ধমনী : সাহিত্য-সংস্কৃতির দ্বিমাসিক পত্রিকা
৭ম বর্ষ : ১ম সংখ্যা (গালি সংখ্যা), কিশোরগঞ্জ : ফেব্রুয়ারি ২০১২ মূল্য : ১০০ টাকা । প্রচ্ছদ : চারু পিন্টু পৃষ্ঠা : ২৭৮
সম্পাদক : আবদুল মান্নান স্বপন
সম্পাদক আবদুল মান্নান স্বপনের ব্যতিক্রমী চিন্তাচেতনার ফসল ‘ধমনী’ পত্রিকার বর্তমান ‘গালি সংখ্যা’। বলাই বাহুল্য সম্পাদক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ট্যাবু নিয়ে এরকম একটি সমৃদ্ধ কাজ করার ক্ষেত্রে। সম্পাদক নিজেই ভাষাতত্ত্বের উপর আগ্রহী মানুষ। ফলে তিনি পত্রিকাটির এ সংখ্যাটিতে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অশ্লীল শব্দাদি যা ভাষাতত্ত্বে ট্যাবু হিসেবে গণ্য করা হয়, তা উদ্ধারের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। পত্রিকাটির এ সংখ্যার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় চল আছে মানুষের মুখে মুখে কিন্তু তা ভদ্রসমাজে ব্যবহার হয় না, হলেও তা অশ্লীল হিসেবে গণ্য হয় এমন শব্দরাজির সন্ধান করা হয়েছে। এসব শব্দের উৎস সন্ধানের প্রয়োজনে সম্পাদক সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতিতে এবং অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহৃত গালিগালাজ তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। পত্রিকার প্রথম ভাগে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ব্যবহৃত অশ্লীল শব্দরাজির উৎস খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ১৫টি প্রবন্ধের সমাবেশ ঘটেছে। এরপর সংকলন করা হয়েছে ৫টি কবিতা, যেগুলোতে গালি কিংবা অশ্লীল শব্দাদি রয়েছে। এরপর ৪টি গল্প এবং এসময়ের কবিদের রচিত ১০টি কবিতার সমাবেশ ঘটেছে সম্পাদকের একই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। পরবর্তী পর্যায় আরো ১৫টি প্রবন্ধের মাধ্যমে খুলনা, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, বরিশাল, বগুড়া, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া এবং ঢাকা অঞ্চলে প্রচলিত আছে এমন গালিগালাজ নিয়ে প্রবন্ধ রয়েছে। সম্পাদক নিজে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গালিগালাজ নিয়েও একটি সমৃদ্ধ প্রবন্ধ রচনা করেছেন। সম্পাদক আরো এগিয়ে বাংলা জনপদের আদিবাসী চাকমা, মরামা, গারো, হাজং, সাঁওতাল, খিয়াং, খুমি প্রভৃতি গোষ্ঠীর সমাজ জীবনের গালিগালাজ সম্বন্ধেও ৪টি প্রবন্ধ ‘ধমনী’র এ সংখ্যায় সংযোজন করেছেন। এরপরে তিনি হাত বাড়িয়েছেন দেশের বাইরে ভারতের আসাম, কলকাতা, ত্রিপুরার যেসব অঞ্চলে বাংলা ভাষাভাষির মানুষ আছে তাদের সমাজে প্রচলিত অশ্লীল শব্দরাজি নিয়ে আরো ৩টি ঋদ্ধ প্রবন্ধ রেখেছেন পত্রিকায়। প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার ‘ধমনী’ পত্রিকার এবারের সংখ্যাটি বাংলা ভাষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক গবেষণাধর্মী কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্পাদকের বহুস্তর বিশিষ্ট ভিন্ন ভাবনা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। একইসাথে ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই বাংলা ভাষার এসব ট্যাবু নিয়ে কাজ করার মতো সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। ইতোমধ্যে তিনি বাংলা ভাষায় প্রচলিত এসব গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দরাজির একটি অভিধান প্রণয়নের কাজও প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছেন। ধন্যবাদ সম্পাদক আবদুল মান্নান স্বপনকে বাংলা ভাষার অনালোকিত ট্যাবু নিয়ে কাজ করে তা আলোতে বের করে আনায়। তাঁর ভাষা বিষয়ক চর্চা অব্যাহত থাকলে বাংলা ভাষার আরো অনেক বিষয়ের অনুদ্ঘাটিত দিকের সন্ধান আমরা পাবো বলে প্রত্যাশা করি।