গত স্ট্যাটাসে ‘গণমাধ্যম ও সমাজ’ নামে আমার পাঠ্য এক কোর্সের কথা তুলে ধরে ছিলাম। এই কোর্সেরই অন্তর্গত একটি বিষয় আমরা এখন পড়ছি। তা হল- ‘ নারী ও মিডিয়া’।
‘ নারী ও মিডিয়া’ নিয়ে পড়ার শুরুতেই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হল আমাদের দেশে নারী- পুরুষের ‘লৈঙ্গিক দূরত্ব’ বা Gender Gap, অর্থাৎ নারী- পুরুষের ব্যবধান জানা জরুরী। কারণ দৃশ্যগত ভাবে আমাদের নারীরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে, বা নারী- পুরুষ ব্যবধান কমে আসছে বলেই আমরা বিশ্বাস করছি।
এই কারণেই বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবে বসে চেক করলাম কোন গবেষণা বা এই সংক্রান্ত কোন রিপোর্ট পাওয়া যায় কি না। আমার খোঁজের ফসলটুকু হল আমার আজকের লেখাটুকু।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থা World Economic Forum। প্রতিবছর তারা ‘লৈঙ্গিক দূরত্ব’ বা Gender Gap নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। যার শিরোনাম হল- ‘The Global Gender Gap’।
২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘The Global Gender Gap 2013’ এ ৪টি মূল বিষয় এর উপর ভিত্তি করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নারী- পুরুষ মধ্যকার (অধিকার ও অংশ গ্রহণ) দূরত্ব নির্ণয় করা হয়েছে ।
বিষয় ৪টি হল---
(a) Economic Participation and Opportunity (অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ)
(b) Educational Attainment (শিক্ষা অর্জন)
(c) Health Survival (স্বাস্থ্য)
(d) Political Empowerment (রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন)
এই ৪টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছে তাই এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৩ সালে ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। অর্জিত স্কোর হল- ০.৬৮৪৮।
বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী দেশের অবস্থান নিম্নরূপ---
ভারত--------১০১তম
মালয়শিয়া----১০২তম
নেপাল-------১২১তম
পাকিস্তান-----১৩৫তম
মালদ্বীপ------৯৭তম
থাইল্যান্ড-----৫৯তম
শ্রীলঙ্কা-------১৬তম
ইন্দোনেশিয়া—৯৫তম
উপরোক্ত অবস্থা দেখে আপনি নিশ্চয়ই খুশি.......? খুশি হওয়ারই কথা। থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাংলাদেশই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এমনকি পশ্চিমা সভ্যতার কর্ণধার ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
যেমন—উরুগুয়ে (৭৭তম), সাইপ্রাস (৭৯তম), গ্রীস (৮১তম), চেক রিপাবলিক (৮৮তম), জর্জিয়া (৮৬তম), হাঙ্গেরী (৮৭তম) সহ আরও কয়েকটি দেশ।
কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অবস্থানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে- মূলত এই লৈঙ্গিক বৈষম্য আসলে কমছে না। অর্থাৎ বাংলাদেশ ধারাবাহিক ভাবে নারী- পুরুষ সমতা বিধানে ব্যর্থ হচ্ছে।
২০১২ সালে বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিল ৮৬তম (স্কোর-০.৬৬৮৪)। ২০১১ সালে এই র্যাংকিং অবস্থান ছিল ৬৯তম (স্কোর-০.৬৮১২)। অর্থাৎ ২০১২ সালের তুলনায় ২০১১ সালে লৈঙ্গিক বৈষম্য এর ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে র্যাংকিং ছিল ৮২তম (স্কোর-০.৬৭০২)। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৩তম। ২০০৮ সালে যা ছিল ৯০তম। ২০০৭ সালে এদেশের অবস্থান ছিল ১০০তম। ২০০৬ সালে ছিল ৯১তম।
নিয়মিত ঊর্ধ্বগতি ও নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে আমাদের লৈঙ্গিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
অথচ উগান্ডার মতো দেশও লৈঙ্গিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্য ধারাবাহিক করে রেখেছে।
তবে রিপোর্টটির ২৯ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে।
‘Banglaesh (75) rises more than 10 places from 86th place in 2012.and was one of two countries that improved the most. If narrowed the gender gap on both the ‘Educational Attainment’ and ‘Political Empowerment’ sub indexes and rose in the ranks’.
‘আজকালের তরুনীরা দুই আঙ্গুলে শিঙ্গাড়া ও তিন আঙ্গুলে ভাত খায়’। আর এটাকে স্মার্টনেস বলে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের প্রতি মূল বৈষম্যগুলোর প্রতি নজর দেয়া হয় না।
নারী –পুরুষ; উভয়ই মানুষ। দুজনই প্রকৃতির সমঅংশীদার। এই সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করতে হবে।
তবেই ঘুচবে লিঙ্গ বৈষম্য...............