somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যবিত্তের পরিচয়চিহ্ন ০২

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[গতকাল লেখাটির প্রথম পর্ব Click This Link প্রকাশিত হয়েছে। আজ দ্বিতীয় পর্ব। আগের পর্বে সাড়া দেয়ার জন্য ধন্যবাদ, প্রিয় সহযাত্রীগণ।]

যেসব লেখায় মধ্যবিত্তদের গালাগালি করা হয় - তার পাঠকরা মধ্যবিত্ত, যেসব সভায় তাদেরকে বকাবাজি করা হয় তার শ্রোতারাও মধ্যবিত্তই। অথচ এই পাঠক ও শ্রোতৃকূল ভাবেন বকাবাজিটা তাকে নয়, অন্য কাউকে করা হচ্ছে। এর কারণ কি? কারণ হলো - যে সমালোচনাটা করা হচ্ছে, ওই পাঠক বা শ্রোতা নিজেকে সেটার উপযুক্ত বলে ভাবছে না। আরেকটি কারণও আছে - যিনি সমালোচনাটা করছেন পাঠক-শ্রোতা তাকে আবিষ্কার করেন নিজেরই লোক বলে। অর্থাৎ ওই লোকটিও মধ্যবিত্ত। যতই সমালোচনা করুন - ওই লেখক বা বক্তাও যে মধ্যবিত্তের বৃত্ত ভেঙে, মধ্যবিত্তের নিরাপদ সীমানা ডিঙ্গিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি - পাঠক-শ্রোতার তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ফলে একজন মধ্যবিত্ত যে তার নিজের শ্রেণীভূক্ত কাউকে এই ভাষায় গালাগালি, বকাবাজি বা সমালোচনা করতে পারেন এটা তাদের বিশ্বাস হয় না।

কিন্তু এইসব সমালোচনায় 'মধ্যবিত্ত' শব্দটি বেশ ব্যাপকভাবে ও প্রবলভাবে থাকা সত্ত্বেও মধ্যবিত্তরা সেটা নিজের গায়ে নেয় না কেন? কেন ভাবে যে, এই বকাবাজি অন্য কাউকে করা হচ্ছে? তাহলে কি সে তার নিজের শ্রেণীগত অবস্থান সম্বন্ধে সচেতন নয়? হ্যাঁ, সমস্যটা সেখানেই। নিজের শ্রেণীগত এবং সামাজিক অবস্থান সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা না থাকার জন্যই মধ্যবিত্তরা বুঝতে পারে না - গালাগালিটা তাদেরকেই করা হচ্ছে! আর পরিষ্কার ধারণা থাকবেই-বা কীভাবে? এই শ্রেণীটি যে সমরূপ নয়! এই শ্রেণীর মধ্যেই আছে আরো অনেক শ্রেণীবিভাগ বা উপশ্রেণী। যেমন : উচ্চ-মধ্যবিত্ত, মধ্য-মধ্যবিত্ত (বা শুধুই মধ্যবিত্ত) এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত। আর ওই উপবিভাগ বা উপশ্রেণীগুলোই সমস্যা তৈরি করেছে। এরকম উপশ্রেণী কিন্তু উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের বেলায় দেখা যায় না। উচ্চ-উচ্চবিত্ত বলে কোনো শ্রেণী নেই, যেমন নেই নিম্ন-নিম্নবিত্তও। এই বিভাজন একান্তভাবেই মধ্যবিত্তের বৈশিষ্ট্য।

এইসব উপশ্রেণীর মূল্যবোধ-সংস্কার-বিশ্বাস-আচার-ব্যবহারে অনেকখানি সাদৃশ্য থাকলেও জীবনযাপনে তারা বেশ খানিকটা আলাদা। নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনযাপনের মধ্যে যেমন হা-হুতাশ, হতাশা, এবং নিম্নবিত্তের কাতারে চলে যাবার আতংক কাজ করে - উচ্চমধ্যবিত্তের মধ্যে তা করে না। তাদের নিম্নবিত্তে পরিণত হবার আতংক নেই, আছে উচ্চবিত্ত শ্রেণীতে আরোহন করার স্বপ্ন-প্রত্যাশা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় কূটকৌশল ও কর্মকাণ্ড। সবচেয়ে বিপদে থাকে মধ্য-মধ্যবিত্তরা (প্রকৃতপক্ষে এরাই মধ্যবিত্ত সমাজের পরিচয়চিহ্ন ধারণ করে থাকে)। তাদেরও স্বপ্ন-প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা উচ্চবিত্ত হবার, নিদেনপক্ষে উচ্চমধ্যবিত্তের মর্যাদা ভোগ করার, কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি তাকে ক্রমাগত নিম্নমধ্যবিত্তের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। এর ফলে তারা থাকে এক ভয়ংকর দোদুল্যমান অবস্থায়। শুধু তাই নয়, নিম্নমধ্যবিত্তরা জীবনের প্রয়োজনেই কখনো কখনো মধ্যবিত্ত সমাজের অনড়-অচল মূল্যবোধ ও সংস্কারের বেড়াজাল পেরিয়ে ঢুকে পড়ে নিম্নবিত্তের মূল্যবোধের এলাকায়; আবার উচ্চমধ্যবিত্তরা উচ্চবিত্ত হবার আকাঙ্ক্ষায় কখনো কখনো উচ্চবিত্তের মূল্যবোধ ও জীবনযাপন-পদ্ধতি ধারণ করতে চায়, নিদেনপক্ষে অনুকরণ করতে চায়;- মধ্য-মধ্যবিত্তরা এর কোনোটাই পারে না। উচ্চ- ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মধ্যে বিপরীত অর্থে নিজ শ্রেণীর সীমানা ডিঙ্গিয়ে যাবার প্রবণতা থাকলেও মধ্য-মধ্যবিত্তকে বাধ্য হয়েই পড়ে থাকতে হয় নিজের শ্রেণীর যাবতীয় ইতি- ও নেতিবাচকতা নিয়ে।

জীবনযাপন ও জীবনধারণ পদ্ধতি, সুযোগ ও সুবিধা - এসবকিছুতে ব্যাপক পার্থক্য থাকার ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীভূক্ত এই উপশ্রেণীগুলো পরস্পরকে অপছন্দ করে - একরকম ঘৃণাই করে বলা যায় (অন্য কোনো শ্রেণী নিজের শ্রেণীর লোকজন সম্বন্ধে এতটা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে না)। ফলে কোনো বুদ্ধিজীবী কতৃক কোনো বকাবাজি যখন এদের ওপর বর্ষিত হয় তখন এই শ্রেণীভূক্ত একটি উপশ্রেণী ভাবে - বকাবাজিটা তাকে নয়, অন্য কাউকে - অর্থাৎ অন্য দুই উপশ্রেণীর যে কোনো একজনকে করা হচ্ছে। এরকম ভাবনায় তার সুবিধা হয়, সে নিরাপদে থাকতে পারে, স্বস্তি ও শান্তিতে থাকতে পারে - সমালোচনাগুলো নিজের কাঁধে নিয়ে তাকে খামোখা পীড়িত হতে হয় না।

অবশ্য মধ্যবিত্তরা যে এত সুস্পষ্টভাবে নিজেদের উপশ্রেণীগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে তা নয়, বরং কোন উপশ্রেণীতে তারা বাস করে সেটা নির্ধারণ করা তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারই বটে। সমস্যাটা শুধু তাদেরই নয়, যারা মধ্যবিত্তদের নিয়ে কথা বলেন, এইসব উপশ্রেণীগুলোকে কোনো না কোনোভাবে চিহ্নিত করতে চান - সমস্যা তাদেরও। কী কী শর্ত পূরণ করলে একজন লোককে মধ্যবিত্ত বলা যাবে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বলাটা বেশ দুরূহ। তবু তাদেরকে কোনোভাবে কোনো একটি সংজ্ঞায় বাঁধা যায় কী না, পরের পর্বে আমরা সেই চেষ্টাটি করে দেখতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৪৯
৩৭৫ বার পঠিত
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×