somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্য গল্প: সেই বাড়িটা......(সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শীতের রাত,
বাহিরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে,
বাবা-মা'র অনুপস্থিতিতে আমি চাচার বাসায় আছি। চাচা আর চাচার পরিবারের কেউ ঢাকায় ঢাকায় থাকেন না। একজন কেয়ারটেকার আছে দেখাশোনা কারার জন্য, সেও সন্ধার পর বাড়ি চলে যায়।
চাচা এই বাড়িটা বছর খানেক আগে কিনেছেন। যতদূর জানি বাড়ির মালিক ছিল তিন ভাই, তারা তিনজনই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। দেশে ফেরার কোন ইচ্ছা নেই বলেই হয়তো বাড়িটা বেচে দিয়ে দেশের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে ক্ষান্ত করেছে।
বাড়িটা তিনতলা, বিশাল। আজকাল ঢাকায় এত বড় আকারের বাড়ি দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনতলা, বড় বড় সেগুন কাঠের দড়জা, দেয়ালে পারমানেন্ট সেগুন কাঠের আলমারি, বিশাল আকারের বাথরুম, দেয়ালে ফিট করা বড় বড় আয়না, বিশাল বারান্দা আরো আনেক সৌখিনতায় ভরা বাড়িটা দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে বাড়ির মালিক নিজের জন্যই এই বাড়িটা বানিয়েছিলেন, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নয়।

কেয়ারটেকার চলে যাবার পর থেকেই বিশাল এই বাড়িতে আমি একা। প্রথম প্রথম গা ছম ছম করলেও এখন বেশ অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি।
একা একা বিছানায় বসে আছি, চারদিকে কবরের নীরবতা। শীতকাল বলেই হয়তো সকলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ দেয়াল ঘড়িটা নীরবতাকে খানখান করে ভেঙে দিয়ে প্রচন্ড শব্দে জানান দিল রাত দু'টা বাজে। এত রাত যে কখন হয়েছে বুঝতেই পারিনি। কি মনে করে উঠে দাড়ালাম, তারপর পা বাড়ালাম বারান্দার দিকে।
বিশাল বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে বাইরে তাকালাম। কুয়াশায় চাদর আমার দৃষ্টিকে আটকে দিল কিছুদূর পরেই। কয়েকটা দোকানের সামনে জালানো লাইটের হাল্কা আলো ছাড়া চোখে আর কিছুই পরলো না। জনমানবশূন্য ঢাকার রাস্তাকে রাত্রিবেলা কেমন যেন অচেনা অচেনা লাগছিল। দৃষ্টির সীমায় আমিই একমাত্র জাগ্রত মানুষ, এটা ভাবতেই গা টা কেমন জানি কাঁটা দিয়ে উঠলো। বিছানায় যাব এই ভেবে ঘুরতেই হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। ঢাকায় আজকাল লোডশেডিং অহরহ ঘটলেও শীতকালে লোডশেডিং সচরাচর দেখা যায় না। কিছুটা বিরক্ত হয়েই আরো কিছুক্ষণ বারান্দায় দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। গ্রিল আগলে আবার বাইরে তাকালাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই চোখে পড়ল না। লোডশেডিং যেন বাইরের শেষ আলোটাকেও শুষে নিয়েছে।
অন্ধ দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ আমার কেমন যেন একটা বিচিত্র অনুভূতি হতে লাগল। আমার সহজাত প্রবৃত্তি বলতে লাগল বারান্দায় আমি ছাড়া আরো কেউ আছে। অনুভূতিটাকে আমি এড়িয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে অনুভূতিটা প্রবল হতে থাকল। ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে আমি বারান্দার শেষ মাথায় তাকালাম। তাকানোমাত্রই আমার আমার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। শিরদাড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। এই ঘোরতর জমাট বাঁধা অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে একটা মানুষের অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেলাম। বারান্দায় এত রাতে একজন মানুষ, আমার মনে হাজার প্রশ্ন ভীড় করতে লাগল। আমি প্রথম ধাক্কাটা দ্রুত সামলে নিয়ে সাহস সন্ঞার করে বলে উঠলাম, "কে? কে ওখানে?''
ছায়ামূর্তিটাতে কোন নড়াচড়ার লক্ষণ দেখলাম না। আমি আবার বললাম, "কে ওখানে?" এবার আগের চেয়ে জোরেই বললাম। তাও ছায়ামূর্তিটা একচুলও নড়লো না। আগের মতই অন্ধকারে গা ডাকা দিয়ে রইলো। আমার মনে প্রশ্নের ভীর আরো বাড়তে লাগলো। হাজারো প্রশ্ন, "লোকটা কে? দড়জা বন্ধ থাকা সত্বেও কিভাবে এখানে এলো? লোকটাকে এতক্ষণ দেখিনি কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার ঐ মুহূর্তে কি করা উচিত ভেবে পেলাম না। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়েই থাকলাম।
হঠাৎ ছায়ামূর্তিটা স্পষ্ট গলায় বলে উঠল,"এখন ঘুমোতে যাননি?।"
এই পরিস্থিতিতে এমন হালকা কথা শুনে কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। হতবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। ছায়ামূর্তিটা ধীরপদক্ষেপে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল, আমি বজ্রাহতের মত একই যায়গায় দাড়িয়ে রইলাম। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমাকে যেন পাথর করে দিয়েছিল।
ছায়ামূর্তিটা আমার সামনে এসে দাড়ালো। আবছা অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে দেখলাম একজন বয়স্ক মানুষ, মাথার চুল সাদা, চোখে চশমা, দেখলেই বুঝা যায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের। লোকটার গায়ে একটা চাদর জড়ানো। আমার সামনে দাড়িয়ে লোকটা আবার বললো, "এত রাতেও জেগে আছেন?" লোকটার এমনভাবে কথা বলছিলেন যেন মনে হল যা ঘটে চলেছে তা খুবই স্বাভাবিক। লোকটা আবার বললো,"রাত জাগা একটা বাজে অভ্যাস,
আমারো এই বদ অভ্যাসটা ছিল। তো এখনও ঘুমাননি কেন?"
আমি বললাম,"ঘুম আসছিল না তাই।"
আমার কথার লোকটা হালকা হেসে উঠলো,
তারপর বললেন,"তা তো বটেই, তা তো বটেই। ঘুম আসলে কি আপনি এত রাতে বারান্দায় থাকেন? তা সাথে কি ঘুমের ঔষধ আছে? একটা খেয়ে ঘুম দেন। তবে ঘুমের ঔষধ অ্যাভয়েড করাই ভাল। পরে নেশা হয়ে যায়, ঔষধ না খেলে ঘুম আসে না "
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত এতক্ষণ লোকটার কথা শুনছিলাম। এবার ধ্যান ভেঙে একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম,"কিন্তু আপনকে তো চিনলাম না? কে আপনি? কিভাবে ভেতরে ঢুকলেন?"
লোকটা আবার হেসে উঠলেন, রহস্য করে বললেন," আমার পরিচয় অনেকগুলো হতে পারে, আমি তোমার চাচার একজন অতি পরিচিত একজন মানুষ, আবার বলা যায় আমি এই বাড়ির প্রাক্তন মালিক, আবার বলা যায় আমি একজন বৃদ্ধ যার কোন মূল্য কারো কাছে নেই। তা যাকগে, তো তুমি তো আমার ছেলের বয়সি, তোমাকে তুমি করেই বলি?"
আমি বললাম, " বলুন অসুবিধা নেই, কিন্তু আপনি এখনে আসলেন কখন? আপনাকে তো সারাদিন দেখিনি।"
লোকটা বললেন,"আমি আসলাম একটু আগেই, আমি এতদিন আমেরিকায় ছিলাম, ভাবলাম আমার এই বাড়িটা দেখে আসি, তাই দেশে ফেরা। উঠেছি এখানেই, কাল সকালেই চল যাব।"
লোকটার কথা আমি ঠিক ধরতে পারলাম না। তিনি কিভাবে ভেতরে ঢুকলেন? তাকে এতক্ষণ দেখিনি কেন? কেয়ারটেকার কি জানে তার ব্যাপারে? এরকম অনেক প্রশ্ন আমাকে ভাবাতে লাগলো। লোকটাকে দেখে তো মনে হচ্ছেনা যে তিনি মিথ্যা বলছেন, তাহলে কেয়ারটেকার আমাকে জানায়নি? নিশ্চই আমার কোথাও ভুল হচ্ছে, নিজের মনকে বুঝালাম। বললাম," আপনার কথা আমাকে কেউ তো জানায়নি। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দু্ঃখিত।"
তিনি বললেন,"আরে না না, বিরক্ত হব কেন? না জানতেই পারো। আমি তো বিশেষ কেউ না। একদিনের জন্য আমি বাড়িটা দেখতে এসেছি, দেখেই কাল চলে যাব।"
আমি বললাম," তো এসেছেন কখন? "
তিনি বললেন,"এসেছি সন্ধার পরেই, কেয়ারটেকার চলে যাবার একটু আগে। এসেই বারান্দায় দাড়িয়ে পড়েছি, এই বারান্দাটা আমার খুবই প্রিয় ছিল।"
আমি ভাবলাম তাই হবে হয়তো, কিন্তু আমার মনের খটকা কিছুতেই দূর হচ্ছিল না। চাচাকে ফোন দেবার কথা ভাবলাম, কিন্তু এত রাতে ফোন দিতে দ্বিধা লাগছিল, আমার বোকামির জন্যেও তো হতে পারে যে আমি তার আসার খবর জানি না। আমি বললাম, " আপনি তাহলে বাসার মালিক ছিলেন? কিন্তু আমি যতদূর জানি এর মালিক ছিল তিন ভাই। তারা আমেরিকায় থাকে, আপনি তাদের......"
তিনি বলে উঠলেন,"হ্যা, আমার তিন ছেলে। আমি তাদের নামে বাড়িটা লিখে দিয়েছি।"
আমি বললাম,"ঢাকায় এমন একটা সুন্দর বাড়ি বিক্রি করে বিদেশে থাকার কি কোন মানে হয়?"
আমার কথায় তিনি কোন উত্তর দিলেন না। এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা। আমার কেমন জানি অসস্তি লাগতে লাগলো, কিছু ভুল বললাম কি না তা ভাবতে লাগলাম? তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবতা ভাঙলেন। বললেন," সে অনেক গল্প, শুনবে?"
আমি বললাম,"সিউর, বলুন....."
তিনি গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরের হিমশীতল অন্ধকারের দিকে তাকালেন। তারপর আবার নীরবতা। কিছুটা সময় নিয়ে বলতে শুরু করলেন,
"আমার নাম মো: আনিস আহম্মদ, আমার বাবার দেয়া এই নাম। আমার দাদার বাবা ছিলেন বিশাল জমিদার। সেই সূত্রে আমার দাদা এবং বাবা ছিলেন বিশাল বিত্তশালী। আমি ছিলাম আমার বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান, তাই বাবার মৃত্যুর পর সকল সম্পত্তির মালিজ আমিই হই।"
এতদূর বলে তিনি থামলেন। তারপর বললেন," তোমরা কয় ভাইবোন?"
আমি বললাম, "আমি একাই, কোন ভাইবোন নাই।"
তিনি হালকা মাথা নেরে বললেন,"গুডলাক এন্ড ব্যাডলাক টুগেদার।"
তারপর বলতে থাকেলেন,"তো যা বলছিলাম, বাবার কাছ থেকে পাওয়া অর্থ আমি ভালভাবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলাম, বাবার ব্যাবসার হাল ধরলাম। আমার আজীবনের স্বপ্ন ছিলো আমি আমার সন্তানদের নিয়ে একসাথে জীবন পার করব, এক বাসায় সবাই থাকব সুখে শান্তিতে। ""সন্তানদের"" বলছি কারন আমার ইচ্ছা একাধিক সন্তান নেবার। একা একা সন্তান হবার দুঃখ আমি বুঝি। সবকিছুই আমার প্লানমত চলতে থাকলো। আমার ব্যাবসা ভাল চলতে লাগলো, আমি ঢাকায় এই জমিটা কিনলাম বাড়ি বানানোর জন্য। একে একে আমার তিন ছেলের জন্ম হল। আমি তাদেরকে সর্বোচ্চ আদর যত্নে মানুষ করলাম। তারা বড় হয়ে উঠালো। আমিও এই বাড়িটা বানানো শেষ করলাম। বাড়িটা তিনতলা বানিয়েছি, তিন ভাই একসাথে থাকবে আর আমি আর ওদের মা এই ছেলে ঐ ছেলে করে দিন পার করে দেব। "
এটা বলে তিনি একটু থামলেন, তারপর বললেন "আজকে তো ২৫ তারিখ তাই না?" আমি মাথা নাড়লাম।
তিনি বললেন," আজকের দিনেই আমরা সবাই মিলে এই বাড়িতে উঠেছিলাম। আমার সেদিন যে কি আনন্দ। আমার এতদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হল। কত আন্দই না করেছিলাম এই দিনে।" এ বলে তিনি আবার বাইরে তাকালেন, আমার কেন যেন মনে হলো তিনি কাঁদছেন। আমি অপ্রস্তুত হয়ে বসে রইলাম। কি বলব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। অনেক্ষণ নীরবতার পর তিনি আবার বলতে লাগলেন।
"তো যা বলছিলাম, এই নতুন বাড়িতে পরিবারের সাথে আমার জীবন স্বপ্নের মত কেটে যাচ্ছিল। সবই ঠিকমত চলছিল। একবছরও তখন হয় নি এই নতুন বাসায়, আমার বড় ছেলে এসে আমাকে কথায় কথায় বললো যে এই দেশে কোন ভবিষ্যত নেই, দেশের পরিবেশ ভাল না ইত্যাদি। আমি প্রথমে তার কথা বুঝতে পারি নি, কিছুদিন পর আমার ছোট ছেলেও আমাকে একই কথা বললো। আমি বুঝতে পারলাম তারা সরাসরি না বললেও অন্যভাবে আমাকে বুঝাতে চাইছে যে তারা দেশ ছাড়তে চায়।"
তিনি এতদূর বলে আবার থামলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন,"আমার এতদিনের সপ্ন, এত পরিশ্রম সব ছিল এই পরিবারকে ঘিরে। আমি বুঝতে পারলাম যে আমার এ স্বপ্ন ভেঙে পরতে আর দেরি নেই। এরপর সব ঘটল খুবই দ্রুত। আমার ছেলেরা আমার কাছে তাদের সম্পত্তির ভাগ দাবি করলো। আমি তাদের বললাম যে আমার মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে, তারা মানলো না। আমার সব চেষ্টাই ছিল তাদেরকে ঘিরে, তারা যদি দেশে খুশি না থাকে তাহলে দেশে রেখে তাদের কি লাভ? আমি আমার তিন ছেলেকে তাদের ভাগ বুঝিয়ে দিলাম। তারপর যা হবার তাই হল, তারা বাড়িটা বেঁচে দেবার জন্য লোক দেখতে লাগলো। আমি তাদেরকে অনেক বুঝিয়েছি, অনেক কথা বলেছি, কিন্তু তারা কোন কথাই শোনেনি, তাদের এক কথা, দেশে তাদের ভবিষ্যত নেই। তোমার চাচার কাছে তারা বাড়িটা বিক্রি করে আমেরিকায় পাড়ি জমালো। আমিও কষ্টে বুক বেঁধে তাদের সাথে গেলাম।" এতদূর বলে এবার তিনি চোখ মুছলেন। তার বিষন্নতা যেন আমাকেও ভর করলো। তিনি ধরা গলায় বললেন," এই বাড়িটাকে ঘিরে ছিল আমার সব স্বপ্ন, সব ভালবাসা। একে যে একদিন ছেড়ে যেতে হবে তা আমি কখনই ভাবিনি।"
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। বিষন্নতার গভীরতা যেন আমার সকল অনুভুতিকে শুষে নিয়েছিল। আমি বললাম,"কেমন আছেন বিদেশে?"
তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর ধরা গলায় ভেঙে ভেঙে বললেন,"আজ তো ২৫ তারিখ, এইদিনই আমরা প্রথম বাসায় উঠেছিলাম, কত আনন্দ করেছিলাম। শুয়ে শুয়ে সেই দিনের স্মৃতিগুলো মনে করছিলাম। বাড়িটা অনেক দেখতে ইচ্ছা করছিল। যাবার আগে তাই শেষবারের মত বাড়িটা দেখতে এলাম।" এতদূর বলে তিনি থামলেন।
আমি সম্মহিতের বারান্দার বাইরের নিঃশব্দ নির্মম অন্ধকারের দিকে তাকালাম। অন্ধকার যেন আমাকে টানতে লাগল, আমার চেতনায় প্রভাব বিস্তার করতে লাগল। আমার কেমন যেন একটা অপার্থিব অনুভুতি হতে লাগল। ঘুমে চোখ ভেঙে আসতে লাগল, আমি বুঝতে পারলাম কিছু একটা ঠিক নেই। ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে কাকে যেন বলতে শুনলাম,"তোমার মনেহয় অনেক ঘুম পেয়েছে, ঘুমিয়ে পর। আমার কথা ভেব না, আমি সকাল হবার আগেই চলে যাব............"
ঘুম থেকে উঠেই ঘড়িটা দেখলাম। সকাল ৮ টা বাজে। গত রাতের কথা মনে পড়তেই দেরি না করে চাচাকে ফোন দিলাম।
মনে হল অনন্তকালধরে রিং হবার পর চাচার গলা শোনা গেল,"হ্যালো?"
আমি বললাম,"চাচা, কাল রাতে কি বাসায় কারো আসার কথা ছিল?"
চাচা বললেন: "ঢাকার বাসায়? না তো? কেউ এসেছিল নাকি?"
আমি বললাম," আনিস আহম্মদ নামে কাউকে চেনো?"
চাচা বললো," হ্যা, বাড়ির মালিক। কিন্তু তিনি তো দুই দিন আগে ইন্তেকাল করেছেন, তার বড় ছেলে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। কেন? কেউ এসেছিল নাকি? হ্যালো হ্যালো.... শুনতে পাচ্ছিস? হ্যালো?........."
আমি মূর্তির মত ফোন হাতে দাড়িয়ে রইলাম। অপর দিক থেকে কট্ শব্দে ফোনটা কেটে গেল............. চোখে ভাসতে লাগল একজন মানুষের ছবি যিনি তার অস্রুশিক্ত হাত দিয়ে বারবার চোখ মুছছেন স্বপ্নভঙের বেদনায়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৩
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×