সাত
কানের কাছে অ্যালার্ম বেজে উঠল। ঘুমু ঘুমু চোখে ফোন হাতে নিয়ে রেহাকে একটা কল দিলাম। বললাম আজ কোথাও যাবে কিনা। বলল না আজ ওর শরীর খারাপ, তাই যাবেনা। যাইহোক প্ল্যান করা শুরু করলাম, আমি কি করব। কিছুদিন আগে আমার বিবিএ ফলাফল আসছে। খারাপ আসেনি, ৩.৬৯ ফিনান্সে। এখন কিছু একটা করা দরকার, কিন্তু কিছু করতে ইচ্ছা করে না। খালি মনে হয় রেহাকে একটু দেখে আসি, কোথাও ঘুরতে যাই। একদিন ওকে না দেখলে অস্থির হয়ে যাই। আমি অবাক হয়ে যাই, আসলে মানুষ কত দ্রুত বদলাতে পারে, রেহা আমাকে অনেক ভালবাসে, আর ওর ওই ভালবাসা আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে রাখে। আমি জানিনা আমি রেহাকে এখনও ভালবাসতে পারছি কিনা, কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে না পারলে আমি অস্থির হয়ে যাই। প্রতিদিন বাইরে যেতে মন চায়। কি জানি একে কি বলে। আজ প্রথম চিন্তা করতে শুরু করলাম, রেহার কি আছে যা আমাকে মুগ্ধ করে। রেহা দেখতে মোটামুটি বেশ সুন্দরী, শুধু একটু মোটা, গায়ের রঙ অনেক ফর্শা, খুব বেশি খাটো না, আর পড়ালেখা......নাহ! আছে মোটামুটি, এস এস সি পাস করার পর আর পড়াশুনা করেনি। এর মধ্যে একবার হাতে বেথা পেয়েছিল। তাই আর গত ৩ বছর পড়াশুনা করেনি, আমার ইচ্ছা আছে আবার ওকে পড়াশুনা করানোর। দেখি যদি ওকে নিয়ে আমি ভবিষ্যৎ ভাবতে শুরু করি, তাহলে ওকে অবশ্যই পড়াশুনা করতে হবে, নইলে আমার পরিবারকে মানানো যাবে না। রেহা ও বলছে, ওর কোন সমস্যা নাই। ও যা চাইবে ওর বাবা তাই করবে। রেহার পরিবারে রেহা ছিল সবচেয়ে আদরের। কারন ওর বাবা ওকে অনেক আদর করত, কক্ষনো কোন অভাব বুঝতে দেয় নাই। রেহা যা চাইত, তার চেয়ে বেশি দিত। রেহা আমাকে বলত, দ্বিপ তোমার চিন্তা নাই, আমি যা বলব আমার পরিবার তাই মেনে নিবে, কিন্তু তোমাকে তাই বলে বসে থাকলে হবে না, চেষ্টা করতে হবে। অবশ্যই ভাল একটা জব নিতে হবে। যদিও আমি একটা ফকির বিয়ে করলেও আব্বু আমাকে কিছু বলবে না, সব মেনে নিবে। যেহেতু রেহার পরিবারে ওর আব্বু ওকে অনেক বেশি আদর করত, আর তাই ও সবসময় রানীর হালে ছিল, যখন যা মন চাই সেটা করত। আমাকে রেহা আশ্বাস দিয়াছিল, ওর যেদিন মন চাবে ঠিক সেইদিন আমাকে সে বিয়ে করতে পারবে, সুতুরাং আমি যেন বেশি উথলা না হই। ও ছোটকাল থেকে টাকার উপর বড় হইছে। রেহারা আমদের মতই ৪ ভাইবোন। দু বোন বড়, তারপর দু ভাই। রেহা সংসারের বড় মেয়ে, আমিও সংসারের বড় ছেলে। সমস্যা হল আমি হলাম একজন গভঃ চাকুরীজীবী পরিবারে সন্তান। আমি কক্ষনো জীবনে অনেক টাকা দেখিনি, আশাও করি না। মনে মনে শুধু আশা করতাম আব্বুর মত একজন ভাল ব্যাংকার হব, সৎ পথে উপার্জন করব। দিনে এনে দিনে খেতে পারলে এনাফ। আমার আব্বু অনেক কষ্ট করে লোণ করে ঢাকায় একটা বাড়ি বানাইছেন, আমার ইচ্ছা আমিও তাই করব। আমি তখন চিন্তা করতাম এই রকম একটা মেয়ে আমাদের পরিবারে নিজেকে মানাতে পারবে কিনা। আর তাই আমি রেহাকে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলতাম, দেখতাম ও কি করে। বলতাম, যদি এমন হয় আমার কোন চাকরি নাই, খেতে পারছি না, তখন তুমি কি করবা? বলত ও নিজে ইনকাম করে খাওয়াবে। রেহা এই যুগের মেয়ে, আল্লাহ জানে ! কতটুকু কি করত।
আট
সকাল বেলা ফোনের আওয়াজ আমার ঘুম ভাঙ্গাল। আমার মেমসাহেব ফোন দিছেন। বলল আজ আমার কোন প্রোগ্রাম আছে কিনা, বললাম না। বলল তাহলে তাড়াতাড়ি বের হও, আমরা আজ বেড়াতে যাব। আমি তেমন কোন প্রস্তুতি না নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাস স্ট্যান্ডে যেয়ে দেখি ওরা এসে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর রাফি আসলো। রাফি হল নেহার খুব ভাল বন্ধু। রেহার বয়সী। রেহাকে বড় বোনের মত দেখে, সেই হিসেবে আমাকে ভাইয়ের মত দেখে। যাইহোক বললাম কোথায়ে যাবা, বলল চল সোনারগাঁ যাই, আমি কক্ষনো এর আগে সোনারগাঁ যাইনি, সুতুরাং আর দ্বিমত করলাম না। আমরা বাসে উঠলাম, এরপর সোনারগাঁ নেমে রিকশা করে জাদুঘর গেলাম, দেখি সেইদিন জাদুঘর বন্ধ। খুব মেজাজ খারাপ লাগলো। জীবনে প্রথম গেলাম, অথচ বন্ধ। এরপর আমরা আর কি করব, রিকশা দুইটা ভাড়া করে পুরু সোনারগাঁ ঘুরলাম। এরপর বেলা ১১ টা বাজে চিন্তা করলাম, এভাবে ঘুরে লাভ নাই, আর তাই আমরা একটা সিএনজি ভাড়া করলাম, তারপর যাত্রাবাড়ী চলে এলাম। ওখান থেকে হটাত সিদ্ধান্ত হল মাওয়া যাবে। কিন্তু কারও কাছে বেশি টাকা নাই। পরে আমি বুথ থেকে টাকা উঠিয়ে আমরা বাস করে মাওয়া গেলাম। অনেক ভাল লাগলো সেইদিন। ওই দিনের কথা আমরা ৪ জন কেও কক্ষনো ভুলবো না। চরম মজা লাগছিল, আমি জীবনে কক্ষনো নদী ভ্রমন করিনি, সুতুরাং আমার জন্য দারুন ব্যাপার ছিল, আমরা ৪ জন একটা লঞ্ছে উঠলাম, এরপর শেরপুর গেলাম, ওইদিন আকাশ অনেক মেঘলা ছিল। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি, বাতাস, প্রিয় মানুষের সাথে, বলে বোঝান যাবে না যে কি ভাল লাগছিল। টাইটানিকের মত লঞ্চের সামনে দু হাত মেলে দাড়িয়ে গেলাম। অনেক অনেক ভাল লাগছিল সেইদিন। তারপর ওপার যেয়ে কিছুক্ষণ ছিলাম, তারপর আবার লঞ্চে করে ফিরে আসলাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সেইদিন আমি ফরমাল ড্রেস পরে গিয়াসিলাম, আর রেহা নিজের বাসার একটা ড্রেস পরে গিয়াছিল। ফলে রেহাকে মোটা একটা হাতির মত লাগছিল, আর আমাকে একটা পাতলা জিরাফের মত লাগছিল। আমার সাথে রেহাকে কক্ষনো ফিজিক্যালি মানাত না। কারন আমি অনেক শুকনা ছিলাম। রেহা মোটামুটি ভাল স্বাস্থ্য ছিল, আর আমি মোটামুটি লম্বা, রেহা কিছুটা খাটো। কিন্তু দু জনের মনের এতো মিল, অবিশ্বাস্য!!! আমি যা চাইতাম, রেহা অবিকল সেই রকম ছিল। রেহা যেমন আশা করত, আমি অবিকল সেই রকম করতাম। আমি কক্ষনো আশা করিনি একই মনের দুরকম মানুষ থাকতে পারে। রেহার সাথে যতদিন যেতে লাগলো, তত নিজদের মধ্যে শুধু মিল খুজে পেতে লাগলাম। অদ্ভুত ! এতো মিল কিভাবে হয়?
আগের গুলো এখানে
চলবে.................