ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা-
আব্দুল ওহাবের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনার সময় একদিন আমি রোজা প্রসংগ শুরু করলাম। আমি বল্লাম আল্লাহতায়াল তো বলেন নি রোজা রাখা জরুরী।৫
{সুরা বাকারার ১৮৫ আয়াত দ্বারা রমজানের রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে}
কাজেই ইসলামে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এ সময় আব্দুল ওহাব খুব রেগে গিয়ে বললেন তুমি কি আমাকে ধর্মচ্যুত করতে চাও? আমি বললাম হে আব্দুল ওহাব দ্বীন বলতে অন্তরের পবিত্রতা জীবনের নিরাপত্তা ও মধ্যম পন্থাকে বুঝায়। এ সমস্ত অবস্থা মানুষকে অন্যর উপর জুলুম ও অত্যাচার থেকে বিরত রাখে। হযরত ঈসা কি বলেন নি ধর্ম প্রেম ও ভালোবাসাকে বুঝায়? কোরানে আছে-এবং নিজ রবের ইবাদত করতে থাকুন যে পর্যন্ত না ইয়াকীন এসে উপস্থিত হয় ( আল হিজর-১৯)
মানুষ যদি কামেল বিশ্বাসের মনজিলে পৌছে যায় তখন আল্লাহর নেয়ামত তার ভেতর দৃড় হয়ে যায় আর সে যদি সদাচারী হয় তাহলে রোজার আর কি প্রয়োজন থাকে? ইবনে ওহাব এবার আমার উপর ভিষন রাগ করলেন ও নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। আরেকদিন সুযোগমত আমি বললাম নামাজ জরূরী নয় তিনি বললেন কেন? আমি বললাম আল্লাহতায়ালা কোরানে বলেছেন " এবং আমাকে স্মরন করার জন্য নামাজ পড়" ( তাহা-১৪) সুতরাং নামাজের উদ্দেশ্য হলো জ্বিকরে ইলাহী, আর আপনার উচিত তার নাম নিজমুখে জারী রাখা। ইবনে আব্দুল ওহাব বললেন হ্যা আমি শুনেছি কোন কোন ধর্মীয় আলেম নামাজের সময় আল্লাহ নাম বার বার উচ্চারন করতে থাকেন আর তারা নামাজ পড়েন না ( এটা তার শোনা কথা, এর কোন ভি্ত্তি নেই)
আব্দুল ওহাবের স্বীকৃতিতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হলাম। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করে কিছুক্ষন পর্যন্ত আমি তাকে নামাজ পড়তে উৎসাহ দিলাম। এর পরিণাম হলো নামাজের পাবন্দী তার থেকে ছুটে গেলো। এখন তিনি কখনো নামাজ পড়েন কখনো পড়েন না। বিশেষ করে সকালের নামাজ তিনি প্রায়ই তরক করতে লাগলেন। আমরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। এ কারনে ভোরে উঠে ওজু করার সাহস তার হতোনা।
প্রকৃতপক্ষে আমি ইবনে আব্দুল ওহাবের শরীর থেকে ঈমানী পোশাক ছাড়াতে কামিয়াব হলাম। পরিশেষে আমি একদিন আলোচনার পরিধি
রাসূল (স) এর পবিত্র 'শান' পর্যন্ত নিয়ে গেলাম।তিনি আমাকে বললেন রাসূল (স) এর শানে তুমি যদি কিছু বলো তাহলে তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক থাকবেনা। আমি পরিশ্রমের ফসল ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে হঠাৎ আমার আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিলাম এরপর তার সাথে এ ব্যপারে কোন আলোচনা হয়নি।
এর পর থেকেই আব্দুল ওহাবকে নেতৃত্ব প্রদানের ব্যপারে চিন্তিত হলাম। তার দিল ও রুহে প্রবেশ করে শিয়া সুন্নী ফেরকার বাইরে ইসলামের তৃতীয় ফেরকার নেতৃত্বের জন্য তাকে আগে বাড়াবার জন্য আমলের যোগ্য করে তোলার প্রয়োজন দেখা দিল। এ কাজে সুফিয়াও আমার সহযোগী ছিল, কেননা আব্দুল ওহাব তাকে অত্যন্ত ভালোবাসত আর সপ্তাহ সপ্তাহ মুদ্দত বাড়াত। মূলত সুফিয়া ইবনে আব্দউল ওহাবের সবর,স্থিতি এমনকি তার সমস্ত ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল।
আমি একদিন আব্দুল ওহাবকে বললাম- এটা কি ঠিক নয় যে রাসূল (স) এর সাথে সমস্ত সাহাবীর বন্দ্ধুত্ব ছিল, তিনি বললেন হ্যা, আমি বললাম ইসলামের কানুন কি স্থায়ী না অস্থায়ী তিনি বললেন অবশ্যই স্থায়ী, কেননা রাসূল (স) বলেছেন মোহাম্মদ (স) এর হালালকৃত কিয়ামত পর্যন্ত হালাল থাকবে, আর মোহাম্মদ (স) এর হারামকৃত কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে। আমি সাথে সাথে বললাম তবে আমদের ও তার সুন্নতের উপর আমল করে একে অপরের বন্ধু ও ভাই হওয়া উচিৎ। এরপর থেকে আমরা উভয়ের প্রবাসে ও নিবাসে একে অপরের সাথে থাকতে লাগলাম।
হামফ্রের মিথ্যা স্বপ্নের বর্ননা-
একদিন আমি তাকে একটি মিথ্যা স্বপ্নের কথা বললাম " রাত্রে রাসূল (স) কে আমি কুরসীর উপর বসা অবস্থায় দেখলাম, ঠিক জ্বিকরকারী ও ওয়াজকারী যেরকমভাবে মিম্বরের উপরে বসে বয়ান করে। বড় বড় আলেম ও বুযুর্গানে দ্বীন যাদের আমি চিনিনা তার চারদিকে থেকে তারা তাকে (স) ঘিরে রেখেছে। তখন আমি দেখলাম আপনি সে মজলিশে প্রবেশ করেছেন এবং আপনার চেহরা থেকে আলো বের হচ্ছিল। যখন আপনি রাসূল (স) এর সামনে দাড়ালেন তখন তিনি দাড়িয়ে আপনাকে সম্মান প্রদর্শন করে আপনার কপালে চুমা খেয়ে বললেন " হে আমার একই নামের অধিকারী মোহাম্মদ তুমি আমার ইসলামের ওয়ারিশ, মুসলমানদের দ্বীন দুনিয়াকে সামলে নেবার জন্য আমার যথার্থ খলিফা, এ কথা শুনে আপনি বললেন ইয়া রাসূল (স) লোকজনের সামনে ইলম জাহির করতে আমার ভয় হয়। হুজুর (স) বললেন তুমি মনে ভয়কে স্থান দিওনা। তুমি যা কিছু নিজের ব্যপারে চিন্তা করছ তুমি তার চাইতে অনেক বেশী মর্যাদাশীল।
আব্দুল ওহাব আমার মনগড়া স্বপ্নের কথা শুনে আনন্দে আটখানা। তিনি বারবারই আমাকে জিজ্ঞাস করছিলেন তোমার স্বপ্ন কি সত্যি হয়? আমি তাকে এ ব্যপারে সান্তনা দিতে থাকি। আমি লক্ষ্য করলাম স্বপ্নের আলোচনার দিন থেকে তার মনোভাব এক নতুন মাজহাব সৃষ্টির দৃড় ইচ্ছা নিয়ে কাজ শুরু করে দিল।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১১ সকাল ৮:২৯