অনেক দিন থেকেই উলটাপালটা কিছু চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রাখার কোনো পাত্র পাচ্ছিলামনা। আজকে উগরে দিলাম ।।
আমার দৃষ্টিতে, স্কুল লাইফে আমি পড়াশোনায় সবচেয়ে ভালো ছিলাম। কলেজে কোনো মতে সামলে নিয়েছি। আর এখনের কথা নাই বা বললাম।সেটাই কেন হলো তাই ধরার চেষ্টা করছিলাম। ভেবেদেখলাম , স্কুলে আমি সবচেয়ে বেশী চঞ্চল ছিলাম। জীবনেও একটা ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করিনি।ক্লাসে বসে খালি ইতরামী করতাম, নয়তো অন্য পড়া পড়তাম।বাসায় এসে আমার সাথে ইতরামী করার কোনো সঙ্গী পেতাম না । বাধ্য হয়ে পড়তে বসতে হতো।এভাবেই উতরে গেছি।
কলেজে গিয়ে একেবারে আলাদা হয়ে গেলাম,সরকারি কলেজ। বান্ধবীরা কেউ ক্লাসেই আসেনা।ক্লাসই আমার ঘিড়িংগাবাজী করার একমাত্র জায়গা।তাই ক্লাস করা ছাড়তে পারলামনা। আমি চলে গেলাম দুর্ভাগ্যবানদের দলে, যাদের বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড বা আড্ডা মারার সঙ্গীসাথী নাই।নিরুপায় হয়ে আমি তখন, যথাসম্ভব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করি, ক্লাস নোট তুলি।স্যার ম্যাডামদের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে আমার সাথে কেউ ইতরামী করতে আসেনা। আমিও উৎসাহ পাইনা তেমন। নীরবে নিশ্চুপে জ্ঞান আহরণ করি। কলেজে তো সেইরকম হারে প্রাইভেট পড়তে হত।সেখানে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর । পয়সা দিয়ে পড়তে এসে ঘিড়িংগাবাজী করার মত দুঃসাহস কে দেখায়? সেখানে আমি প্রায় ভাবলেশহীন হয়েই স্যারদের লেকচার শুনে যেতাম। কোনো দিনই মাথায় কিছু ঢূকাতে পারিনি।ভাগ্যক্রমে ম্যাথ আর ইংলিশটা পছন্দ হয়েছিল। সেটাই আমাকে ্পরে প্রাণে বাচিয়ে দিয়েছে।তবে কখোনোই সদা ইতরামী করার জন্য আকুপাকু করা আমার মন কোনো কিছুতেই মনোযোগ বসাতে পারেনি। টেস্টপরীক্ষার পর দেখলাম রেজাল্ট বিপর্যয়।কোথাও ভর্তি হতে না পারার যতটূকু ভয় পেলাম তারচেয়েও বেশী ভয় পেলাম প্রাণহীনভাবে আরও কয়েকটি বছর এখানেই থেকে ভাবলেশহীন ভাবে পরে থাকাকে।তখন,আনন্দ উচ্ছ্বাসে পরিপুর্ণ বুয়েট লাইফ আমাকে হাতছানী দিয়ে ডাকল।(আমার ভাই , আর আমার মায়ের ভাই এরা বুয়েটিয়ান ছিল।আর তাদের জীবনযাপন প্রক্রিয়া আমার বিশাল আগ্রহের বস্তু ছিল।সেখান থেকেই বুয়েট সম্পর্কে ধারণা পাই) । কোমর বেধে পড়তে লেগে গেলাম। হোস্টেলজীবনের কষ্ট , অত্যধিক মেধাবীদের মধ্যে একাকীত্ব, হতাশা সব কিছু সহ্য করে বুয়েটের স্বপ্ন দেখতেই থাকলাম। স্বপ্ন সত্যি হয়। আমারটাও হলো।
আরো বিশাল স্বপ্ন আর আশা নিয়ে বুয়েট লাইফের যাত্রা শুরু করলাম। পড়াশোনা থাকবে জানতাম, পড়াশোনার চাপ থাকবে এটাও জানতাম। সবজায়গায়ই থাকবে তাই এটা মেনেই নিয়েছিলাম। তবে ধারণা ছিল , বুয়েট হবে ভিন্ন। বাংলাদেশের সব মেধাবীরা যেখানে পড়াশোনা করবে সেখানে নিশ্চই পড়াশোনার পদ্ধতি হবে উন্নত। অনেক কঠিন কঠিন পড়াও এখানে নির্মল আনন্দ দেবে আমাকে। জোর করে আর পড়তে হবে না। আমি ইতরামী করব আর পড়ব । মহাসুখে জীবন কাটাবো।
কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম পড়াশোনা পড়াশোনাই। একে আনন্দময় করার কোনো জাদু বুয়েট জানেনা।বুয়েট আমাকে সল্প জ্ঞান দিয়ে, আমার কাছ থেকে পাহাড়সম জ্ঞান আশা করে। আর আমি প্রতিবার তাকে হতাশ করি,সেইসাথে নিজেও হতাশ হই। তবে, এখানে যারা পড়তে আসে তারা সত্যিকার অর্থেই মেধাবী। তাদের তুলনায় আমার সাথে করাও চলেনা। সেই ভাবনা আমার হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।মনে মনে আমি আমার আশা, হতাশা নিয়ে সপ্নের বুয়েটকে অজস্র চিঠি লিখতে থাকি। কখোনো পোস্ট করা হয়না শুধু।তবে আমার অবস্থা খুব বেশীদিন গোপন থাকলনা । প্রতিনিয়ত আমার নাম বোর্ডের/মার্কশিটের সবচেয়ে নিচে আসতে লাগল।আমি,মনের চিঠিকে সুইসাইড লেটারে রুপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তবে জয় লোবোর(ত্রি ইডিয়টসের) মত ঝুলে যাওয়ারও সাহস হলোনা। কারণ ঝুলে গেলাম তো হেরে গেলাম। খেলা শেষ। আমার ইতরামী করার উৎসাহতো অবশিষ্ট রইলোই না, বরং কিভাবে ইতরামী করতে হয় ভুলেই গেলাম।এখন হঠাৎ, মনে হলে আফসোস হয়। ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় স্কুলের সেই দিনগুলিতে । তবে এই ইচ্ছাটা হয়তো অপূর্ণই রয়ে যাবে......।