বিপ্লবী বিনোদ বিহারী (শতবর্ষী এক তরুণের গল্প)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বয়সের সেঞ্চুরি পার করে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আজ ১০১ বছরে পদার্পণ করলেন। বর্ণাঢ্য ও গৌরবময় জীবনের অধিকারী এই বিপ্লবী এখনও একজন করিৎকর্মা পুরুষ। জীবনের একেকটি অতীত অধ্যায় বেশ প্রাঞ্জল ও বলিষ্ঠভাবে ধরা দেয় তার স্মৃতিতে। এখনো নিজেকে ভাবেন শতবর্ষী তরুণ। তার কথায় এবং চলনে-বলনেও তা পরিষ্কার লক্ষণীয়। প্রতিটি মুহূর্ত কাটে কর্মমুখরতায়। প্রতিনিয়ত ভাবেন দেশের জন্য। এ দেশকে নিয়ে বিনোদ বিহারী চৌধুরী অনেক স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন এদেশের তরুণ সমাজকে নিয়ে। তিনি সভা-সমাবেশে প্রায়ই বলেন- 'তরুণরাই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখাবে। অপার সম্ভাবনার এদেশ থেকে দূর করবে সব জীর্ণ ও কূপমণ্ডূকতা।'
বিনোদ বিহারীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। পিতা কামিনী কুমার চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। মা বামা চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি দেশমাতৃকাকে ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তরে যোগ দেন। ২৯ বছর বয়সে তিনি পুলিশ অস্ত্রাগার দখল ও জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে রায় বাহাদুর বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএ, ১৯৩৬ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন। ১৯৩৯ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ ও বিএল পাস করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত হুলিয়া মাথায় নিয়ে অজ্ঞাতবাসে কাটান। পরবর্র্তী পাঁচ বছর দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পসহ চট্টগ্রাম, কলকাতা ও বহরমপুর জেলে কাটাতে হয়। এরপর গৃহবন্দী ছিলেন এক বছর। ১৯৩৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটির সহ-সম্পাদক পদে আসীন হন। পরের বছর বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস নির্বাহী কমিটির সদস্য হন তিনি। ১৯৪১ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর হিজলি, ঢাকা, চট্টগ্রাম জেল এবং খোকশা বন্দীশিবিরে বন্দী জীবন কাটান। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত দ্বিখণ্ডিত হলেও তিনি প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস নির্বাচনে কংগ্রেস দলীয় প্রার্র্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫৮ সালে কংগ্রেস নেতা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে পৃথক নির্বাচনের বিপরীতে যুক্ত নির্বাচনের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন। পেশাগত জীবনে তিনি ১৯৩৯-৪০ সালে জাতীয় দৈনিকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪০ সালে তিনি চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৭-৫৪ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার পরিচালিত আইন রিটি বোর্ডের চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৫ সালে 'মাস্টারদা সূর্যসেন', ১৯৯৭ সালে 'দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন' বিষয়ক বক্তৃতা তার উল্লেখযোগ্য স্মারক বক্তৃতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় সংহতি পরিষদ, চট্টগ্রাম পরিষদ, ঢাকার দৈনিক ভোরের কাগজ ও দৈনিক জনকণ্ঠ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদ ও শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী পরিষদসহ স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান করেছে। ১৯৯০ সালে তার জীবনীভিত্তিক সাক্ষাৎকার প্রচার করে ব্রিটিশ ব্রট কাস্টিং করপোরেশন বিবিসি। ইতোমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে ভূষিত করেছে স্বাধীনতা পুরস্কারে। গত বছর তার শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে স্মারক গ্রন্থ 'আমাদের সন্তু'।
ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম।
সুত্র: http://digitalvillagebd.blogspot.com
মুলসুত্র: Click This Link
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন