somewhere in... blog

টরন্টোর পিয়ারসনে ঋতুপর্ণার সাথে যা হলো

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শাহরুখ খান, কমল হাসানের পরে এবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। টরন্টোর পিয়ার্সন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হেনস্থার শিকার হলেন জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেত্রী। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় টরন্টোয় নামার পর বিমানবন্দরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা টানা জেরা করা হয় তাকে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভিসা থাকা সত্ত্বেও বলা হয়, তার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ব্যাগ খুলিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা হয় জিনিসপত্র, কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল। এমনকী, অপমানিত ঋতুপর্ণা কেঁদে ফেললে তাকে মানসিক রোগীর তকমা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে কানাডায় ঢোকার অনুমতি দেওয়া হলেও গোটা ঘটনায় অসন্তুষ্ট ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয় কানাডা সরকারের কাছে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) পাঠিয়েছে। কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার সূত্রে এই খবর জানা গেছে। উত্তর আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে টরন্টো আসেন ঋতুপর্ণা। ওই বঙ্গ সম্মেলনের চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয় তার অভিনীত রেশমী মিত্রের ছবি ‘মুক্তি’ দিয়ে। ঋতুপর্ণার সঙ্গে ছিলেন তাঁরা মাসি-শাশুড়ি, ৮০ বছর বয়সী নীলিমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি কানাডারই নাগরিক। হেনস্থা-পর্ব মেটার পরে ফোনে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘মুম্বই থেকে লুফৎহানসার বিমানে আমরা টরন্টোয় নামি। তার পরেই যেন বাঘের মুখে। অভিবাসন দফতরের কর্মীরা আমার ভিসা পরীক্ষা করে জানালেন, সেটির মেয়াদ শেষ, তাই আমাকে কানাডায় ঢোকার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। আমি বলি, আমার ভিসা শেষ হবে ২০১৫-য়।’ ঋতুপর্ণা জানান, অভিবাসন কর্মীদের তিনি ফেরার টিকিটও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তখন কোনও কথাই শুনতে নারাজ। ‘ওরা বলেছিলেন, উপযুক্ত নথি না-দেখানো পর্যন্ত আমাকে বিমানবন্দরেই থাকতে হবে। প্রয়োজনে সেদিনই আমার ফেরার টিকিট কেটে দেওয়া হবে। আর আমায় নাকি বলতে হবে, আমি স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছি!’ ঋতুপর্ণার অভিযোগ, এর পর অভিবাসন দফতরের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে রীতিমতো জেরা শুরু করেন এক মহিলা। কেন এসেছেন, কোথায় থাকবেন, কোনও আত্মীয় আছেন কি না, কোন চলচ্চিত্র সংস্থায় কাজ করেন, অভিনয়ের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেন কি না ইত্যাদি। ঋতুপর্ণার কথায়, ‘আমি এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও ওঁরা যে সন্তুষ্ট নন, সেটা বুঝলাম যখন ওই মহিলা ফের ভিসা প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন। কিছু ক্ষণ কম্পিউটার ঘেঁটে এবার বললেন, কানাডা দূতাবাস আমার ভিসা অনুমোদন করেনি। তাই বিমানবন্দর থেকেই ফিরে যেতে হবে। তখন লজ্জায়, রাগে আমার কান লাল হয়ে গিয়েছে। যা থাকে কপালে ভেবে ভিসা বাতিল সংক্রান্ত নথি দেখানোর জন্য পাল্টা চাপ দিতেই চুপ করে গেলেন ওই মহিলা।’ এ সবের মধ্যেই শুরু হয় ব্যাগ খুলে ঘাঁটাঘাঁটি। ঋতুপর্ণা জানান, ব্যাগের মধ্যে বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও চেকবই ছিল। সেগুলো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাকে। ‘কেন এত ভিজিটিং কার্ড? চেকবই-ই বা কেন?’ ঋতুপর্ণা জানান, তিনি অভিনেত্রী। অনেক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়, ভিজিটিং কার্ড দেওয়া-নেওয়া তো হয়ই। আর জরুরি দরকারের কথা ভেবে চেকবই তো যে কেউ সঙ্গে রাখতে পারেন। গোটা জেরা-পর্বে বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে বসেছিলেন ঋতুপর্ণার মাসি-শাশুড়ি। ঋতুপর্ণার মতোই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কাঁদতে শুরু করেন। ঋতুপর্ণা জানান, সেই কান্না দেখে অভিবাসন কর্মীরা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও জেরা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ২০১২-য় ভিসা অনুমোদনের পরেও কেন তিনি কানাডায় আসেননি? ঋতুপর্ণা জানান, সেই সময়ে শুটিং বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আবার কম্পিউটার ঘাঁটার পর প্রশ্ন আসে তা হলে ২০১০-এ কেন এসেছিলেন? ঋতুপর্ণা উত্তর দেন, মন্ট্রিল চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল তারই ছবি ‘আরোহণ’। ঋতুপর্ণা জানান, জেরা চলাকালীন তার স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী সিঙ্গাপুর থেকে তাঁকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ফোন ধরতেই তাঁর মোবাইল দু’টি কেড়ে নেওয়া হয়। এক অভিবাসন কর্মী বলেন, ‘ফোনে কথা বলা যাবে না।’ লাইন কেটে যাওয়ার আগে এই কথাটুকুই শুনে ফেলেন সঞ্জয়বাবু। তিনি তৎক্ষণাৎ কানাডার ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। খবর যায় বিদেশ মন্ত্রকেও। পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘ভারতীয় দূতাবাস বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরে আগাগোড়া ঋতুপর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। পরে আমরা কানাডার অভিবাসন দফতরের কাছে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) পাঠিয়েছি।’ বিদেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কানাডা সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ১১ বছর আগে টরন্টোর এই বিমানবন্দরেই হেনস্থা হয়েছিলেন অভিনেতা কমলহাসন। শাহরুখ খান এবং ইরফান খানও একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন মার্কিন বিমানবন্দরে। এ বার ঋতুপর্ণা।

তথ্যসূত্র
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৫

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৬ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



প্রিয় কন্যা আমার-
আজ শুক্রবার। তোমার স্কুল নেই। অথচ আজ তুমি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বসে আছো। বলছো, মেকাপ বক্স দাও। মাকে মেকাপ করে দিবো। যেদিন তোমার স্কুল থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান

ক্যালিগ্রাফি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় যামিনী সুধা,

আপনার নাম আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার এক অমলিন আলো জ্বালায়। একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আপনি শুধু জীবনের অভিজ্ঞতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তদ্বির বানিজ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও এনসিপির নেতা

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

জনপ্রিয় অনলাইন এক্টিভিস্ট জুলকারনাই সায়েরের এক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে গতকাল যেখানে রেলভবনে, রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) এর একান্ত সচিবের কক্ষে তদ্বির বানিজ্যে দেখা গেছে এনসিপির সংগঠক (হবিগঞ্জ) নাহিদ উদ্দিন তারেক ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

'লেখা আছে অশ্রুজলে’......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৭

আমার গুম নির্যাতনের উপর লেখা 'গুম এবং অতঃপর' বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখেছেন এসোসিয়েট প্রফেসর ডক্টর মো: আদনান আরিফ সালিম( Md. Adnan Arif Salim) । লিংক পাঠিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক Mesbah Shemul লিংক-... ...বাকিটুকু পড়ুন

টরন্টোর চিঠি - "অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!"

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭


গত বছর গ্রীষ্মের শুরুতে টরন্টোয় বসবাসরত আমার জন্মস্থান জেলা-শহর থেকে আগত অভিবাসীদের একটি পিকনিকে গিয়েছিলাম। ৫০–৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সকলে ছিলেন নারী। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×