আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কতটুকু শিক্ষিত, বা কতটুকু সুশিক্ষায় শিক্ষিত তা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ লেখাপড়া তো কিছু রাজনীতিবিদ (সংখ্যায় খুবই অল্প) অন্তত করেছেন, কিন্তু শিক্ষা তারা নিতে পারেননি। নিজেদের পকেট ভারী করার ধান্দায় তারা সদা ব্যস্ত। এই ‘সদা ব্যস্ত’ হতে গিয়ে তারা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যায়ের কথা ভুলে যান। ভুলে যান তাদের পরিণতি। তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়, যে ভাগ্য একই কর্মে পূর্ববর্তীদের বরণ করতে হয়েছে। সবই ঠিক থাকে, কিন্তু মাঝখান থেকে দুর্ভোগের চূড়ান্ত রূপ হয় জনগণের। আমাদেরই বিনাদোষে কপাল পোড়ে।
আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নৈতিক ভাবে অবৈধ। আর যে ভাবে বর্তমান সরকার চলছে, তা স্বৈরশাসকই চালায়। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিজেদের লোকজন দিয়ে (প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব এইচ টি ইমাম দ্বারা স্বীকৃত) বিরোধী দল বিহীন যে নির্বাচনটি করেছে তা ১৯৯৬ এর পরে সবচেয়ে সহিংস নির্বাচন ছিল। সাধারণত ‘কুকুর- শিয়াল’ লড়াই বলতে যা বোঝায় সেটা ছিল না। ছিল ‘কুকুরের মাংস কুকুর চাবানোর’ মতো।
এই অবৈধ সরকার যতই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করুক, নেমে তাকে আসতেই হবে। যেমন নেমে আসতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার জন্য, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সেনাশাসন চালু করার জন্য, স্বৈরশাসক বেহায়া এরশাদকে নামিয়ে আনা হয়েছিল বন্দুকের শাসনের জন্য। তেমনি বাংলাদেশে স্বৈরশাসন করে কেউ টিকবে না। এটা জানা কথা।
সমস্যা হল বিরোধী দলের আন্দোলনের উপায় নিয়ে। বিরোধী দল যেমনই হোক, শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য বিরোধীদল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিরোধী দল গণসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ত আন্দোলন দিয়ে এই রকম স্বৈরশাসন হটিয়ে দিবে, সেটাই ব্যকরণ সিদ্ধ। কিন্তু আমাদের এই সেলুকাস দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন কেন জনগণের উপর দিয়ে বয়ে যায়, সেটা বুঝি না।
অবরোধ, বাসে পেট্রল বোমা, মানুষের উপর বোমা হামলা, গাড়ি ভাংচুর কি কোনদিনও সফল হয়েছে........?
মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের তাড়িয়েছেন নিজেদের জনগণের উপর কক্টেল- পেট্রোল বোমা মেরে, নাকি জনগণকে সাথে নিয়ে.....? মিশর- ইয়েমেন- তিউনেশিয়ার জনগণ কি তাদের স্বৈরশাসকদের উৎখাত করে ছিল বোমাবাজি আর মানুষ পুড়িয়ে, নাকি বিশাল জনগণ নিয়ে অবস্থান কর্মসূচীর মাধ্যমে......? ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ নামে বিশ্ব কাঁপানো আন্দোলন কি হানাহানি আর সহিংসতার মাধ্যমে হয়েছিল.........?
মানুষ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অভিভাবক সুলভ আচরণ আশা করে, এটা সর্বজনবিদিত। কিন্তু অভিভাবক হওয়ার পূর্বে প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা আর মানবিক বিবেক।
এগুলোর কোনটিই আমাদের রাজনীতিবিদদের নেই, এতে আমরা নিশ্চিত। কিন্তু তাই বলে কখনোই আসবে না................
আপনাদের ক্ষমতার নোংরা খেলার অংশীদার আমরা নই। তাই এর ক্ষয়ক্ষতির ভাগীদারও আমরা হতে পারবো না..................
লাল সালাম.................