somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রচলিত তাবলীগ প্রথার উদ্ভব ও ধর্ম প্রচারে উহার মূল্যায়ন-শেষ পর্ব

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহির জনৈক শিষ্য 'তাজকিরাতুল রশিদ' নামক গ্রন্থের ২য় খন্ড ২৮১ পৃষ্ঠায় গাংগুহি সাহাবের একটি স্বপ্নের কথা বর্ননা করেছেন।

"গাংগুহি সাহেব একদা স্বপ্নের বর্ননা দিতে গিয়ে বললেন-আমি মাওলানা কাসেম নানুতুবিকে ( দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা) স্বপ্নে দেখেছি যে, তিনি বধুর বেশ ভুষা ধারন করেছেন এবং আমি তাকে বিয়ে করি।স্বামী-স্ত্রী একে অপরের থেকে যেভাবে লাভবান হয়, আমি তার নিকট হতে এবং তিনি আমার নিকট হতে সেরূপ লাভবান হয়েছেন"

তবলীগ দর্পন গ্রন্থের ৪৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে "কেহ কেহ হয়ত বলতে পারেন যে ইহা স্বপ্ন।স্বপ্নের উপর মানুষের কোন ক্ষমতা নাই। শয়তান যে কোন আকৃতি ধারন করিয়াই এ ধরণের স্বপ্ন দেখাইতে পারে। এমাতবস্থায় আমি গাংগুহি সাহেবের ভক্তকে জিজ্ঞাস করিতে চাই যে এই স্বপ্ণ কি শয়তানী স্বপ্ন? শয়তান কাসেম নানুতুবীর আকৃতি ধারন করিয়া গাংগুহি সাহেবের সোহবত লাভ করিয়াছে, গাংগুহি সাহেবের কোন ভক্তই স্বীকার করিবেনা।"

প্রকৃতপক্ষে সত্য এইযে প্রচলিত তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাকারী মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহির ভক্ত ছিলেন। তিনি যেহেতু আব্দুল ওহাব নাজদীর একনিষ্ঠ সমর্থক সেহেতু মাওলানা ইলিয়াসকেও ওহাবী বলা যায় নিসন্দেহে। তাছাড়া মাওলানা ইলিয়াস দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। এই মাদ্রাসার অন্যতম ভক্ত মাওলানা ইসমাইল দেহলভী, আব্দুল ওহাব নাজদীর লিখিত কিতাব 'কিতাবূত তাওহীদ' স্বরণে 'তাকভিয়াতূল ঈমান' রচনা করেছেন যা ওহাবী আকিদায় পরিপুর্ন। তার পুস্তকের গুনকির্তন করেছেন মাওলানা গাংগুহি সাহেব 'ফতোয়ায়ে রশিদিয়া' কিতাবে। অপরদিকে দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতুবিও রশীদ আহমদের একান্ত বন্ধু ছিলেন। সুতরাং উপমহাদেশে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মূলে ওহাবী মতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্য নিহিত ছিল। আর যেহেতু এই দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগন এই মতবাদ প্রচারে তৎপর হয়েছিলেন এবং তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস তাদেরই একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন,সেহেতু বলা যায় প্রচলিত তাবলীগ ওহাবী মতবাদেরই ফসল।

এখন প্রশ্ন হলো যাদের আকিদা বা বিশ্বাসের মধ্য যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে তারা কি করে মানুষকে কালেমার দাওয়াত দিবেন?

মহান আল্লাহ যে সকল মহামানবকে মানুষদের হেদায়েতের জন্য জগতে পাঠিয়ে থাকেন, তাদেরকে এই দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি যদি হাজারো দ্বীনের তাবলীগ করে তাতে কোন ফল হবেনা এমনকি একটি মানুষকেও ঈমানদার বানানো সম্ভব নয়। কেননা যে নিজে ঈমানদার নয় সে কিভাবে অন্যকে ঈমানদার বানাবে?
ঈমানদার হতে হলে ঈমানের বীজের প্রয়োজন হয় যা মহামানবগন তাওয়াজ্জোহ দ্বারা মানুষের ক্বালবে ঈমানের (নূর) বীজ বপন করে থাকেন।
যে স্থানে ঈমানের বীজ বপনকারী মহামানব (অলিআল্লাহ) একজনও নেই সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ মন গড়া মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহ আল্লাহ জপতে থাকলে কি লাভ হবে?

এ প্রসংগে একজন বিখ্যাত আউলিয়া বলেন' কোথাও যদি কয়েক হাজার কুমারী মেয়ে একত্রিত হয়ে মা হওয়ার জন্য দোয়া করতে থাকে, তাতে তারা মা হতে পারবেনা।যতক্ষন পর্যন্ত তাদের ডিম্মকোষের মধ্য পূরুষের শুক্রকীট প্রবিষ্ট করা না হবে"

ঈমানদার হতে হলে ঈমানদার লোকের সোহবতে গমন করা একান্ত প্রয়োজন। মুখে মুখে ঈমানদার আমীর ,মুরব্বী,পন্ডিত ও আলেম দাবী করলে দুনিয়ায়ই শুধু করা যাবে কিন্তু আল্লাহর কাছে তার কোন মূল্যই হবেনা
" মানুষ কি মনে করে যে তারা যদি মুখে মুখে বলে যে, আমরা ঈমান এনেছি, তাহলে কি তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় খাটি প্রেমিক বলে ছেড়ে দিব'
( সূরা আনকাবূত-আয়াত ২)

আল্লাহর এ ঘোষনা থকে বুঝা যায় মুখে মুখে ঈমানদার দাবী করলে ঈমানদার হওয়া যায়না বরং কোন ঈমানদার ব্যক্তির সোহবতে গিয়ে তার নির্দেশ মত সাধনা করে ঈমাদার হতে হয়।

প্রচলিত তাবলীগ পন্থীরা মনে করে থাকেনযে, তাদের আমীর বা মুরুব্বিগনই সবচেয়ে বড় অলিয়ে কামেল। কিন্তু যারা নিজেরাই ঈমানদার হতে পারেনি তারা ঈমানের দাওয়াত দইলে তাতে কি লাভ হবে? এটা যেন মূর্খের মাস্টার সেজে স্কুল খুলে ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞাপন দেয়ার মত হাস্যকর ব্যপার। ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ মুর্খ লোকদের ধর্মের লেবাস পড়িয়ে চিল্লায় ঘুরিয়ে হেদায়েতের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে বেশি বেশি সওয়াবের লোভ দেখানো মূলত ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ারই ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি ব্যতীত আমরা যত বড় জ্ঞানী হইনা কেন-ইসলাম প্রচারের কাজ করা আমাদের জন্য বৈধ হবেনা। যেমনিভাবে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেও কেউ সরকারের মনোনয়ন ব্যতীত কোন আসামীকে শাস্তি দিতে পারেনা। এজন্য অবশ্যই সরকারের মনোনীত হতে হয়. অনুরূপভাবে খোদায়ী প্রশাসনের মনোনয়ন ব্যতীত কারো পক্ষে হেদায়েতের কাজ করা সম্ভব নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৬:২২
২০টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×