চার
আজ ১লা সেপ্টেম্বর। রাত ২ টা বাজে। কিন্তু চোখে ঘুম আসছে না, সবকিছু নিয়ে আবার নুতুন করে ভাবছি, কি হল এই দু মাসে। আমার বন্ধুরা বলল আমার জন্ডিস হয়ছে মনিকার কারনে। আসলেই কথাটা সত্যি, গতকাল রেহাকে সরাসরি প্রশ্ন করলাম, আমাকে ভালবাসে কিনা? ও সরাসরি বলল হাঁ বাসে, অনেক বেশি ভালবাসে। জীবনে অনেক ছেলের মাথা সে ঘুরিয়েছে, অনেক ছেলে ওর পিছনে পাগলের মত লেগে থাকতো। কিন্তু কাউকে সে ভালবাসে নাই, জীবনে প্রথম আমাকে সে ভালবাসল। এতদিন মনিকার কারনে প্রকাশ করতে পারেনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে প্রকাশ করা দরকার। আর তাই অবলীলাই স্বীকার করল। রেহাকে আমি খুব ভাল বন্ধু ভাবতাম, আর তাই চিন্তা করলাম, বন্ধু হয়ে বন্ধুকে কষ্ট দিই কিভাবে। রেহা হয়ত আমাকে অনেক বেশি ভালবাসে। কিন্তু আমি তাও অনেক অবাক হইছি ওর কথা শুনে। কারন রেহা এককথায় সব দিক থেকে দারুন মেয়ে। অন্তত তখন আমি যা জানতাম, সুতুরাং বুঝতে আমার খুব সমস্যা হচ্ছিল কিসের কারনে রেহা আমাকে এতো ভালবাসে? কি আছে আমার মধ্যে যা অন্য মানুষের মাঝে সে পাইনি? নাকি সেও মনিকার মত আবেগ নিয়ে ছলনা করছে? আবার না জানি কোন ফাঁদে পা দিই। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, দেখা যাক কি হয়, আর একবার মনিকার সাথে কথা বলব, যদি এরপরও সমস্যা করে, তাহলে জীবন থেকে একেবারে মুছে ফেলব ওর স্মৃতি। কত আর সহ্য করা যাই। আমিও যে একটা মানুষ সেটা ওর খেয়াল নাই। আমি রেহাকে পছন্দ করি আর রেহা আমাকে ভালবাসে। রেহা আসলে অনেক ভাল মেয়ে, আমার ও মনিকার মাঝে ও অনেক চেষ্টা করেছিল, হয়ত সহজ সরল মনে অনেক কথা বলত মনিকাকে, কিন্তু মনিকা তার একটা ভুল ব্যাখ্যা দাঁড়া করাতো। আমি আসলেই অনেক লজ্জিত ছিলাম রেহাকে অন্তত একবারের জন্য ভুল বোজার জন্য। যদি এবার মনিকা আমার সাথে ঠিকমত অ্যাডজাস্ট করতে না পারে তাহলে আমি আবার নুতন করে চিন্তা করব। আর আমি এমন একটা ছেলে, যার প্রতি একবার কমিটেড হয়ে যাই, আর কোন নড়চড় হয় না। দ্বিপ সবসময় তার কথা রাখার চেষ্টা করে, সাধারণত নিজের কম্মিটমেন্ট ভাঙ্গে না। শুদুমাত্র আমার ভালোলাগা কেন্দ্র করে এত্ত জামেলা, আর ভালবাসলে না জানি কি হত। সুতুরাং এটাই মনিকার শেষ সুযোগ।
পরেরদিন অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। কাল রাতে দেরিতে ঘুমানোও শরীর অনেক খারাপ লাগছে। গতকাল রাতে আব্বু আম্মু আমাদের জন্য ঈদ এর বাজার করছে, দেখি নাই, ঘুম থেকে উঠে দেখলাম, আমার জন্য একটা দারুন সাদা পাঞ্জাবী কিনছে। আজ অফিস গেলাম, আমাদের ইন্টার্নই শেষ হল। অফিস থেকে বাসায়ে ফিরে রেহাকে ফোন দিলাম, বললাম ঈদ এর সময় প্ল্যান কি? বলল এখনও ঠিক হয় নাই। কিন্তু ঈদ এর ২য় দিন বের হতে পারে। এরপর আর তেমন কথা হল না।
পাঁচ
৬ই সেপ্টেম্বর, আমার জীবনে একটা ঐতিহাসিক দিন। সকাল বেলা রেহা ফোন দিল। বলল আজ ওর আব্বু আম্মু ঈদ বাজার করতে যাবে, আমি যেন ওদের বাসায় যাই। ওদের কম্পিউটারে কি জানি সমস্যা দেখা দিছে। আমি দুপুরের দিকে ওদের বাসায়ে যাই। জীবনে প্রথম ওদের বাসায়ে যাই। আর ওখানেই মনিকার সাথে আমাদের এই ছোট পরিসরের সম্পর্কের পূর্ণ ইতি ঘটলো। আর আমার জীবনে প্রবেশ করলো এক নুতুন মানুষ, যাকে আমি বন্ধু ভাবতাম কিন্তু আজ থেকে অন্যকিছু ভাবা শুরু করি। বাসায়ে যেয়ে কম্পিউটার সেট আপ দিতে বসি, এই সময় মনিকার সাথে আমার শেষ কথা হয়। সবসময়ের মত সেইদিন আমার সাথে মনিকা চরম খারাপ ব্যাবহার করে, আমি পুরোপুরি বিতৃষ্ণই হয়ে পড়ি। আমার খুব মন খারাপ ছিল। যাইহোক সেইদিন জন্ডিসের কারনে আমি রোজা রাখিনি। দুপুরে ওদের বাসায়ে ভাত খাই, তারপর ফ্লোরে বসে কথা বলতে থাকি রেহার সাথে। রেহা আমাকে কষ্ট পেতে মানা করে, বলে সে থাকতে তার ভালবাসার মানুষ কষ্ট পাবে, সে সেটা চাইনা। আমি চুপ করে থাকি। হটাত করে আমি রেহার হাত ধরে বলি, রেহা তুমি আমাকে সত্যি কি ভালোবাসো? সে বলল বাসে, অনেক বেশি বাসে। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে কক্ষনো যাবা নাতো! রেহা কথা দিল, যাই গোটুক জীবনে আমাকে ছেড়ে কক্ষনো চলে যাবে না। আমি ওর হাত ধরে কেঁদে দিই। আমিও ওকে কথা দিই, আমিও জীবনে কক্ষনো ওকে ছেড়ে যাব না। মনিকা ফিরে এলেও না। এরপর আমি ওকে একটা গিফট দিই। জীবনে প্রথম গিফট দিই। রেহা অনেক অবাক হয়। অনেক খুশী হয়। সেই থেকে শুরু হল আমার জীবনের এক নুতন সূচনা। কিন্তু তখন জানতাম না আমার জন্য অপেক্ষা করছে এক বিশাল অজানা অচেনা দুর্গম সাগর। যা আমাকে পার করতে হবে অনেক সাহসের সাথে, এরপরও পারব কি শেষ পর্যন্ত তীরে পৌছাতে?
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
চলবে....................