আমার সারাজীবনের পরে একটা নিজের বাসা হইছে এখন। নিজের মন মতো বাজার সদাই করি, রান্ধি-বাড়ি। প্রায়ই খাইতে বসলে অনেক পুরানা কথা মনে পড়ে, কিছু চেনা-অচেনা মানুষের মুখ স্মৃতিতে ভাসে। আমার নিজের অতীতের গল্প মানে খিদের গল্প- যদিও সরাসরি আমার নিজের না, আমার বাবা-মায়ের কিংবা তাদের বাবা-মায়ের। হয়তো মাংসের স্টেক বানিয়ে শাহী খাবার খাইতেছি... এর মধ্যে মনে পড়ে ছোটবেলায় আম্মু মাঝেমাঝেই কোরবানীর পর পর বলতো নানা'র কথা। মাংস তার অনেক প্রিয় ছিলো, গরীব সংসারে কেনার মতো পয়সা তো জুটতো না। ঈদের দিন কারো কাছ থেকে হাত পেতে নেওয়া তার কাছে সম্মানের ব্যাপার। কোরবানী তো দিতে পারতো না... মাসখানেক ধরে একটু একটু টাকা জমিয়ে এক-দুই কেজি মাংস কিনতো- আটজনের পরিবারে এক কি দুই বেলা কোনরকমে ছোট্ট টুকরা করে সেইটা ভাগ হতো। নানা'র জন্যে খালি একটা বড়ো টুকরা থাকতো, ঠিকমতো চিবুতে না পারলে তার নাকি শান্তি লাগতো না! এমন না যে আমার ওই কথা মনে পড়ে খুব কষ্ট হয়, বা খেতে পারিনা! শুধু মনে হয়... আহা! লোকটা বেঁচে থাকতো এখন! নিজে রান্না করে খাওয়াতাম!!! আমরা যদ্দূরই এসেছি, সেইটা তার স্বপ্নেরও বাইরে ছিলো।
আব্বু তার ছোটবেলায় খিদে পেটে স্কুলে যেতে গিয়ে কারে খেত থেকে মূলাটা-আলুটা চুরি করে খেতো, দাদা কি তখন স্বপ্নেও ভেবেছিলেন কোনদিন, তার ছেলে বড়ো হয়ে টেবিল ভর্তি খাবার কেনার সামর্থ্য রাখবে? একটাই আফসোস, খিদের যুগ পেরিয়ে খানিকটা স্বচ্ছলতার ছোঁয়া পরিবারটাতে লাগবার আগেই ওই দুইটা লোক চলে গেলো। বেশি ইমো মার্কা ভাবনা-চিন্তা হয়ে গেছে মনে হয়... কিন্তু আমার প্রায়ই ভীষণ ইচ্ছে করে, অন্তত একবেলা ওদেরকে যা ইচ্ছে খাওয়াতে পারতাম যদি!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৫:০০