কিছুদিন আগে আমি আমার লেখা পুরানো ব্লগ গুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলাম। আমার এর আগেও ভ্রুণহত্যার উপর দু'লাইন লেখার সুযোগ হয়েছিল। তবে তা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত আকারের। তাই ঠিক করলাম ভ্রুণহত্যার উপর একটু ভালমত জানা দরকার। আমি ভ্রুণহত্যার উপর তথ্য সংগ্রহ করতে নেমে পরলাম।
"চোখ বন্ধ করে রাখলে পৃথিবীটা সবচেয়ে সুখের জায়গা।" কথাটা কতটুকু সঠিক জানিনা তবে তথ্য উপাত্ত আমার সামনে বর্বরতার যে বিভৎস দৃশ্য তুলে ধরলো তাতে আমার মনে হল আমি চোখ বন্ধ রাখলেই ভাল করতাম।
২০১২ নাগাদ ভ্রুণহত্যা যে এত বিশাল আকার ধারণ করেছে আমার তা জানা ছিল না। স্ট্যাটিকটিক্স দেখে আমি হতবাক, অল্প কিছু আমি নিম্নে তুলে ধরছি:
দেশ ভ্রুণহত্যার সংখ্যার দিক দিয়ে: (সরকারি হিসাবে)
#১: রাশিয়া : 2,766,360 টি
#২: আমেরিকা: 1,210,880 টি
#৩: ভারত: 596,345 টি
ভয়াবহ এই সমীকরণ আমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৪৪০০ শিশু হত্যা করা হয় প্রতিদিন!!!!! এ লাখ লাখ শিশু হত্যার ভার নেবে কে? এ লাখ লাখ আলো বঞ্চিত শিশুরা যদি জবাব চায় তবে জবাব দেবে কে?
ভ্রুণহত্যা শতকরা: (সরকারি হিসাবে)
#১: গ্রিনল্যান্ড: ৫১.০১%
#২: রাশিয়া: ৪৪.৭%
#৩:কিউবা: ৩৯.৪%
অর্থাৎ গ্রিনল্যান্ড এবং রাশিয়াতে প্রতি ১০০ শিশু এর মধ্যে ৫০ জনকেই হত্যা করা হয় গর্ভে? এ কি ধরনের বর্বরতা? যে শিশুদের অধিকার ছিল এ পৃথিবীর আলো বাতাসে বড় হবার, যাদের অধিকার ছিল হাসিমুখে দৌড়ে বেড়াবার, তাদের স্রেফ হত্যা করা হয় গর্ভে? শিশুরা এর প্রতিবাদ করতে অক্ষম বলেই কি এই হত্যাকান্ড? নাকি মানুষের "মায়া-মমতা" নামের ননসায়েন্টিফিক ন্যাকামিটা লোপ পেয়েছে?
এখানে অনেকেই আছেন যারা এই ভ্রুণহত্যাকে নানান রংচঙে মোড়কে মুড়ে লিগাল সিল দিতে চাইবেন। তাদের জন্য আমার কিছু কথা বলার আছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। এর কারন হল জিনগত ভাবেই নারীরা পুরূষের চেয়ে বেশি হারে জন্মায়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই নারী সংখ্যা পুরূষের থেকে ১.৪ মিলিওন বেশি। অন্যান্য দেশগুলেতেও তদ্রুপ সমীকরণ লক্ষ্য করা যার।
যেসকল দেশ এর ব্যাতিক্রম তার মধ্যে অন্যতম হল ভারত, যেখানে পুরূষের সংখ্যা নারীর চেয়ে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে কেন?
উত্তর একটাই, ভ্রুণহত্যা।
ভারতেও ওলিতে গলিতে বিলবোর্ড টাঙানো দেখবেন, " ৫০০ রুপি খরচ করে ভবিষ্যতের ৫০০০০০ রুপি বাঁচান।" আন্দাজ করতে পারছেন এটা কি ইঙ্গিত করছে? হ্যা ঠিকই ধরেছেন, এটা অ্যাবর্শন সেন্টার, শিশুহত্যাখানা। এখানে ৫০০ রুপি খরচ করে দেখবেন যে শিশুটা ছেলে না মেয়ে। যদি মেয়ে হয় তবে ভ্রুণহ্যা করে ভবিষ্যতের ৫০০০০০ রুপি বাঁচাবেন। এটা যদি লিগাল হয় তবে তা কি নারীর অধিকার বঞ্চিত করছে না? এতে কি নারীর অসম্মান হচ্ছে না? লিগাল সিল দিয়ে কি এই বর্বর হত্যাকান্ডকে ঢাকা যায়?
সকলেই জানেন "শিশুর জীবন শুরু হয় জন্ম থেকে" তবে এখন তা পাল্টে গিয়েছে, শিশুর সংগ্রাম শুরু হয় ভ্রুণ থেকে, অনিশ্চয়তা, সে পৃথিবীর আলো দেখবে তো?
এই বর্বর হত্যাকান্ড কি তাহলে সভ্যতার দান? বর্বরতার আরেক নাম এই ভ্রুণহত্যা কি মানুষে সভ্য করেছে? নাকি মানুষের মনুষত্ব দিনদিন লোপ পাচ্ছে? আমি অপেক্ষায় আছি কবে বন্ধ হবে এই বর্বর প্রথা, যে দিন শিশুরা পাবে মায়ের গর্ভে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৭