে যাবে আর কি। X(X(X(
ভারসিটির জন্য দেরি হয়ে যাবে তাই আর রিস্ক না নিয়ে বহু কষ্টে ঠেলে ঠুলে উঠলাম বাসটায়। উঠার সময় কি যুদ্ধ হয়েছে তা নাই বা বললাম। X(X(X(
বাসে ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু পেরিয়ে উঠে প্রথমেই আমি আমার অবস্থাটা একটু রিভিউ করে নিলাম। X(X(
প্রথমতঃ আমি আমার হাত উপরে করে দাড়িয়ে আছি, এত চাপাচাপিতে নিচে হাত নামানোর অবস্থা নেই। X(X(X(
দ্বিতীয়তঃ আমার মাথা বাসের ছাদের সাথে লেগে আছে, খালি লেগে নেই ভালভাবেই লেগে আছে, ফলে আমাকে ঘাড় কাত করে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। X(X(X(X(
তৃতীয়তঃ আমার ঘাড়ে একটা ব্যাগ থাকার কথা। বর্তমানে আমি ব্যাগটার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছি না। অর্থাৎ আমার ব্যাগটা ভীড়ের অতল গভীড়ে অদৃশ্য। X(X(X(
চতুর্থতঃ আমার পকেটের উপর আমার কোন অধিকার নেই, অর্থাৎ ভীড়ের মধ্যে যে কেউ এই মুহূর্তে আমার পকেট থেকে তার পছ্ন্দ মত জিনিস নিয়ে নিতে পারে, তাতে আমার বাঁধা দেবার কোন উপায় নেই। X(X(X(
পঞ্চমতঃ বাসটায় এত পরিমাণ লোক উঠেছে যে আমার মনে হচ্ছিল যে আমি না হোক, অন্য কোন মানুষ যে কোন সময় দম বন্ধ হয়ে মারা পড়তে পারে। তাই অপেক্ষায় থাকলাম দেখতে যে কার আগে দম বন্ধ হয়। X(X(X(

এইরকমের একটা বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতিকে আরো বিরক্তিময় করে তুলতে আবির্ভাব হলো কন্ডাক্টর মামার। X(X(X(
কন্ডাক্টর মামা ভীড় ঠেলে ভাড়া কাটতে লাগলো, আর আমি আমার আজকের এই বিশেষ দুর্ভাগ্যের কথা ভাবতে লাগলাম।
কন্ডাক্টর মামা তার ভাড়া কাটতে কাটতে শেষমেষ আমার কাছে এসে বললো," মামা ভাড়াটা দেন।"
আমি বললাম,"যাব তো জাহাঙ্গীরনগর, ভাড়া পরে নিও।"
কন্ডাক্টর মামা বললো,"কেন মামা? দিয়া দেন না ভাড়াটা, পিলিজ মামা, দেন না, দিয়া দেন ভারাটা পিলেজ.............."
আমি বললাম," আরে মামা, হাত নামাইতে পারতেছিনা দেখতেছ না? পড়ে নিও ভাড়া, কেবল তো গাবতলী।"
কন্ডাক্টর মামার ঘ্যানর ঘ্যানর চলতেই থাকলো, "মামা দিয়া দেন, পিলিজ পিলিজ, গরীব মানুষ, পিলিজ পিলিজ।"
আমার বলতে ইচ্ছা করছিলো, " এত বলার কি হইলো, আমি কি ভাড়া না দিয়ে পালায় যাব নাকি? যে ভীড় তাতে তো ওয়ান পিস হয়ে নামতে পারব কি না তার সিওরিটি নাই। X(X(X(X(X(X(X(X(
তারপরও কিছু না বলে মামার ঘ্যানর ঘ্যানরে অতিষ্ট হয়ে বহু কষ্টে আমি পকেট থেকে ১৫ টাকা বের করে দিলাম।
এবার মামা বলে," কত দিলেন ভাড়া তো ৩০ টাকা, আপনে স্টুডেন্ট তাই দিবেন হাফ ভাড়া ১৫ টাকা।"
আমার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল, X(X(X(X(X(
হহু কষ্টে শান্ত গলায় বললাম,"১৫ টাকাই তো দিয়েছি।"
মামা টাকাটা গুনে বললো "অ"
তারপর ভীড়ের মধ্যে আমার পাশেই মামা হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে পড়লো।
আমি জানালা দিয়ে দেখলাম যে বাসটা গাবতলীর জ্যামে আটকিয়ে আছে, আর পাশেই দুইটা প্রায় খালি বাস দাড়িয়ে। হায়রে পোড়া কপাল, ভাড়া দিয়ে দেবার পরেই এটা আমাকে দেখতে হলো। X(X(X(
আর কি করা ? দাড়িয়ে আছি, কন্ডাক্টর মামা অগ্যাত কারনে আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে, মনে হয় তার গল্প করার খুব ইচ্ছা। কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে কন্ডাক্টর আমাকে বললো,"মামা তো তাইলে জাহাঙ্গীরনগরে পড়েন?"
আমি বললাম "হ্যা"
মামা আবার বললো,"তো মামা তাহলে স্টুডেন্ট"
আমি বললাম "হ্যা"
মামা আবার বললো, "মামা কই পড়েন?"
মেজাজটাকে সামলে নিয়ে বললাম,"কেন মামা খালি খালি প্রশ্ন করতেছেন? "
মামা বললো, "না মানে আপনাদের ভারসিটির তো বাস আছে না?"
আমি বললাম,"হ্যা আছে"
মামা বললো,"আজকে কি বাস মিস করছেন?"
বহু কষ্টে মেজাজটাকে সংযত করলাম, বাস মিস না করলে কি আর বাইরের বাসে যাই?
আমি বললাম,"হ্যা মিস করছি।"
মামা বললো,"ওহ হ!" তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,"আজকে অনেক দিন পর জাহাঙ্গীরনগরের স্টুডেন্ট বাসে পাইলাম।"
কন্ডাক্টর মামার কথার মাথা মুন্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। জাহাঙ্গীরনগরের স্টুডেন্ট এতদিন পর পাইলো মানে? X(X(X(X(
আমি "হু" "হাঁ" করে গেলাম।
এই ভীষন বিরক্তিকর পরিবেশে এই বাচাল কন্ডাক্টর মামার বাচালতা আমার কাছে মরার উপর খাড়ার ঘা বলে উপনিত হতে লাগলো। মামার কথার অতিষ্ট হয়ে যখন আমি মামাকে একটা ধমক দেবার পরিকল্পনা করছি এমন সময় মামা অফ গেল। তারপর ভীড় ঠেলে ভীতরের দিকে চলে গেল। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কিছুক্ষণ পরেই দেখি কন্ডাক্টর মামা হাসি মুখে ফেরত এসেছে। এসেই আমাকে বললো,"মামা আহেন, একটা সিট খালি হইছে।"
আমি মামা কর্তৃক রেখে দেয়া সিটটা দেখিয়ে মামা বললো, "জাহাঙ্গীরনগরের স্টুডেন্ট অনেকদিন পর বাসে উঠছেন, বসতে না দিলে কি হয়?" আমি মামার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে না পারলেও মামার কথায় সায় দিয়ে সিটটায় বসে পড়লাম।
সিটটায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলাম" আর যাই হোক, শেষ পর্যন্ত কন্ডাক্টর মামার সাথে করা সুব্যবহারটা একেবারে পানিতে যায়নি আরকি।" :D :D :D :D
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×