রিপোর্টার :এসবি রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট : একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার নেটিং (সমন্বয়) সুবিধা অনুমোদন দিতে যাচ্ছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। লেনদেন বাড়াতে স্টক এক্সচেঞ্জের দেয়া প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কমিশন সভায় শেয়ার নেটিং সুবিধার বিষয়টি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। লেনদেনে এ সুবিধা দেয়া হলে বিনিয়োগকারীরা একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার একবার বিক্রি করে আবার কিনতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে শেয়ার ও অর্থ দুটোই ম্যাচিউরড থাকতে হবে।
গতকাল স্টেকহোল্ডারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ারে নেটিং সুবিধার প্রস্তাব দেয় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এর আগে আগস্টে অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বিএসইসিতে এ-সংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়।
একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার নেটিং সুবিধার ব্যাপারে বিএসইসির মনোভাবও ইতিবাচক বলে জানা গেছে। ডিএসইর প্রস্তাব গতকাল বিএসইসিতে পৌঁছানোর পরই তা পরবর্তী কমিশন সভার এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর হতে যাওয়া কমিশন সভায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকরা।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত সুবিধার সম্ভাব্য সুফল বিবেচনার পাশাপাশি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান লেনদেন ব্যবস্থার উন্নততর সক্ষমতাও বিএসইসির ইতিবাচক মনোভাবের কারণ বলে জানা গেছে। অত্যাধুনিক ক্রয়-বিক্রয় আদেশ ব্যবস্থাপনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ডিএসইর নতুন লেনদেন ব্যবস্থায়।
বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বছরের শেষ কমিশন সভায় শেয়ার নেটিং সুবিধার প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য কোনো আইন পরিবর্তন করতে হবে না। শুধু একটি নির্দেশনার মাধ্যমেই প্রস্তাবিত সুবিধাটি চালু করা সম্ভব বলে বলে বলছেন তারা। এদিকে কমিশনের অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত সুবিধা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি রয়েছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেরই। এখন পর্যন্ত দেশের দুই পুঁজিবাজারে নেটিং সুবিধার আওতায় কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে ওইদিনই সমপরিমাণ মূল্যের অন্য কোনো সিকিউরিটিজ কেনা যায়। শুধু ‘জেড’ ক্যাটাগরি ছাড়া অন্য সব ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানি কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এ আর্থিক সমন্বয় সুবিধা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এর আগে কাগুজে শেয়ার থাকাকালীন সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার নেটিংয়ের সুবিধা ছিল। বিভিন্ন জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সুবিধাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কোনো কোনো ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে অবশ্য আইনবহির্ভূতভাবে সুকৌশলে বিনিয়োগকারীদের একই শেয়ারে নেটিংয়ের সুবিধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডিএসইতে চালু হওয়া নতুন লেনদেন ব্যবস্থায় একই দিনে একই শেয়ারের নেটিং করার কারিগরি সুযোগ রয়েছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে গত রোববার ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনও প্রস্তাবিত নেটিংয়ের সুবিধা বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানায়। পরিচালনা পর্ষদের সম্মতিক্রমে গতকাল বিএসইসিতে প্রস্তাবটি পাঠায় ডিএসই।
এ সুবিধাটি বাস্তবায়ন হলে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায়ই একই শেয়ার নেটিংয়ের সুবিধা রয়েছে, যার আওতায় লেনদেনে অংশগ্রহণকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দিনে একাধিকবার কেনাবেচা (ডে ট্রেডিং) করে একটি শেয়ার থেকেই মুনাফা করতে পারে, যা বাজারের গতিশীলতা বাড়ানোর পক্ষে সহায়ক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীর কাছে অর্থ ও শেয়ার যদি ম্যাচিউরড থাকে, তাহলে নেটিংয়ের সুবিধা দেয়া উচিত। এতে লেনদেন বেড়ে দেশের শেয়ারবাজারে একটি ইতিবাচক ধারা তৈরি হবে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় লেনদেন প্রত্যাশার তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে, যা বাজারের পাশাপাশি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিশন আয়কেও প্রভাবিত করছে। চার বছর আগে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও ২০১০ সালের ধসের পর তা ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।
আর এ ডিসেম্বরে ২০০ কোটি টাকারও নিচে নেমে এসেছে ডিএসইর লেনদেন। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে এবং প্রস্তাবিত নেটিং এ অবস্থা উত্তরণে সহায়ক হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে লেনদেন বাড়াতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তির সময় একদিন কমিয়ে আনে বিএসইসি।